লজ্জা…
সুমন্ত আসলামঃ
হাতে স্টিলের ঘড়ি;, চোখে কালো রোদ-চশমা; পরণে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট, হাতা-কাটা টি-শার্ট; পায়ে হলুদ রংয়ের স্যান্ডেল—তাকে দেখেই মোটেই রিকশাওয়ালা মনে হয় না আমার। রিকশায় ওঠার পর একটু উশখুশ করে বলে ফেলে, ‘স্যার, ক্রিকেট খেলায় আজ বাংলাদেশ জিতবই। মনের আনন্দে তাই আজ একটু নায়ক সাজছি।’
কয়দিন আগে সে যখন এই কথাটা বলছিল, সেই মুহূর্তে রিকশাটা মিরপুরের স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। আমি তার চোখে-মুখে যে প্রত্যাশাটা দেখেছি, সেটা ছিল বিশ্ব জয়ের প্রত্যাশা, দেশকে উঁচুতে দেখার প্রত্যাশা, একটা প্রকৃত দেশ-ভালোবাসকের প্রত্যাশা।
‘প্রত্যাশার সীমাটা বোঝা উচিত’
আজ প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত সাকিব আল হাসানের সাক্ষাৎকারের হেডিং।
প্রত্যাশার সীমা আমরা আসলেই বুঝি না, বুঝি না বলেই—
* আমরা হংকংয়ের সঙ্গে হারি
* আমরা একটা খেলাতেও ভালো খেলি না
* ক্রিকেটারদের নির্লজ্জ ব্যর্থতায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদি
* আমাদের করের টাকায় তাদের আরাম-আয়েশে পালি
‘বাংলাদেশের বিবেচনায় ক্রিকেটারদের আয় অনেক বেশি। খারাপ খেললে এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা কি স্বাভাবিক নয়?’
এর উত্তরে সাকিব বলেছেন, ‘… আমার বেতন কোন দিক দিয়ে আসে কোন দিক দিয়ে যায়, আমি জানি না। একটা ভালো রেস্টুরেন্টে যান, পাঁচ-ছয়জন লাঞ্চ করেন, ডিনার করেন, আপনার ২০-২৫ হাজার টাকা শেষ।’
সাকিব আল হাসান জানেন না, বাংলাদেশের নব্বই ভাগ পরিবার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এই ২০-২৫ হাজার টাকায় পুরো মাস চালায়। বড় কোনো হোটেলে লাঞ্চ-ডিনার তো দূরের কথা, বছরে তারা সর্বসাকুল্যে সাতদিন ভালো খাবার খান কি-না সন্দেহ আছে। সাকিবের ভাগ্য ভালো, তিনি ক্রিকেটার হতে পেরেছেন, তাই প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারছেন, না হলে এই দেশে তাকে ওই ২০-২৫ হাজার টাকাতেই সংসার চালাতে হতো, লাঞ্চ-ডিনার করার সম্ভবনা থাকত না কোনো রেস্টুরেন্টে, কোনোদিন! এবং দম্ভ করে কথা বলতে হতো না তাকে প্রতিনিয়ত, যে দম্ভ আমাদের কাতর করে, লজ্জা দেয়, কাঁদায়!
[সুমন্ত আসলামঃ সহযোগী সম্পাদক,দৈনিক সমকাল।।]