রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ঢেলে সাজানো হয়েছে

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ঢেলে সাজানো হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ স্বাধীনতা দিবসে নাশকতা ও অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কায় রাজধানী ঢাকায় নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ মোড়, আদালতপাড়া, সচিবালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, দূতাবাস, হাইকমিশন, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, বিমানবন্দর, পাঁচতারা হোটেল, স্টেশন, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিশেষ স্থানে পোশাক পরিহিত অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নাশকতা বা আগাম তথ্য পেতে এলাকা ও অলিগলিতে সাদা পোশাকে সার্বক্ষণিক ওয়াচ করছেন গোয়েন্দারা। যেসব এলাকায় দিবসকে সামনে রেখে অতিরিক্ত লোক সমাগম হবে সেখানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেছেন, এ সময় যুদ্ধাপরাধীরা বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে সুযোগ নিতে পারে। এ কারণে বিশৃঙ্খলা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত তথা স্বভাবিক জীবনে যেন কোনোভাবেই ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ঢেলে সাজানো হয়েছে। মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, দিবসটি সামনে রেখে দেশের নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় কিছু করার জন্য একটি মহল সব সময় ফাঁদ পেতে থাকে। তাদের পরিকল্পনা একটিই তা হলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ জন্য পুলিশের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। অবশ্য আগে তারা সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও পরামর্শ নেন। চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য এবং জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি নিরাপত্তা গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে। পল্টন মোড়, নয়া পল্টন, গুলিস্তান, মিরপুর, ফার্মগেট, পুরান ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর ৪১ থানা এলাকার দুই শতাধিক স্থান বা স্পটকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব স্থানে পোশাক পরিহিত পুলিশকে রাখা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে জলকামান, কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান-মোড়ে বসানো হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট। স্থানবিশেষে বসানো হয়েছে গোপন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। সবগুলো ক্যামেরা আবার মনিটরিং করছে একটি গোয়েন্দা দল। ক্যামেরার মাধ্যমে কেউ সঙ্গে করে অবৈধ কিছু আনছে কি না তার তদারকি করা হচ্ছে। এসব এলাকায় মোতায়েন করা পুলিশের সঙ্গে টহলও সার্বক্ষণিক রাখা হয়েছে। গ্রুপ করে পুলিশকে দেয়া হয়েছে দায়িত্ব। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালীসহ সবগুলো বাস টার্মিনালকেও নেওয়া হয়েছে। স্পর্শকাতর স্থানের উঁচু ভবনের ছাদে র‌্যাব সদস্যরা ক্যামেরা নিয়ে লোকজনের গতিবিধি দেখভাল করছেন। মন্ত্রী-এমপিদের বাসা, ধানম-ি, গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ কূটনীতিকপাড়া, বিদেশি হাইকমিশন-দূতাবাস এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিন মতিঝিল, গুলিস্তান, সেগুনবাগিচা, আরামবাগ, গুলশান, হাইকোর্টসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার এমনিতে ছুটি থাকায় রাস্তায় ফাঁকা থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে যেন ঝিমিয়ে পড়ে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সতর্ক অবস্থায় ছিলেন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। ঘোরাফেরা করছিলেন গোয়েন্দারাও। ছোট ছোট পুলিশি চেকপোস্টও চোখে পড়ে। সন্দেহভাজন লোকজনের দেহতল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে এক থেকে একাধিক পুলিশ সদস্য তল্লাশি করছে।
অপর একটি সূত্র বলছে, এ দিনে জামায়াতের সঙ্গে এ দেশের নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বা জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীসহ (হুজি) আরো কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে রয়েছে দহরম-মহরম। জঙ্গিদের দিয়ে যে কোনো ধরনের হামলা বা নাশকতা করার জন্য তাদের সঙ্গে গোপনে অাঁতাতও করতে পারে তারা।
এদিকে পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানায়, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে প্রথমে ধরা হয়েছে রাজধানী ঢাকাকে। সবাইকে এসব বিষয় অবহিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে, যা দেশের প্রতিটি জেলায় করা হয়েছে। প্রতিদিন কোন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা জেলার এসপিরা এবং মহানগরী এলাকার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে জানাচ্ছে। এগুলো আগে কখনোই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিরাপত্তা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।

বিশেষ প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।