আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবেঃ মির্জা ফখরুল
রূপম হালদার,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,“সরকার যতক্ষণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে না নেবে ততদিন আন্দোলন চলবে। সামনের দিনে আন্দোলন তীব্র থেকে আরো তীব্রতর হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।” ৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার) বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। দ্বিতীয় দফা ৬০ ঘণ্টার হরতালে ১ জন দলীয় কর্মী নিহত এবং ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন,“হরতাল চলাকালীন সরকারের আজ্ঞাবহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্তৃক আগের মতোই ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের হত্যা, জখম ও গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে।” ফখরুল জানান, গতকাল সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকামহানগরীসহ সারাদেশে নিহত হয়েছেন একজন, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ শতাধিক, আহত ২১০০ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মামলায় আসামি করা হয়েছে ৯ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে।” বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে সরকার চক্রান্তের মাধ্যমে বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় শাস্তি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন,“বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় চক্রান্তের মাধ্যমে সরকার মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে বিএনপি নেতা পিন্টুকে শাস্তি প্রদান করেছে। তিনি রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। সম্পূর্ণ অসত্য ও বানোয়াট অভিযোগে সাড়ে চার বছর ধরে তাকে জেলে রাখা হয়েছে।” বিএনপি নেতা পিন্টুর মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন,“রাজনৈতিক উদ্দেশে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আমরা এমন প্রহসনের বিচারের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তি দাবি করেছি। সরকার বিডিআর বিদ্রোহের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর জন্য পিন্টুকে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির অংশ হিসেবে এ শাস্তি দিয়েছে।” এ ঘটনার সাথে আ.লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন,“এই ঘটনার পর সংবাদ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় অনেকের নাম আসার পরেও তাদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পিন্টুকে গ্রেপ্তার করে সাজা দেয়া হয়েছে।” তিনি বলেন,”আমাদের লক্ষ্য একটাই নিরপেক্ষ নির্দীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। সরকারকে এমন দাবি মানতে আমরা আন্দোলনে আছি। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন র্তীব্র থেকে আরো র্তীব্র হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।” ফখরুল বলেন,“আমাদের স্পষ্ট কথা তথাকথিত সর্বদলীয় সরকারের আমরা অংশ নিবো না। তাদের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবো না। বিশিষ্টজনদের কথা উপেক্ষা করে তথাকথিত সর্বদলীয় সরকারের কথা বলে, সরকার আসলে একদলীয় নির্বাচনের কথা বলছে।
সরকারের প্রস্তাবিত সর্বদলীয় সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“সবার আগে জানতে হবে সবর্দলীয় সরকারে কারা আছে ১৪ দল। এরে বাইরে একমাত্র আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দল রয়েছে বলে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যদিও ওই দলটির কোন প্রতিনিধি সংসদে নেই। ১৪ দল ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব সব দলেই নিদর্লীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।” মির্জা ফখরুল বলেন,“আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি ক্ষমতাসীনদলের লোকদের বৈধ ও অবৈধভাবে আধুনিক অস্ত্র সরবারহ করা হয়েছে। হরতাল চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আধুনিক অস্ত্র নিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালাচ্ছে আপনারা দেখেছেন।”
‘হরতাল প্রত্যাহার করুন, আলোচনার পথ খোলা আছে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রস্তাবের জবাবে বিএনপি মুখপাত্র বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হরতাল প্রত্যাহার করুন, আলোচনার পথ খোলা আছে। তবে তার আগে বিরোধীদলকে ওয়াদা করতে হবে তারা জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে না। প্রধানমন্ত্রীর এমন কথায় উত্তরে শুধু বলতে চাই, কারা ১৭৩ হরতাল করে কারা জ্বালাও-পোড়াও করেছিলো? তাহলে আমরা মেনে নেব কেন।” ফখরুল বলেন,”কারা নির্বাচনের আগে ১০ টাকা কেজি চাউল, বিনামূল্যে সার ও ঘরে ঘরে চাকুরি দেওয়ার কথা বলেছে আপনারা জানেন। তারা এসব কথা রাখতে না পেরে জাতির সঙ্গে ওয়াদার বরখেলাপ করেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন, শামীমুর রহমান শামীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন জসিম, বেলায়েত হোসেন বেলালসহ আরো অনেকে।