ক্রীড়া প্রতিবেদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ মাহেলা জয়াবর্ধনের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষটা হতে যাচ্ছিল- শূন্য বল, শূন্য রানে। কুমার সাঙ্গাকারার নামের পাশে থাকত ছয় বলে এক রান। টি-টোয়েন্টি থেকে দুই বন্ধুর এভাবে বিদায় নেয়াটা পছন্দ হলো না ক্রিকেট দেবতার। তাদের ভাগ্য বদলে দেয়ার জন্য ক্রিকেট দেবতার পাশে এসে দাঁড়ান মেঘ দেবতা। ঝাঁ করে শেরেবাংলায় নামিয়ে দিলেন ঝড়-বৃষ্টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটসম্যান মারলন স্যামুয়েলস ও ড্যারেন স্যামি দৌড় লাগান ড্রেসিংরুমের দিকে। আশ্রয়ে ফিরলেন শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড়রাও। তারা নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার পরই আকাশ ভেঙে পড়ে। ধূলি ঝড় থেমে শিলাবৃষ্টিতে ভেসে যায় মাঠ। জলে ভেসে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বপ্ন। জলে থৈ থৈ মাঠ ঠিক করে খেলা শুরু করা সম্ভব হলো না। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ২৭ রানে জিতে গেল শ্রীলঙ্কা। নিরাপদ আশ্রয় সুসংহত হওয়ার পরই মাঠ জলশূন্য হলো! টানা দ্বিতীয় বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল শ্রীলঙ্কা। সব মিলে খেলছে তৃতীয় ফাইনাল। টি-টোয়েন্টি থেকে স্মরণীয় বিদায় নেয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন মাহেলা-সাঙ্গাকারা। সেই সঙ্গে ২০১২ সালের ফাইনালে হারের প্রতিশোধও নেয়া হলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আক্ষেপ করতে পারে শ্রীলঙ্কার কাছে নয়- প্রকৃতির কাছে হেরেছে তারা। কিন্তু পুরো ২০ ওভার খেলা হলে তারা জিততে পারত সে দাবিও করতে পারবে না। ঝড়-বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় ১৩.৫ ওভারে ৮০ রান ছিল টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। জিততে হলে শেষ ৩৭ বলে ৮১ রান করতে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। হাতে ছয় উইকেট থাকলেও শ্রীলঙ্কার বোলিং সামলে ওই রান করা কঠিন হতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩.৫ ওভারে ১০৮ রানে থাকলে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে জিতে ফাইনাল খেলত। প্রথম থেকেই শ্রীলঙ্কা এত ভালো বোলিং করেছে যে আগের ছন্দে খেলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন স্মিথের ওপেনিং জুটি ২৫ রানের হলেও দ্বিতীয় জুটি দাঁড়াতে পারেনি। চার বলের ব্যবধানে লাসিথ মালিঙ্গাকে উইকেট দিয়েছেন গেইল-স্মিথ। ৩৪ রানে তিন উইকেট হারিয়ে টালমাটাল অবস্থা ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এক ওভারে ১৭ রান তোলা দলই পরের ছয় ওভারে নিয়েছে ১৭ রান। ডোয়াইন ব্রাভো এবং স্যামুয়েলস ঝড়ের আভাস দিয়েও নিভে গেছেন। জুটিতে ৪৩ রান হওয়ার পরই নুয়ান কুলাসেকারার শিকার হন ব্রাভো। রঙ্গনা হেরাথ তার চার ওভারের কোর্স শেষ করেছিলেন ২৭ রান দিয়ে। আর কেউই চার ওভার শেষ করেননি। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মালিঙ্গা তার দুই ওভার হয়তো রেখে দিয়েছিলেন স্যামি-স্যামুয়েলসের জন্য। কারণ এই স্যামুয়েলসের কাছেই গত বিশ্বকাপের ফাইনালে বেধড়ক পিটুনি খেয়েছিলেন মালিঙ্গা। সেমিফাইনাল ম্যাচে প্রথম থেকে ছন্দে থাকায় স্যামুয়েলস-স্যামির কাজটা হয়তো কঠিন করে দিতেন। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, সেকুগে প্রসন্ন, সচিন্থা সেনানায়েকে, নুয়ান কুলাসেকারা প্রত্যেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। এই বিশ্বকাপে গতকালের আগে এত ভালো বোলিং মোকাবিলা করতে হয়নি ক্যারিবীয়দের। শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ছয় উইকেটে ১৬০ রান করেছিল। কুশল পেরেরা ২৬, তিলকারত্নে দিলশান ৩৯, প্রসন্ন থিরিমান্নে ৪৪, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ৪০ রান করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ভালো হয়নি। ওপেনিং জুটিতে ৪১ রান হলেও ৪৯ রানে তিন উইকেট হারায়। ৮ রানের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সিনিয়র দুই ক্রিকেটার মাহেলা ও সাঙ্গাকারা বিদায় নেন, যাদের হাত থেকে ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা কেড়ে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হারের লজ্জায় সেদিন অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন মাহেলা। টি-টোয়েন্টি থেকে তাদের বিদায়টাও দুঃখের কালো চাদরে মুড়ে দিতে চেয়েছিলেন স্যামিরা। ভাগ্যের ছোঁয়ায় উল্টো তারা পৌঁছে গেলেন ফাইনালে। ২৮ দিনের ব্যবধানে একই মাঠে দুটো ফাইনাল খেলার রেকর্ড গড়ে ফেলছে লঙ্কানরা। ৮ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে। রোববার খেলবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। ২০০৯ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ডের মাঠে সেবার ফাইনালে হেরেছিল পাকিস্তানের কাছে। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। এবার তাদের শিরোপা জেতার পালা। – See more at: http://www.thebengalitimes.com/details.php?pub_no=198&menu_id=2&val=11774#sthash.c56RImjb.dpuf