বগুড়ায় গৃহবধূদের হিল্লে বিয়েতে বাধ্য করছে গ্রাম মাতব্বরেরা
চপল সাহা,বগুড়া থেকে,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চকজোড়া গ্রামে স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাতব্বরেরা গৃহবধূদের হিল্লে বিয়েতে বাধ্য করছে। কয়েক যুগ আগের এই প্রথা চালু রয়েছে গ্রামটিতে। হিল্লে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় অনেককে গ্রাম ছাড়াতে হয়েছে। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ গ্রাম মাতব্বরদের মোটা অংকের চাঁদা দিলে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। ওই গ্রামের পাশ্ববর্তী বেতগাড়ী, চকপাড়া গ্রামে এ পর্যন্ত আন্তত ৫০টি হিল্লে বিয়ের ঘটনা ঘটেছে।
আনুসন্ধানে জানা গেছে, গত প্রায় ৩ মাস আগে উপজেলার চকজোড়া গ্রামের দিনমজুর আখতার হোসেন তার স্ত্রী ঝড়না বেগমের সাথে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে রাগ করে মৌখিক ভাবে তালাক দেয়। মহূর্তের মধ্যে এ কথাটি চলে যায় স্থানীয় মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলামের কানে। ইমাম শহিদুল জানিয়ে দেয় হিল্লে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত সমাজচ্যুত থাকতে হবে আখতার হোসেনের পরিবারকে। এরপর থেকে এক ঘরে করে রাখে আখতার হোসের দম্পত্তিকে। বিষয়টি মানবাধিকার এবং মিডিয়াকর্মীদের হস্তক্ষেপে হিল্লে বিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে আখতার হোসেনের পরিবার। থানা পুলিশ অভিযুক্ত ফতোয়াবাজ স্থানীয় মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলাম এবং মাতব্বরদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
ভূক্তভোগী আখতার হোসেন বলেন, আমি রাগের মাথায় বউকে তালাক বলায় ৩ মাস যাবত মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলামসহ মাতব্বরেরা এ ঘরে করে রাখে। আমি আমার প্রতিবেশীর সাথে পর্যন্ত কথা বলতে পরিনি। ব্র্যাকের আইনসহায়তা কর্মী লিপি আক্তার বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে ইমাম শহিদুল সহ গ্রাম মাতব্বরদের সাথে কথা বলে ফল পাইনি। পরে মিডিয়া কর্মীদের সহায়তায় পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষপে আবশেষে ফতোয়াকারি ইমাম আর মাতব্বরেরা থানায় মূচলেকা দেয়। আর মুফতি ছাড়া কেহ ফতোয়া দিতে পারেনা বলে জানান আইনসহায়তাকারি এই কর্মী। বিষয়টি সুরাহ করতে এগিয়ে আসে বে-সরকারি এনজিও ব্র্যাকের আইন সহায়তা কেন্দ্রের কর্মী লিপি আক্তার। তিনি জানান, ফতোয়াদান কারি স্থানীয় মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলামকে অনেক বুঝিয়েছি, রাগ করে তালাক দেয়া যায়না। আর মুফতি ছাড়াতো কেহ ফতোয়া দিতে পারেন না। আপনি কি করে ফতোয়া দেন। স্বমী-স্ত্রী’র মনমালিন্য সমাধান হয়েছে।
ওই গ্রামের আরেক দিনমজুর আব্দুল মান্নান জানান, জানান, রাগের মাথায় স্ত্রী’কে মৌখিক তালাক দেয়ায় স্ত্রী বেলী বেগমকে হিল্লে বিয়ে দেয় গ্রাম মাতববরেরা। পরে আবার আমার সাথে বিয়ে দেয়। শফিকুল ড্রাইভার নামের এক ব্যক্তি জানান, স্ত্রীকে রাগ করে তালক দেয়ায় হিল্লে বিয়ের জন্য চাপ দেয় মাতব্বরেরা। পরে গ্রাম ছাড়তে হয় আমাকে। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী সাজাপুর গ্রামে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি। আব্দুস সামাদ নামের এক ব্যক্তি জানায়, আমাদের পরিবারের কলহের জের ধরে গ্রাম ছাড়া করে মাতব্বরেরা। বর্তমানে শাজাহানপুর থানার সামনে জমি কিনে ঘরবাড়ি করে বসবাস করছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাতব্বর হামিদ, ইমাম শহিদুলকে আমার মেয়ের বিয়েতে উৎকোচ না দেয়ায় এখনও একঘরে রেখেছে। অভিযুক্ত ইমাম শহিদুল ইসলামের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মূখ দিয়ে স্ত্রীকে তালাক উচ্চারণ করা মানেই তার স্ত্রী তালাক হয়ে গেছে। মুফতি ছাড়া কি আপনি এমন ফতোয়া দিতে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান এবং বলেন, এই গ্রামে এ প্রথা যুগযুগ ধরে চলে আসছে। আর যারা মানে তারা গ্রামে থাকতে পারবে। থানায় মুচলেকা দিয়েছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি চুপ করে থাকেন। অভিযুক্ত আব্দুল হামিদ, সামদ সহ অন্যান্য মতব্বরেরা কথা বলতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় আশেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সাখিদার বলেন, অনেক আগে থেকে এ গ্রামে এসব ঘটছে। এ পর্যন্ত ৫০টির বেশী ঘটনা ঘটেছে। আর যারা হিল্লে বিয়েতে রাজি না হয় তাদের জন্য চরমদূর্ভোগ। তবে গত কয়েকদিন আগে এমন আরেক ঘটনা ঘটতে চলছিল পরে তা সমাধান হয়েছে। এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল আলম বলেন, চক জোড়াগ্রামে জনসচেতনতা বাড়াতে আলেম-মুফতিদের উদ্যোগ নিতে হবে।