আজো অনুভব করি তার অশরীরি উপস্থিতি

আজো অনুভব করি তার অশরীরি উপস্থিতি

শাহানা হুদা রঞ্জনা: আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন প্রায়ই বাসে করে যাতায়াত করতে হতো। বাসে চড়তে আমার খুব একটা ভাললাগতো না। মাঝেমধ্যে পয়সা থাকলে রিকশায় চড়তাম। একদিন আব্বাকে বললাম, “আব্বা প্লিজ দোয়া কর তো, আমি ভবিষ্যতে যেন এমনটাই স্বচ্ছল হই, যে সবসময় রিকশায় চড়তে পারি। বাসে চড়তে না হয়। আব্বা বললো, ” দোয়া চাইবি যখন, বেশি করে চা । রিকশা কেন? বল মটরসাইকেলে করে যেন ঘুরতে পারি।” আমি তা্ই চাইলাম। আল্লাহ আব্বার দোয়া কবুল করেছেন। আমাকে চাওয়ার চেয়ে অনেক অনেক বেশি কিছু দিয়েছেন।


সেসময়ে আমাদের চাওয়া পাওয়াটা এমনই ছিল। খুব বেশি কিছু চাওয়ার কথা ভাবতেই পারতাম না। এমনকি আমার বাবা, একজন সিনিয়র সাংবাদিক হওয়া সত্ত্বেও খুব বেশি কিছু চাইতে পারতো না। কিন্তু আব্বা যা চাইতো, তা এখন অনেকেই চায়না বা চাইতে পারেনা। সে চাইতো সবাই যেন সুখে থাকে, আনন্দে থাকে, ভাল থাকে।


যে মানুষটি আমাকে শিখিয়েছে, “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই “, সে আমার বাবা, আলহাজ্ব শামসউল হুদা। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান এই শিক্ষাটি আমি সবসময় মনে রেখে, মেনে চলার চেষ্টা করি। আজ তাঁর চলে যাওয়ার দিন। ২৪ বছর আগে, ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে ঠিকই, কিন্তু তার ছায়াটি সরিয়ে নেয়নি। আমরা আজো অনুভব করি তার অশরীরি উপস্থিতি।


জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আমার আজকের যে দাঁড়িয়ে থাকা, আমাদের পুরো পরিবারের যে বেঁচে থাকা, তা সম্ভব হয়েছে আব্বার জন্যই। আব্বা আমাদের জীবনের ছায়া শক্তি। আব্বা চলে যাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত, প্রায় দুই যুগ ধরে যতো মানুষের ভালবাসা ও সহযোগিতা পেয়েছি, তাদের অনেকেই শুধুমাত্র আব্বার কারণে আমাদের পাশে থেকে সাহস ও ভালবাসা যুগিয়েছেন। এই মানুষগুলো আব্বাকে ভুলতে পারেন নাই বলে, তার সন্তান হিসেবে আমাদের পাশে থেকেছেন এবং আছেন। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।


আব্বা আমাদের শিখিযেছে মানুষের ভালবাসা খুব মূল্যবান জিনিষ, তা পেতে চাইলে আগে মানুষকে ভালবাসতে হবে। আর কীভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয়, কীভাবে দু:খ-কষ্টকে জয় করতে হয়, সৎ থেকে বাঁচা যায়, সেটাও আমি তাকে দেখেই শিখেছি। এই কঠিন সংসারে আব্বা যখন আমাদের ছেড়ে চলে যান, তখন আমাদের প্রত্যক্ষ সম্বল আব্বার একাউন্টে থাকা ২৩ হাজার টাকা। কিন্তু জীবনতো থেমে থাকেনি। শুধু দুঃখ একটাই আব্বা আমার মেয়ে অনসূয়াকে দেখে যেতে পারেনি।

[শাহানা হুদা রঞ্জনা: মানবাধিকার কর্মী।।]

অতিথি লেখক