জনস্বাস্থ্যের স্থায়ী উন্নয়নে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের আহ্বান

জনস্বাস্থ্যের স্থায়ী উন্নয়নে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চিকিৎসা কেন্দ্রিক। ক্রমবর্ধমান রোগের জন্য জনসাধারণকে চিকিৎসা সেবা প্রদান রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমে জোরদার করার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের স্থায়ী  উন্নয়ন করা সম্ভব। রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করতে সরকারের হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করা প্রয়োজন। ১৭ মে (রবিবার) সকাল সাড়ে ৯টায় রায়েরবাজার ডাবিউবিবি ট্রাস্ট এইচআরডিসি সেন্টারে আয়োজিত বিভাগীয় কর্মশালায় নেতৃবৃন্দ এ আহবান করেন।

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইজিপি ও আইন কমিশনের সদস্য ড. এনামুল হক, পিপলস ইউনিভার্সিটির সমাজ বিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান মো. হাবিবুর রহমান, হেলথ ব্রিজ-এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন, দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট পরিচালক গাউস পিয়ারী ও ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনা করেন।
ড. এনামুল হক বলেন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি সম্ভব হবে। তামাক ব্যবহার, কায়িক পরিশ্রমের অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের অভ্যাসের কারণে এই রোগগুলো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন প্রয়োজন। পাশাপাশি আইন ও নীতি প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন, সহায়ক অবকাঠামো তৈরি, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং আচরণের পরিবর্তনে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, জাতীয় সংসদ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মৃত্যুঘাতি তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% স্বাস্থ্য কর (সারচার্জ) আরোপ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অন্যান্য ক্ষতিকর পণ্যের উপর এরূপ সারচার্জ আরোপ করা যেতে পারে। সংগৃহিত এসব অর্থ জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার জন্য “হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন” গঠন করা দরকার। এর কাজ হবে রোগ প্রতিরোধে গবেষণা, এডভোকেসি, কারিগরি পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। মূলত অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে সহযোগিতা করাই প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। বিশ্বের প্রায় ২৩টি দেশে “হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন” রয়েছে।
মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পরিবেশ দূষণ, খাদ্যে ভেজাল ও রাসায়নিক ব্যবহার, কৃষিতে অত্যাধিকার রাসায়নিক ব্যবহার, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, তামাক ও ধূমপানের ব্যবহার, ফার্ষ্টফুড, জাঙ্কফুড ব্যবহারের প্রেেিত মানুষের মাঝে বাড়ছে অসংক্রামক রোগ। নগর যাতায়াত, বাসস্থান এবং অন্যান্য অবকাঠামোর সমস্যার কারণে মানুষের মাঝে অতিরিক্ত মোটা হওয়া, বিনোদনের অভাব, অতিরিক্ত মানসিক চাপসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে মানুষের মাঝে অসংক্রামক রোগ কমিয়ে নিয়ে আসার প্রতি গুরুত্ব আরোপ প্রয়োজন। গাউস পিয়ারী বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১তে  রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয়া  হয়েছে। কিন্তু এখন স্বাস্থ্য কার্যক্রম শুধু মাত্র চিকিৎসা নির্ভর। আমাদের এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মানুষকে অসুস্থ হবার পর চিকিৎসা নয়। বরং রোগ প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে কাজ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে ভূমিকা নিতে হবে। হেলথ ব্রিজের আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করা সম্ভব না হলে দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের মতো পদক্ষেপ জোরালোভাবে রোগ প্রতিরোধে কাজ করতে সরকারের প্রচেষ্টাকে আরো শক্তিশালী করবে।
দিনব্যাপী কর্মশালার বিভিন্ন অধিবেশনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও আইন বাস্তবায়নে করণীয় এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার কর্মকর্তা সৈয়দা অনন্যা রহমান, শারমিন আক্তার রিনি ও আতিকুর রহমান। বিকালে সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিা কর্মকর্তা মাওদুদুল হাসান এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর মূখপত্র সমস্বর এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন। সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র প্রদান করা হয়। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেইনেস্ট টিউবরকুলোসিস এন্ড লাং ডিজিজ (দি ইউনিয়ন) সহযোগিতায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট আয়োজিত কর্মশালায় বরিশাল বিভাগের ৬ টি জেলার ২৮টি সংগঠনের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে।

নিজস্ব প্রতিনিধি