বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৪২ বছর পূর্তি

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৪২ বছর পূর্তি

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। লাখো শহীদের রক্তস্নাত বিজয়ের দিন। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৪২ বছর পূর্তি আজ।

পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের কুহেলিকা ভেদ করে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। এবার অন্যরকম গৌরব নিয়ে দেশবাসী বিজয় দিবস পালন করছে। কারণ দীর্ঘ ৪২ বছর পর বিজয়ের এই মাসেই মাত্র চার দিন আগে অর্থাৎ গত ১২ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারী কোনো স্বাধীনতাবিরোধীর। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ওইদিন রাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল সেটির উদয় ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের মহামুহূর্তটি সূচিত হয়েছিল আজকের এই দিনে। ৯১ হাজার ৫৪৯ পাকিস্তানি সৈন্য প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণ করেছিল। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিত্ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। আর এই বিজয়ের মহানায়ক হিসাবে যিনি ইতিহাসে চির অম্লান ও ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

খুব সংক্ষেপে পেছনের কথা বলতে গেলে বলা যায়, ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাঙালি রক্ত দিয়েছে। সোয়া ২শ` বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম ও লড়াইয়ে রক্ত দিয়েছে এই বাঙালি জাতি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনেও ছিল বাঙালিদের বড় ভূমিকা। কিন্তু কয়েক বছরেই বাঙালির মোহভঙ্গ হয়। যে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির আশায় তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়েছিল, নতুন রাষ্ট্র কাঠামোয় একই রকম শোষণ বঞ্চনার মুখোমুখি হতে হয় কয়েক বছরের মধ্যেই। শুরু হয় সংগ্রামের নতুন যুগ। পাকিস্তানিরা এ ভূ-খণ্ডের মানুষকে তাদের তাঁবেদার মনে করতো। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই তারা বঞ্চিত করতো বাঙালিদের। এমনকি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতেও তারা অস্বীকার করতো। ৫২`র ভাষা আন্দোলন, ৬৬`র ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯`র গণঅভ্যুত্থান এ সবই ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচন সব পরিণতিকে দিয়ে দেয় চূড়ান্ত রূপ। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে আসে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা—এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ঘোষণা জাতির মনে বয়ে আনে অন্য এক প্রেরণা, জাগিয়ে তোলে মুক্তির উন্মাদনা।

নিজস্ব প্রতিনিধি