মাদকের ভয়াবহতা রুখতে হবে
মূল প্রেক্ষাপটঃ নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা ও বেশি আলোচিত বিষয়। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার দেশজুড়ে। দেশের এমন কোনো উপজেলা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। দেশজুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র মাফিয়াদের সঙ্গে রয়েছে এদের শক্ত ও গভীর যোগাযোগ। গত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকজুড়ে ‘হেরোইন’ নামক মরণ নেশা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল। এ পদার্থটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করে অবধারিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এটি খুব দামি বলে পরবর্তী সময়ে এর স্থান দখল করে নেয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা। বর্তমান নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ দুটি নেশাদ্রব্য বেশি জনপ্রিয়। একে ঘিরে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক। ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীর সংখ্যা কত,তা আদৌ জানা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত এর আনুমানিক সংখ্যা ৫০ লাখের মতো।
মাদকের বিস্তারঃ মাদকের হাতছানি সারাদেশে। শুধু শহরেই নয়,গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা। তরুণ তাজা প্রাণের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়ছে সমাজ। বিভিন্নভাবে,বিভিন্ন পথে, মাদক ঢুকে পড়ছে আমাদের সমাজে। আর ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়,প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা,হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজের প্রতি। এই মরণ নেশার বিস্তারে সমাজে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে,তেমনিভাবে বিশৃঙ্খলতা তৈরি হচ্ছে। মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য, যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ যেমন জরুরি,তেমনিভাবে যারা মাদক সেবনে বিপর্যস্ত তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও জরুরি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং সরকারি উদ্যোগে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলো প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছে না; বরং সরকারি এই কেন্দ্রগুলোই এখন নানা রকম দুরবস্থায় পতিত।
রাজধানীতে মাদকের স্পটঃ দুর্ধর্ষ ১২০০ ফেরারি আসামি রাজধানীর পাঁচ শতাধিক মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে। পুলিশের খাতায় পলাতক এ ফেরারি আসামিরা ‘ফেন্সি ও মদের স্পট’ বানিয়ে প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনার আলাদা আলাদা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। মাদক বেচাকেনা,চোরাচালান এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১০-১২টি করে মামলা থাকলেও তারা মাদক বেচাকেনার আখড়া বসিয়ে প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে। মাদক সম্রাট দুর্ধর্ষ এ অস্ত্রবাজদের নাম ও আখড়াগুলোর তালিকা রয়েছে পুলিশ,গোয়েন্দা,মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে। বছর শেষে সে তালিকা পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও। মাঝে মাঝে লোকদেখানো অভিযান চলে প্রশাসনের,আটক করা হয় খদ্দের ও নিরপরাধ পথচারীদের। সোর্সদের মাধ্যমে পথচলা মানুষের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়েও গ্রেফতার-হয়রানির অসংখ্য নজির রয়েছে। তবে বরাবরই মাদকের মূল বেপারিরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে, বহাল তবিয়তে। এমনকি মাদক স্পটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গডফাদারদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা, খুনখারাবি,বন্দুকযুদ্ধ পর্যন্ত চলে। মূল ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার না হওয়ায় বার বার অভিযান চালিয়েও মাদকের দৌরাত্দ্য বন্ধ করা যায় না। রাজধানীতে মাদক ব্যবসা বন্ধে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর (ডিএমপি)। মাদক স্পটগুলো উচ্ছেদ ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে বিশেষ অভিযান চালাতেও বলা হয়েছে। কিন্তু ডিএমপির এই নির্দেশনার কার্যত প্রতিফলন ঘটেনি। রাজধানীর পাঁচ শতাধিক স্পটে আগের মতোই দিন-রাত সমানতালে চলছে মাদক ব্যবসা। মাদক স্পটগুলো থেকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা পাওয়ায় পুলিশ অভিযান চালাতে আগ্রহ দেখায় না বলে অভিযোগ আছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরের এক তালিকায় দেখা যায়,ডিএমপির বিভাগ অনুযায়ী রমনায় ৫৩টি, লালবাগে ৫৭টি,ওয়ারীতে ৭৭টি,মিরপুরে ৫৬টি, গুলশানে ২৫টি,উত্তরায় ৪০টি,মতিঝিলে ২২টি,তেজগাঁওয়ে ২৫টি চিহ্নিত মাদক স্পট রয়েছে। থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের মাদক স্পটের তালিকার মধ্যেও বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। থানা পুলিশ অনেক স্পটের তথ্যই এড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী মাদক স্পটের সংখ্যা রয়েছে পাঁচশ‘এরও বেশি। হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী রমনা জোনের রমনা মডেল থানা এলাকার মাদক স্পটগুলো হচ্ছে:- দিলু রোডের পশ্চিম মাথা,মগবাজার রেলক্রসিং-সংলগ্ন কাঁচাবাজার,আমবাগান চলি্লশঘর বস্তি,পেয়ারাবাগ বস্তি, মধুবাগ ঝিলপাড়, মালিবাগ রেলক্রসিং থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত এলাকা। শাহবাগ থানা এলাকায় ফুলবাড়িয়া সেক্রেটারিয়েট রোডের আনন্দবাজার বস্তি, ওসমানী উদ্যান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর,টিএসসি,তিন নেতার মাজার,ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশ এলাকা,সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,কাঁটাবন এলাকার ভাসমান বিক্রয় স্পট। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় জজ মিয়ার বস্তি সবচেয়ে বড় মাদক স্পট। এখানে হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক পাওয়া যায়। এই বস্তিতে ৩০-৪০টি ঘর আছে। সব ঘরেই মাদক বিক্রি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। লালবাগের শহীদনগর ১ থেকে ৬ নং গলি,মৌলভীবাজার কাঁচাবাজার ও বলিয়াদী হাউস এলাকা,বালুরঘাট বেড়িবাঁধ,ঢাকেশ্বরী মন্দির-সংলগ্ন পিয়ারী বেগমের বাড়ি,শহীদনগর পাইপ কারখানা,বুয়েট স্টাফ কলেজের পেছনে, নবাবগঞ্জ পার্ক,রসুলবাগ পার্ক,আজিমপুর কবরস্থানের আশপাশ এলাকা,আজিমপুর মেটার্নিটি হাসপাতাল-সংলগ্ন এলাকা। কোতোয়ালি থানা এলাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে এবং কর্মচারীদের স্টাফ কোয়ার্টারের আশপাশ এলাকা,সামসাবাদ এলাকার জুম্মন কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশ,কসাইটুলি কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশ, বাবুবাজার ব্রিজের ঢালে,বুড়ির বাগান,স্টার সিনেমা হলের সামনে,নয়াবাজার ব্রিজের ঢালে, নয়াবাজার ইউসুফ মার্কেট,চানখাঁরপুল ট্রাকস্ট্যান্ড,নিমতলী মোড়,আরমানিটোলা স্কুলের আশপাশসহ ২০টি স্পটে মাদক বিক্রি হয়। কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকার ট্যানারি পুকুরপাড়, পাকা পোল,কয়লাঘাট বেড়িবাঁধসহ ১৮টি স্পটে মাদক বিক্রি হচ্ছে। সূত্রাপুরে স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে রেললাইন সামাপাড়া বস্তি,মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরীক্ষাগার অফিসের পশ্চিম পাশে,কাপ্তানবাজার মুরগিপট্টি,ধূপখোলা মাঠ, মুন্সিরটেক কবরস্থান,যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার ধলপুর সিটি পল্লী,ওয়াসা বস্তি,আইডিয়াল স্কুল গলি,নবুর বস্তি,বউবাজার গলি,লিচুবাগানসহ ২৮ স্পটে মাদক বিক্রি হয়। শ্যামপুর থানা এলাকার জুরাইন রেলগেট,ব্রাদার্স ক্লাব সংলগ্ন মাঠ, ধোলাইখাল,নোয়াখালী পট্টি,মুরাদপুর মাদ্রাসা লেন,বেলতলা,শ্যামপুর বাজারসহ ৩০টি মাদক স্পট রয়েছে। এ ছাড়াও ডেমরা থানা এলাকায় ছয়টি,মিরপুর মডেল থানা এলাকায় আটটি,পল্লবী থানা এলাকায় ২৪টি,কাফরুল থানা এলাকায় ১০টি, শাহআলী থানায় চারটি,বাড্ডায় পুলিশের তালিকায় কোনো মাদক স্পট না দেখানো হলেও গোয়েন্দা তালিকায় ১৪টি,ভাটারা থানা এলাকায় তিনটি,খিলক্ষেত থানা এলাকায় পাঁচটি,ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় তিনটি,উত্তরা মডেল থানায় নয়টি,বিমানবন্দর থানা এলাকায় তিনটি,তুরাগ থানা এলাকায় আটটি,উত্তরখান থানা এলাকায় ১১টি ও দক্ষিণখান থানা এলাকায় ১৩টি স্পটে মাদক ব্যবসা চলছে নির্বিঘ্নে। রাজধানীর প্রধান প্রধান স্পটগুলোর মধ্যে আনন্দবাজার বস্তি অন্যতম। এখানে রয়েছে মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে চিহ্নিত বানুর মাদক স্পট। এর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে নিমতলী বস্তির সাবিনা ও পারুলের। পাইন্যা সর্দারের বস্তির রেণু,গণকটুলির মনোয়ারা রহমান নাছিমা,শ্যামপুরের ফজিলা,রানী বেগম এবং পারুলী। শাহীনবাগের পারভীন,তেজকুনিপাড়ার সনি,হিরা,নাসিমা। হাজারীবাগের স্বপ্না,কলাবাগানের ফারহানা ইসলাম তুলি,চানখাঁরপুলের পারুল,বাড্ডার সুমি,রামপুরের সীমা, শাহজাহানপুরের শামীম হক মুক্তা বিশেষভাবে ড্রাগ কুইন বা মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে চিহ্নিত। এদের নানাভাবে সহযোগিতা করে মাদক সম্রাট দাঁইত্যা বাবু,ডাইল আশরাফ,মতি,মিন্টু,দস্যু ইব্রাহিম,নুরনবী মুকুল আলম,রুবেল,সাত্তার সাহাবুদ্দীন,সন্ত্রাসী জলিল,কানা সেলিম,ন্যাটা মাসুদ। মহাখালীর আলোচিত মাদকসম্রাজ্ঞী হলো জাকিয়া ওরফে ইভা,রওশন আরা বানু। বনানীর শীর্ষ মাদক সম্রাজ্ঞী আইরিন ওরফে ইভা। মহাখালীর সাততলা বস্তি,রেলগেট,ঘিটুর বস্তি এলাকা,মহাখালী টার্মিনাল এলাকায় প্রতিদিন এক লাখ টাকার মাদক বিক্রি হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা সুমন,ল্যাংড়া কাজল,আতা এখানকার মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করে। গুলশানের অতি পরিচিত মাদক সম্রাজ্ঞী হলো মৌ এবং বারিধারার নাদিয়া ও যুথী। উত্তরার গুলবাহার, নাদিয়া এবং মাহমুদা ওরফে মুক্তি। এদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। বনানী থানা এলাকায় মাদকের সর্বোচ্চ ঘাঁটি গড়ে উঠেছে ইদানীং। সাততলা বস্তি এলাকায় জামরুল,কামরুল,সীমা,পিংকু,রুমা,রুবেল, জামাই নাজিমুদ্দিন,সোহেল জমজমাট মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
মাদক এবং ভাম্যমান নিশিকন্যাঃ রাজধানীতে জিয়া উদ্যান ও সংসদ ভবন ঘিরে চলছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মাদক ব্যবসা। সন্ধ্যার পরেই জিয়ার মাজারের আশপাশের এলাকা ভাসমান পতিতাদের দখলে চলে যায়। সন্ধ্যার পর ভাসমান পতিতাদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে মাদকসম্রাজ্ঞী পারুল এবং অজুফা। কথিত আছে সারা দেশের অপরাধীদের একটা অংশ আশ্রয় নেয় এমপি হোস্টেলে। যাদের প্রায় সবাই কম-বেশি মাদকসেবী। জিয়া উদ্যান এবং সংসদ ভবনকেন্দ্রিক মাদক নেটওয়ার্কে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ টাকার মাদক বেচাবিক্রি হয়।
মাদক নিরাময়কেন্দ্রঃ সারাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। কিন্তু এদের চিকিৎসার জন্য সরকারি নিরাময় কেন্দ্র আছে মাত্র চারটি। এগুলোতে মোট শয্যাসংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে চিকিৎসক সংকটে পাঁচ শয্যাবিশিষ্ট খুলনার ময়লাপোতার নিরাময় কেন্দ্র প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ। ঢাকার তেজগাঁওয়ে ৪০ শয্যার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসক আছেন সাতজন। রাজশাহীর উপশহর ও চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের নিরাময় কেন্দ্রে শয্যা আছে পাঁচটি করে,চিকিৎসক আছেন একজন করে। নেই আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি। এসব থেকেই বোঝা যায়,মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি কেন্দ্রগুলোর মাদকাসক্ত চিকিরসার করুণ অবস্থা। অন্যদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে বেসরকারিভাবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে তিন শতাধিক। এগুলোর মধ্যে ঢাকার ছয়টিসহ মোট ৫৪টির মতো কেন্দ্রের অনুমোদন (লাইসেন্স) রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে,ঢাকার ৪৪১ তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রের সাতজন চিকিৎসকের মধ্যে মনোরোগবিশেষজ্ঞ তিনজন। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী কেন্দ্রের চিকিরৎসকগণ মনোরোগবিশেষজ্ঞ নন।
জানা যায়,২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রে এক হাজার ৮৮৪ জন,রাজশাহীতে ৩৫ ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ১৫০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এসব কেন্দ্রে নারী ও শিশু মাদকাসক্তদের রেখে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। কেন্দ্রগুলোতে আসা মাদকাসক্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তাদের বেশির ভাগই হেরোইন,গাঁজা,ফেনসিডিলে আসক্ত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল জানান,সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে মাদকসেবীদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। প্রসঙ্গত,২০০৮ সালে অধিদপ্তরের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী সারা দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৪৬ লাখ। বিভিন্ন সংস্থার জরিপ অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েছে আরও সাত লাখ। কিন্তু সেই অনুপাতে চিকিৎসার সুবিধা বাড়েনি। ঢাকার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে জানা যায়,এখানে বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ থাকলেও জরুরি বিভাগ নেই। বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে ২০ জন মাদকাসক্তকে চিকিৎসা দেয়া হয়। শয্যা অপ্রতুল থাকায় শয্যা খালি হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে রোগী ভর্তি করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসক,নার্স ও কর্মচারী দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এক্স-রে ও ইসিজি যন্ত্রসহ আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই। ফলে রোগীদের বাইরে পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত অনুযায়ী,নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার পর তিন মাস পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেয়া হলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে। মাদকাসক্তকে পুরোপুরি মাদকমুক্ত করতে দীর্ঘমেয়াদি পুনবার্সন ব্যবস্থা করা জরুরি। পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু না হওয়ায় এখান থেকে চিকিৎসা নেয়া অনেককে দ্বিতীয়বার ভর্তি হতেও দেখা গেছে। জানা যায়,ঢাকার নিরাময় কেন্দ্রটি ৪০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার অবকাঠামো ২০০৭ সালে নির্মাণ হয়েছে। একই সঙ্গে ১৫০ শয্যার পুনর্বাসন কেন্দ্রও নির্মিত হয়েছে। তবে লোকবল ও আনুষঙ্গিক সুবিধা না থাকায় এগুলো চালু করা যাচ্ছে না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ প্রসঙ্গে বলেন, লোকবলের পাশাপাশি আসবাবপত্রসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি পাওয়া গেলে বর্ধিত শয্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করা যাবে। সচিব কমিটিতে অনুমোদন পাওয়া গেলে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, মাদকবিরোধী গণসচেতনতা বাড়াতে প্রচারের জন্য অধিদপ্তরের তহবিল নেই। এরপরও অধিদপ্তর এনজিওদের সহায়তায় গণসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পোস্টার ও প্রচারপত্র বিতরণ করছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) জানান,চারটি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসকসহ ১১টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। বারবার আবেদন সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব শূন্য পদ পূরণ করেনি।
জানা যায়,ঢাকায় অনুমোদনপ্রাপ্ত ছয়টি বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র হলো মধ্য বাড্ডায় সেতু,এলিফ্যান্ট রোডের সেবা মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগ চিকিৎসা কেন্দ্র,মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ক্রিয়া,মিরপুর ১ নম্বরের ঘরে ফেরা,উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের লাইট হাউস ক্লিনিক,খিলক্ষেতে দিশা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।
এছাড়া আরও ৮৯টি কেন্দ্র লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা খরচও বিভিন্ন রকম। এগুলোতে চিকিৎসায় ১০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে।
অনুসন্ধানঃ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে নিরাময়ের নামে চলছে মাদক ব্যবসা। এসব কেন্দ্র নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে এ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় নিরাময়ের পরিবর্তে আরও বেশি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়,সরকারিভাবে অনুমোদন আছে মাত্র ৫৭টি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের। কিন্তু বাস্তবে সারা দেশে কথিত মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার ছুঁই ছুঁই করছে। এসব স্থান থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারছে না কেউ। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আখ্যায়িত করে কেউ কেউ সমাজসেবা অধিদফতর,ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বা মানবাধিকার সংগঠনগুলো কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সাধারণ লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এসব কেন্দ্রে চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে। অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো ছাড়াও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এবং এসব কেন্দ্রগুলোতে নিরাময়ের নামে চলে মাদক ব্যবসা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে সরকারি চারটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থাকলেও জনবলের অভাবে সঠিক চিকিৎসাসেবা দেয়া যাচ্ছে না এসব কেন্দ্রগুলোতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,২০০৫ সালের জুন মাসে বেসরকারি পর্যায়ে মাদকাসক্তি পরামর্শ-নিরাময়-পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। সে অনুসারে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে নিবন্ধন নেয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র ৫৭টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে। আর নিবন্ধন নেয়নি এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে অধিদফতর। প্রাথমিক তালিকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১২শ’ মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের নাম পাওয়া গেছে। মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ ওইসব কেন্দ্রের অধিকাংশের নেই কোন বৈধ অনুমোদন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম।
বিধিমালার ৪ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, নিরাময় কেন্দ্র সুরক্ষিত পাকা বাড়িসহ আবাসিক এলাকায় হতে হবে এবং এতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সুবিধাসহ নিরিবিলি সুন্দর পরিবেশ থাকতে হবে। ‘খ’ ধারায় বলা আছে, ওই কেন্দ্রে একজন মাদকাসক্ত রোগীর জন্য গড়ে কমপক্ষে ৮০ বর্গফুট জায়গা থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষিত ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাছাড়া বহুতল ভবনের তৃতীয় তলা বা তার চেয়ে ওপরের তলায় অবস্থিত হলে ওঠানামার জন্য লিফটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ‘গ’ ধারায় বলা আছে, প্রতি ১০ জনের বিছানার জন্য পৃথক একটি টয়লেট ও পানীয়জলের ব্যবস্থাসহ কমপক্ষে একজন মনোচিকিৎসক (খ-কালীন বা সার্বক্ষণিক), একজন চিকিৎসক, দুজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা বয়, একজন সুইপার বা আয়া এবং জীবন রক্ষাকারী উপকরণ ও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধপত্র থাকতে হবে। এছাড়া প্রতি রোগীর জন্য একটি করে বিছানাসহ খাট, খাটের পাশে লকার বা টেবিল থাকতে হবে। জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু কেউ বিধিমালা মানছেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশিরভাগ নিরাময় কেন্দ্রে তালা মেরে রাখা হয় মাদকাসক্ত রোগীদের। ভয়ংকর মাদকাসক্তে আক্রান্তদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পরিবারের সদস্যরাও এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকেন। সরকারিভাবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পাশেই রয়েছে সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র। তাছাড়া রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তিনটি সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থাকলেও জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। যার ফলে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছেন না রোগীরা। ঢাকার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে শত শত নিরাময় কেন্দ্র। সরকারিভাবে অনুমোদন না নিয়ে এগুলো চালানো হচ্ছে। নামে-বেনামে গড়ে ওঠা এসব নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার কোন বালাই নেই। এগুলোকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখিয়ে অসাধু চক্র ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত করেছে। নানা অভিযোগ আর চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন,মাদক থেকে মুক্ত করার পরিবর্তে চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে মাদক সেবন, কেনাবেচা, কারাগারের আসামিদের মতোই বন্দি করে রেখে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী ৫৭টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে। তার মধ্যে ঢাকায় ১৭টির মধ্যে সেগুলোর নাম পাওয়া গেছে সেতু মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র-মধ্যবাড্ডা, সেবা মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগ চিকিৎসা কেন্দ্র-এলিফ্যান্ট রোড, প্রশান্তি মাদকাসক্তি চিকিৎসায় মনোবিকাশ ও পুনর্বাসন সহায়তা কেন্দ্র-উত্তর গোড়ান, ক্রিয়া মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র-মোহাম্মদপুর, ফেরা মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র-মিরপুর, লাইট হাউস ক্লিনিক-উত্তরা, দিশা মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র নিকুঞ্জ-২, মুক্তি মানসিক এন্ড মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র লিমিটেড-গুলশান-২, হাইটেক মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড-ফার্মগেট ও প্রত্যয় মেডিকেল ক্লিনিক লিমিটেড-বারিধারা আবাসিক এলাকা।
নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো উপঅঞ্চলের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মধ্য বাড্ডার সেতু মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র, এলিফ্যান্ট রোডে সেবা মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগ চিকিৎসা কেন্দ্র, উত্তর গোড়ানে প্রশান্তি মাদকাসক্তি চিকিৎসায় মনোবিকাশ ও পুনর্বাসন সহায়তা কেন্দ্র, মোহাম্মদপুরে ক্রিয়া মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র, মিরপুরে ফেরা মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র, উত্তরায় লাইট হাউস ক্লিনিক, নিকুঞ্জ-২ এ দিশা মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র, গুলশান-২ এ মুক্তি মানসিক অ্যান্ড মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, লিমিটেড, ফার্মগেটে হাইটেক মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড ও বারিধারা আবাসিক এলাকায় প্রত্যয় মেডিকেল ক্লিনিক লিমিটেড।
যেসব মাদকাসক্ত কেন্দ্রের রেজিস্ট্রেশন নেইঃ খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগে সৃষ্টি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পরামর্শ কেন্দ্র, খিলগাঁও আইডিয়াল কলেজ সংলগ্ন রূপান্তর মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুর্নবাসন কেন্দ্র,মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে বারাক, মনোচিকিৎসালয়, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফাস্ট কনসার্স, মোহাম্মদী হাউজিংয়ে জীবনের ঠিকানা,ঢাকা উদ্যানে ফিউচার, জীবনের আলো, নিউ তরী, রায়ের বাজারে আশার আলো, মোহাম্মদপুর আজিজ মহল্লায় নতুন জীবনে ফিরে আসা, উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে রি-লাইফ, ৭ নম্বর সেক্টরে ফেরা, ৯ নম্বর সেক্টরে সেবা, ৪ নম্বর সেক্টরে গ্রিন লাইফ, ৩ নম্বর সেক্টরে দীপ জ্বেলে যাই, এলিফ্যান্ট রোডে নিউ মুক্তি কিনিক, পশ্চিম যাত্রাবাড়ীতে নতুন জীবন মাদকাসক্তি ও চিকিৎসা পুনর্বাসন কেন্দ্র, হাদী মাদকতা হ্রাস কমপ্লেক্স, উত্তর যাত্রাবাড়ীতে দিশারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, উত্তর শাহজাহানপুরে নির্বাণ মাদকাসক্তি নিরাময় কিনিক, মতিঝিলে হলি লাইফ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র,বাড্ডার ছোলমাইদ পূর্বপাড়ায় কিন লাইফ, পশ্চিম রামপুরায় সমর্পণ, রামপুরার ডিআইটি রোডে নীড়, খিলগাঁওয়ে আশার আলো,গ্রিনরোডে লাইফ অ্যান্ড লাইট হসপিটাল, পল্লবীতে ঢাকা মনোরোগ কিনিক, লালবাগে মধুমিতা ক্রিয়া প্রকল্প ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞদের অভিমতঃ এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, যেসব নিরাময় কেন্দ্র অনুমতি না নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশে মাদকসক্তরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাই কেন্দ্রগুলোকে নীতিমালার আওতায় আনতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রচলিত ধারায় সংশোধনী আনার প্রক্রিয়া চলছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আলী আসলাম হোসেন বলেন, সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়। এ ছাড়া অবৈধ ও শর্ত না মানা বৈধ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তবে ফি কমিয়ে সব অবৈধ কেন্দ্র যেন লাইসেন্স করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঢাকা উদ্যানে ‘ফিউচার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’র কর্মসূচি সমন্বয়কারী সৈয়দ ইসকান্দার আলী জানান, বিধিমালায় লাইসেন্স পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তার অনেকটাই অপ্রয়োজনীয় এবং কঠিন। তার মতে, মনোরোগ চিকিৎসক, একজন চিকিৎসক, দুজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা বয়, একজন সুইপার বা আয়া, জেনারেল ইনস্ট্রুমেন্ট সেট, রোগী বহনের ট্রলি, স্ট্রেচার, বেডপ্যান, ফ্লোমিটার ও মাস্কসহ অক্সিজেন সিলিন্ডার, সার্জিক্যাল কাঁচি, বেডের কোনো প্রয়োজন নেই। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধিকাংশ মালামাল অব্যবহৃত থাকবে। সারাদিন একজন চিকিৎসক কাজ না করে বসে থেকে তিনি এখানে চাকরি করতে চাইবেন না। এ ছাড়া লাইসেন্সের শর্তে বলা আছে, আবেদনপত্রে যে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়, সেখানেই কেন্দ্রের কাজ পরিচালনা করতে হবে। এই শর্তটিও ঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, ঢাকা শহরের অধিকাংশ কেন্দ্রে বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করতে হয়। ফলে বাড়িওয়ালার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেই কেন্দ্রটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়।
শেষ কথাঃ নেশার অর্থ জোগাতে চুরি,ছিনতাই,রাহাজানি,প্রতারণা,দেহব্যবসার মতো অসামাজিক-অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে একশ্রেণীর তরুণ-তরুণী। এই ভয়াবহ চিত্র যে কোনো সুস্থ,স্বাভাবিক ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে শঙ্কিত করে। যে তরুণ সমাজ আমাদের আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে,তাদের একটি বিরাট অংশই যদি মাদকাসক্ত হয়,তাহলে ভবিষ্যৎ যে ভয়াবহ,তা সহজে অনুমেয়। আর এসব নেশাদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায়,তা ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক আকারে। মাদক সেবনের মাধ্যমে সমাজের ক্ষত যেন আর না বাড়ে, সে উদ্দেশ্যে মাদকসেবীদের নিয়ন্ত্রণ,চিকিৎসার মাধ্যমে মাদকমুক্ত করতে মাদক নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কেন্দ্রের জন্য সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নেয়ার নিয়ম রাখা হয়। পরিতাপের বিষয়, যেখানে মদের দোকানের লাইসেন্স নিতে লাগে পাঁচ হাজার টাকা,সেখানে নিরাময় কেন্দ্রের লাইসেন্স ফি সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। এ বড় আজব নিয়ম! বড় বিচিত্র এ দেশ! এ ব্যাপারে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নিয়ে নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে বিপরীত কাজ অর্থাৎ মাদক বিক্রিসহ সেবনের নির্ভয় নিরাপদ পরিবেশ করে দেয়ার অভিযোগও আছে। মাদকের ভয়াবহতা থেকে আমরা নিস্তার চাই।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।