বন্ধ হয়ে গেলো জিএমজি এয়ারলাইন্স!
রুপম হালদার,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ শেয়ারবাজার থেকে তুলে নেয়া ৩০০ কোটি টাকা কিভাবে ফেরত দেয়া হবে তা নিয়ে মুখ খুলছে না জিএমজি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। ৩০ মার্চ (শুক্রবার) জিএমজি এয়ারলাইন্সের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ফেরত দেয়া হয়নি কয়েক হাজার গ্রাহকের কষ্টার্জিত ৩০০ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষও। এদিকে জিএমজি এয়ারলাইন্স আকস্মিক বন্ধ হওয়ার নেপথ্যে বেক্সিমকোকে দায়ী করছে প্রতিষ্ঠানটির নিবেদিতকর্মীরা। তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জিএমজি তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের সমস্যার কবলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে আকস্মিকভাবে দুই মাসের বেতন-ভাতা না দিয়ে বুধবার বন্ধ ঘোষণা করায় বেসরকারি মালিকানাধীন এই এয়ারলাইন্সটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম হতাশায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বকেয়া বেতন কবে নাগাদ পাবেন তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী দাবি করেছেন, লেবার আইন অনুযায়ী সবার বেতন-ভাতা পরিশোধ করবেন।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে জিএমজির সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপ। তখন জিএমজির শেয়ার বাজারে ছাড়তে রোড শো করে প্রতিষ্ঠানটি। শেয়ার বাজারে না এলেও প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলনের পরও জিএমজি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর কষ্টার্জিত বিনিয়োগ এখন মারাত্মক ঝুঁকির কবলে। বুধবার জিএমজি কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ রাখার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম একেবারে গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে না। উড়োজাহাজের কারিগরি পর্যবেক্ষণের জন্য অনির্দিষ্টকাল সব ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখা হচ্ছে। উড়োজাহাজগুলো উড্ডয়নের উপযোগী হলেই পুনরায় চালু হবে। কিন্তু কবে নাগাদ তারা ফের বাজারে আসবে তা চরম অনিশ্চিত।
জিএমজি সূত্র জানায়, জিএমজি ঢাকা থেকে কলকাতা, জেদ্দা, দুবাই, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও রিয়াদ মিলে মোট ছয়টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করত। এর মধ্যে কলকাতা ছাড়া বাকি পাঁচটি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা গত বছরই বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটও বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে জিএমজি শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম-কলকাতা এবং ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল জিএমজি যাত্রা শুরু করে। ২০০৪ সালের ৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে ফ্লাইট চালু করে আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু করে জিএমজি। ২০০৯ সালে জিএমজির সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপ। এরপর জিএমজির শেয়ার ছাড়তে রোড শোর আয়োজন করে তারা। প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য কোম্পানির প্রসপেকটাস এসইসির কাছে দাখিল করে। জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে এ কাজে নিয়োগ দেয় বেক্সিমকো। জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। শেয়ারবাজার নিয়ে জিএমজির জালিয়াতি রিপোর্ট ফাঁস করে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ হুমকির শিকার হন। কিন্তু তারপরও তিনি জিএমজির শেয়ার ছাড়া সংক্রান্ত নানা অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরেন তার রিপোর্টে।