১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে বর্তমানে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে ৪ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্যে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে গত ২৩ বছরে বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্য এসেছে প্রায় ৪৭ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। দারিদ্রতা দূর করার লক্ষে এসব সাহায্য এলেও ১৬ কোটি মানুষের দেশে এখনো দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৭০ লাখের বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, আওয়মীলীগের দুইবারের শাসনামলে এসেছে ২৮হাজার ৭৪২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৮ টাকা। আর বিএনপির দুইবারের শসনামলে এসেছে ১২ হাজার ৩৬৩ কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার ৬০৬ টাকা। এই সময়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ৫৮ হাজার ৮২৫ কোটি ৯৭ লাখ ৫৮২ টাকার। এনজিও ব্যুরো ও বাংলাদেশ বাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এরশাদ সরকারের পতনের মূহুর্তে ১৯৯০ সালের জুন পর্যন্ত এনজিও সেক্টরে বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ কোটি টাকা। যা ৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে এসেছিল। তখনকার সময়ে দেশে নিবন্ধিত এনজিওর সংখ্যাছিল ৩৪৭টি। এর মধ্যে ২৬৭ টি ছিল স্থানীয় এবং বাকি ৮০ টি ছিল বিদেশী।
বিএনপির শাসনামল: এরশাদের পতনের পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠন করে। বিএনপির শামনামলে (৯০-৯১ থেকে ৯৫-৯৬ অর্থবছরে) এনজিও সেক্টরে এসেছিল ৪ হাজার ২৫৫ কোটি ৫ লাখ ৬৩ হজার ৯১৫ টাকা । বিপরিতে অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১৩৯কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ সময়ে বছরে ৬৬৮ টি এনজিওকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে দেশী ৬১১টি এবং বিদেশি ৫৭ টি। ওই সময়ে বাতিল করা হয়েছে ৩৫টি এনজিও।
আওয়ামীলীগের শাসনামল: ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। তাদের (৯৬-৯৭ থেকে ২০০০-২০০১ অর্থবছরে) শাসনামলে দেশে এনজিও সেক্টরে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ৫ হাজার ৬২৯কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার ২৭৭ টাকা। একই সময়ে অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা (প্রায়)। নতুন এনজিও নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল ৬০৪টি। এর মধ্যে ৫৬৮টি দেশি এবং ৩৬ টি বিদেশি এনজিও রয়েছে। ওই সময়ে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় ৪১৪০টি। তবে ১৯৯৮ সালের বন্যার সময়ে এনজিওগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক বা এনজিও বুরোর মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি সাহায্য দিয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে বিএনপি সরকার: ২০০১ সালে বিএনপি দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার পর (২০০১-২০০২ থেকে ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে) ৫ বছরে এনজিও খাতে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ৮ হাজার ১০৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যা বিএনপির প্রথম শামনামলের চেয়ে ৩ হাজার ৮৮৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি। এ সময়ে নতুন করে এনজিও নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল ৪৩৯ টির। এর মধ্যে দেশি ৪২২, বিদেশি ১৭টি। ওই সময়ে ৪৫৫২টি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব সহায়তা এসেছে।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার: বিএনপির সরকারের শেষে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকরের (২০০৬-২০০৭ থেকে ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে) সময়ে দেশে প্রলংকারী ঘুর্নিঝড় ‘সিডর’ আঘাত হানে বাংলাদেশের উপর। ফলে সিডর দুর্গতদের সহায়তায় ২ বছরে প্রায় ৫ হাজার ৯২০কোটি ৮ লাখ ৭৪হাজার ২৪৪ টাকার সহায়তা আসে এনজিও সেক্টরে। ২৩৭০ টি প্রকল্পের মাধ্যমে এ সহায়তা দেয়া হয়। এ সময়ে ৬ হাজার ৬৪৬ কোটি ৮ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দাতা সংস্থাগুলো। একই সময়ে ২৪৫টি দেশি ও ১৬ টি বিদেশি এনজিওর নিবন্ধন দেয়া হয়।
আওয়ামীলীগের দ্বিতীয় মেয়াদ: আওয়ামীলীগের দ্বিতীয় মেয়াদে (২০০৮-২০০৯ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর) এনজিও সেক্টরে সাহায্য এসেছে ২৩ হাজার ১১৩ কোটি ১৬ লাখ ৬৩হাজার ১২১ টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশে ৫ হাজার প্রকল্পের আওতায় এ টাকা এসেছে। প্রতিশ্রুত অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে নতুন করে ২২৩ টি এনজিওর নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। অপরদিকে বাতিল করা হয়েছে প্রায় ৫৫০টি এনজিও।
এনজিও ব্যুরোর উপ-পরিচালক একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনজিও ব্যুরো বিভিন্ন নীতিমালা তৈরির ফলে এনজিও সেক্টরে স্বচ্ছতা ফিরে এসেছে। দাতা সংস্থাও নির্দিষ্ট প্রকল্পে সহায়তা দিতে পারছে। তিনি বলেন, সরাসরি দাতা সংস্থার কাছ থেকে অর্থপ্রাপ্তির উপরে বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকার কারণে দাতাদের কাছ থেকে সরাসরি কোনো সহায়তা পাওয়ার সুযোগ নেই। এনজিওগুলোর মাধ্যমে সহায়তা বৃদ্ধিপাওয়ার পেছনে এটিও একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি। এনজিওর দুর্নীতি বিষয়ে তিনি বলেন, এনজিও ব্যুরোর সরাসরি মনিটরিং থাকার কারণে এক ফাণ্ডের টাকা অন্য ফাণ্ডে স্থানান্তরের সুযোগ নেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই নিয়মিত বার্ষিক আয় ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। ব্যুরোর একটি সূত্র জানায়, দেশে এনজিও সেক্টরে বেশি টাকা এসেছে দারিদ্রতা হ্রাসের জন্য। কিন্তু দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সেইভাবে কমছে না। অতি দারিদ্রতা দূরীকরণ, সকল শিশুর জন্য গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করা, ক্ষুধা দূরীকরণ, সবার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাকরণ, প্রতিরোধযোগ্য শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধ, সহিংসতা থেকে শিশুদের সুরক্ষা প্রদান, উদার ও জবাবদিহিতামূলক সরকার নিশ্চিতকরণ, উন্নয়নের জন্য কার্যকর অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, দুর্যোগ মোকাবেলা, টেকসই ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, সবার জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবস্থাকরণসহ নানা প্রকল্পে আসছে এসব অর্থ। গত বছরের ১৬ ফ্রেরুয়ারি প্রকাশিত সেফ দা চিলড্রেনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে বর্তমানে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে ৪ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ।