যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর রায় নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন
শওগাত আলী সাগর:একেকটা রায় হবে,আর আমরা রাগে দু:খে হতাশায় মাথার চুল টেনে তুলে ফেলবো,সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ঝড় তুলবো- এই বুঝি আমাদের নিয়তি? আমরা আপোষের চোরাগলিতে কে কাকে বুকে জড়িয়ে ধরে দৃঢ় আলিঙ্গনে কানের কাছে মুখে নিয়ে ফিস ফিস করে বলেছে,’বাইরে যাই দেখো না কেন, এই হচ্ছে আমি, এই আমাদের স্বরুপ’- তার মুসাবিদা করবো,কেউ কেউ আবার বিচারের বিভাগের স্বাধীনতার পরাকাষ্ঠার চিত্র তুলে ধরে সরকারের মহত্বের খতিয়ান নিয়ে বিতর্কে হাজির হবে।বাহ! মন্দ নয়। বরং সত্যিই কি ব্যতিক্রম আমার বাংলাদেশ। প্রসিকিউশন নিয়ে বেড়ালের মিউ মিউ করার মতো মাঝে মধ্যে যে আওয়াজ উঠেছিলো সেগুলো কি সত্যিকারের কোনো প্রতিবাদ ছিলো, নাকি উচ্ছিস্ট না পেয়ে বিড়ালের কপট অভিমানের শব্দমালা তা কোনো দিনই আমাদের জানা হবে না।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রসিকিউশনে যারা আছেন, তারা যোগ্যতা, এই ধরনের কাজে তাদের অভিজ্ঞতা আর এই বিচারের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাগুলো কখনোই কি খুটিয়ে খুটিয়ে বিশ্লেষন করা হবে? ‘প্রাইজ পোস্টিং’ বলে একটা কথা আছে। দল ক্ষমতায় এলে দলের বিশ্বস্থ ক্যাডাররা (পলিটিক্যাল) নানা জায়গায় পূণর্বাসিত হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনালে, প্রসিকিউশনে অন্তত ‘প্রাইজ পোষ্টিং’ কাংখিত নয়। সেই অনাকাংখিত কাজগুলোই কি হয়নি।অথচ আজ আমরা যতোটা সশব্দে রায় নিয়ে হাহুতাশ করছি, ততোটা জোড়ালোভাবে এইসব নিয়ে প্রতিবাদী হইনি কেন?
আওয়ামী লীগ, কেবল আওয়ামী লীগই পারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে- এই কথা সত্য। কারন বিএনপির এ ব্যাপারে কোনো অঙ্গীকার নেই। আবার এও সত্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আওয়ামী লীগ, কেবল আওয়ামী লীগই রাজনীতি করতে পারে।সেই রাজনীতি মানুষকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার রাজনীতি, মানুষের বিশ্বাসকে পুজিঁ করার রাজনীতি।আমি যাকে বলি প্রতারনার রাজনীতি। আমরাই তো শুনেছি,জন কেরি, বান কি মুনের টেলিফোনকে প্রত্যাখান করার দৃঢ়তা দেখিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আমরাই আবার মিনমিন করে সৌদি আরবের টেলিফোনের গল্প ফেঁদে সরকারকে প্রটেকশন দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তাতে যে প্রটেকশন হয় না, বরং সরকারের কাপড় আরো বেশি খুলে যায়, সেটা হযতো এই গোষ্ঠীটি বুঝে উঠতেও পারে না। বিশ্বজনমতকে পাশ কাটিয়ে যে সরকার বিরোধীদল বিহীন নির্বাচন করতে পারে, জাতিসংঘ, মার্কিনীদের টেলিফোন উপক্ষো করতে পারে,সেই সরকার সৌদি আরবের কাছে এমন নতজানু হয়ে যায় কিভাবে? সাঈদীর জন্য সৌদি সরকারের কোনো প্রেম যদি থেকে থাকে, তাহলে সেটি কি সরকার আগেভাগে টের পায়নি? সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, কূটনীতি সেগুলো কি সক্রিয় ছিলো এ ব্যাপারে? রায়ের ব্যাপারটা অবশ্যই আদালতের ব্যাপার। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বিচারকদের ব্যাপার। বিচারকতো আর খেয়াল খুশি মতো রায় দেন না।আদালত থেকে কাংখিত রায় পেতে প্রসিকিউশনের যে ভূমিকা থাকার কথা ছিলো, সেটি কি পরিপূর্ণভাবে করা হয়েছিলো? এই সব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
[লেখক: প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক, নতুনদেশ ডটকম।]