কানাডায় কোরবানী
সৈকত রুশদী: ঈদ উল আযহা উপলক্ষে আমার এক বন্ধু বাংলাদেশ থেকে জানতে চেয়েছেন টরন্টোয় পশু কোরবানীর সুযোগ ও ব্যবস্থা সম্পর্কে। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে কানাডায় এদেশের আইন না ভেঙ্গে যার যার ধর্ম পূর্ণভাবে পালন ও চর্চার স্বাধীনতা ও সুযোগ আছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসলমানরা নিজেদের মতো নানা ধরণের ব্যবস্থাও করে নিয়েছেন।
টরন্টোয় শহরকেন্দ্রে রজার্স সেন্টার এরেনায় অথবা বাঙালিপাড়া ভিক্টোরিয়া পার্ক এভিনিউ-ড্যানফোর্থ এভিনিউ এলাকায় ডেনটোনিয়া পার্কে খোলা আকাশের নিচে যেমন ঈদের নামাজের আয়োজন হয়, তেমনই প্রায় সব মসজিদে একাধিক জামাতে নামাজ হয়। মসজিদগুলো প্রধানত: দুই ভাগে বিভক্ত। সেই সাথে মহল্লার মুসলমানরাও। টরন্টো হিলাল কমিটি নামের সংগঠনের সদস্য মসজিদগুলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে আরবী মাস নির্ধারণ করেন। তাঁদের হিসেবে আজ (রোববার, ৫ অক্টোবর ২০১৪) ঈদ। আমার পাড়ার বাংলাদেশী, পাকিস্তানী ও ভারতীয় এবং বাঙালিপাড়ার প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশী মুসলমান আজ ঈদ পালন করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন ইসলামিক সোসাইটিভি অব নর্থ আমেরিকা বা ISNA অনুসরণ করে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুসারে চাঁদ দেখার সময়, আরবী মাসের তারিখ ও ধর্মীয় উৎসব। তাদের হিসেব অনুসারে ঈদ ছিল গতকাল শনিবার (৪ অক্টোবর)। সেকারণে বাঙালিপাড়ার প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশী এবং পাকিস্তান, ভারত, আফগান ও আরব দেশগুলোর বেশিরভাগ মুসলমান ঈদ উদযাপন করেছে। ঘটনাচক্রে এবার দু’টি দিনই ছিল ছুটির। উইকএন্ড। নাহলে যে গোষ্ঠীর ঈদটি ছুটির দিনে পড়তো, অংশ নেওয়ার পাল্লায় সেই দিকটি ভারী থাকতো! দক্ষিণের প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রেও পরিস্থিতি প্রায় একই।
আমার অবশ্য এখনও টরন্টোয় কোরবানী দেওয়া হয়নি। দেশে, বাবা-মায়ের সাথে দিয়ে এসেছি বরাবর। মায়ের অবর্তমানে বাবার ও বড় বোনের সাথে কুষ্টিয়ায় কোরবানী দিচ্ছি এবারে।
টরন্টোয় বেশিরভাগ মুসলমান হালাল মাংস বিক্রির দোকানের সাথে বন্দোবস্ত করে। নিজের মহল্লার অথবা পরিচিত দোকানে আগেই নাম লিখিয়ে রাখে। কোরবানীর কয়েকদিন আগে টাকা পরিশোধ করতে হয়। এবারে যেমন গরুর ভাগ ২৫০ থেকে ৩০০ ডলার। মাংস হবে প্রায় ১০০ পাউন্ড বা প্রায় ৪৫ কেজি। ভেড়া বা ছাগল প্রতিটি ২২০ থেকে ২৪০ ডলার। মাংস পাওয়া যাবে ঈদের এক বা দুই-তিনদিন পরে। সমস্যা হলো, দোকানে ফার্ম থেকে পাঠানো যে মাংস দেওয়া হবে সেটি কোরবানীর বটে তবে যে নিজের নামে কোরবানী দেওয়া গরুর হবে, নাকি অন্য গরুর হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। প্রশ্ন তুলেও লাভ নেই। দ্বিতীয়ত: দেরিতে পাওয়া। আর সুবিধা হলো টাকা দিয়ে কোরবানী দেওয়ার দায়িত্ব শেষ এবং তরকারীর জন্য ছোট আকারে কাটা মাংস পাওয়া। আমার কয়েকজন প্রতিবেশী এই পদ্ধতিতে কোরবানী দিয়ে থাকেন।
অন্যরা কোন ফার্মের সাথে আগেই যোগাযোগ করে। ঈদের দিন বা পরদিন ভোরে টরন্টো থেকে ১০০/২০০ কিমি দূরের ফার্মে যেতে হয়। সেখানে নিজের পছন্দের গরু, ভেড়া ও ছাগল ফার্মের ব্যবস্থাপনায় কোরবানী দেওয়া যায়। জবাইয়ের সময় নিজেও কলেমা উচ্চারণে শরীক হওয়া যায়। জবাইয়ের পর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আরও চার থেকে ছয় ঘন্টা লাগতে পারে। যাওয়া আসা, পশু বাছাই ও মাংস তৈরি হতে সব মিলিয়ে ন্যূনপক্ষে ৮/১০ ঘন্টা লাগতে পারে। দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার কারণে অনেক সময় পরদিন গিয়ে মাংস আনতে হয়। সুবিধা হলো, গরু বাছাই ও জবাইয়ে নিজে (অন্তত:পক্ষে কলেমা পড়ে) অংশ নেওয়ার সুযোগ এবং নিশ্চিত থাকা যায় যে নিজেদের নামে দেওয়া পশুর মাংসই হাতে পাওয়া যাচ্ছে। অসুবিধা হলো, সুদীর্ঘ সময় প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকার কারণে অন্য কিছু করা যায়না এবং বেশিরভাগ ফার্মে মাংসের টুকরোগুলো খুব বড় আকারে রেখে দেয়। পরে অনেকে নিজেরা কষ্ট করে কাটেন, অথবা পয়সার বিনিময়ে দোকান থেকে কাটিয়ে তরকারীর টুকরোর আকৃতিতে করে নেন। এই প্রক্রিয়ায় ব্যয়ও একটু বেশি। গরু ৩০০ থেকে ৩৫০ ডলার এবং ভেড়া ও ছাগল ২৩০ থেকে ২৫০ ডলার। তবে চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারিত হয় ওজনের ভিত্তিতে। ছুটির দিন অথবা ছুটি নেওয়া না থাকলে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। আমার এক আত্মীয় ও প্রতিবেশী প্রতিবছর এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে থাকেন। তাঁরা আজও গেছেন প্রায় ১০০ কিমি দূরে অরেঞ্জভিল শহরের কাছের এক ফার্মে। আমি ভাবছি আগামীতে কোরবানীর ঈদে ছুটিতে থাকলে তাদের সাথে অংশ নেওয়ার।
কোরবানীর মাংস বিতরণ অবশ্য সীমিত হয়ে পড়ে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের মাঝে। এখানে কাঁচা মাংস নেওয়ার মতো দরিদ্র মানুষ তো আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা, তাই চ্যারিটি হিসেবে সনদ নেওয়া কোন কোন মসজিদই ভরসা।
টরন্টোয় শহরকেন্দ্রে রজার্স সেন্টার এরেনায় অথবা বাঙালিপাড়া ভিক্টোরিয়া পার্ক এভিনিউ-ড্যানফোর্থ এভিনিউ এলাকায় ডেনটোনিয়া পার্কে খোলা আকাশের নিচে যেমন ঈদের নামাজের আয়োজন হয়, তেমনই প্রায় সব মসজিদে একাধিক জামাতে নামাজ হয়। মসজিদগুলো প্রধানত: দুই ভাগে বিভক্ত। সেই সাথে মহল্লার মুসলমানরাও। টরন্টো হিলাল কমিটি নামের সংগঠনের সদস্য মসজিদগুলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে আরবী মাস নির্ধারণ করেন। তাঁদের হিসেবে আজ (রোববার, ৫ অক্টোবর ২০১৪) ঈদ। আমার পাড়ার বাংলাদেশী, পাকিস্তানী ও ভারতীয় এবং বাঙালিপাড়ার প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশী মুসলমান আজ ঈদ পালন করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন ইসলামিক সোসাইটিভি অব নর্থ আমেরিকা বা ISNA অনুসরণ করে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুসারে চাঁদ দেখার সময়, আরবী মাসের তারিখ ও ধর্মীয় উৎসব। তাদের হিসেব অনুসারে ঈদ ছিল গতকাল শনিবার (৪ অক্টোবর)। সেকারণে বাঙালিপাড়ার প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশী এবং পাকিস্তান, ভারত, আফগান ও আরব দেশগুলোর বেশিরভাগ মুসলমান ঈদ উদযাপন করেছে। ঘটনাচক্রে এবার দু’টি দিনই ছিল ছুটির। উইকএন্ড। নাহলে যে গোষ্ঠীর ঈদটি ছুটির দিনে পড়তো, অংশ নেওয়ার পাল্লায় সেই দিকটি ভারী থাকতো! দক্ষিণের প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রেও পরিস্থিতি প্রায় একই।
আমার অবশ্য এখনও টরন্টোয় কোরবানী দেওয়া হয়নি। দেশে, বাবা-মায়ের সাথে দিয়ে এসেছি বরাবর। মায়ের অবর্তমানে বাবার ও বড় বোনের সাথে কুষ্টিয়ায় কোরবানী দিচ্ছি এবারে।
টরন্টোয় বেশিরভাগ মুসলমান হালাল মাংস বিক্রির দোকানের সাথে বন্দোবস্ত করে। নিজের মহল্লার অথবা পরিচিত দোকানে আগেই নাম লিখিয়ে রাখে। কোরবানীর কয়েকদিন আগে টাকা পরিশোধ করতে হয়। এবারে যেমন গরুর ভাগ ২৫০ থেকে ৩০০ ডলার। মাংস হবে প্রায় ১০০ পাউন্ড বা প্রায় ৪৫ কেজি। ভেড়া বা ছাগল প্রতিটি ২২০ থেকে ২৪০ ডলার। মাংস পাওয়া যাবে ঈদের এক বা দুই-তিনদিন পরে। সমস্যা হলো, দোকানে ফার্ম থেকে পাঠানো যে মাংস দেওয়া হবে সেটি কোরবানীর বটে তবে যে নিজের নামে কোরবানী দেওয়া গরুর হবে, নাকি অন্য গরুর হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। প্রশ্ন তুলেও লাভ নেই। দ্বিতীয়ত: দেরিতে পাওয়া। আর সুবিধা হলো টাকা দিয়ে কোরবানী দেওয়ার দায়িত্ব শেষ এবং তরকারীর জন্য ছোট আকারে কাটা মাংস পাওয়া। আমার কয়েকজন প্রতিবেশী এই পদ্ধতিতে কোরবানী দিয়ে থাকেন।
অন্যরা কোন ফার্মের সাথে আগেই যোগাযোগ করে। ঈদের দিন বা পরদিন ভোরে টরন্টো থেকে ১০০/২০০ কিমি দূরের ফার্মে যেতে হয়। সেখানে নিজের পছন্দের গরু, ভেড়া ও ছাগল ফার্মের ব্যবস্থাপনায় কোরবানী দেওয়া যায়। জবাইয়ের সময় নিজেও কলেমা উচ্চারণে শরীক হওয়া যায়। জবাইয়ের পর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আরও চার থেকে ছয় ঘন্টা লাগতে পারে। যাওয়া আসা, পশু বাছাই ও মাংস তৈরি হতে সব মিলিয়ে ন্যূনপক্ষে ৮/১০ ঘন্টা লাগতে পারে। দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার কারণে অনেক সময় পরদিন গিয়ে মাংস আনতে হয়। সুবিধা হলো, গরু বাছাই ও জবাইয়ে নিজে (অন্তত:পক্ষে কলেমা পড়ে) অংশ নেওয়ার সুযোগ এবং নিশ্চিত থাকা যায় যে নিজেদের নামে দেওয়া পশুর মাংসই হাতে পাওয়া যাচ্ছে। অসুবিধা হলো, সুদীর্ঘ সময় প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকার কারণে অন্য কিছু করা যায়না এবং বেশিরভাগ ফার্মে মাংসের টুকরোগুলো খুব বড় আকারে রেখে দেয়। পরে অনেকে নিজেরা কষ্ট করে কাটেন, অথবা পয়সার বিনিময়ে দোকান থেকে কাটিয়ে তরকারীর টুকরোর আকৃতিতে করে নেন। এই প্রক্রিয়ায় ব্যয়ও একটু বেশি। গরু ৩০০ থেকে ৩৫০ ডলার এবং ভেড়া ও ছাগল ২৩০ থেকে ২৫০ ডলার। তবে চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারিত হয় ওজনের ভিত্তিতে। ছুটির দিন অথবা ছুটি নেওয়া না থাকলে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। আমার এক আত্মীয় ও প্রতিবেশী প্রতিবছর এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে থাকেন। তাঁরা আজও গেছেন প্রায় ১০০ কিমি দূরে অরেঞ্জভিল শহরের কাছের এক ফার্মে। আমি ভাবছি আগামীতে কোরবানীর ঈদে ছুটিতে থাকলে তাদের সাথে অংশ নেওয়ার।
কোরবানীর মাংস বিতরণ অবশ্য সীমিত হয়ে পড়ে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের মাঝে। এখানে কাঁচা মাংস নেওয়ার মতো দরিদ্র মানুষ তো আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা, তাই চ্যারিটি হিসেবে সনদ নেওয়া কোন কোন মসজিদই ভরসা।
[সৈকত রুশদী: প্রবাসী সাংবাদিক]
টরন্টো,৫ অক্টোবর ২০১৪.