ঘরের দোরগোড়ায় বৈশাখ ঘরে নাই ইলিশের স্বাদ
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কম: পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের এবং বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব। এটি আমাদের প্রাণের উৎসব, বাংলাদেশের মানুষের স্বকীয়তার উৎসব। সেই পহেলা বৈশাখ আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। আর কয়েকটি দিন পার হলেই আমাদের মাঝে হাজির হবে সবারই প্রাণের পরব পহেলা বৈশাখ। প্রতিবারের মতো এবারের নববর্ষকে বরণ করার জন্য প্রস্তুত সারাদেশ। বৈশাখকে বরণ করে নিতে জোর প্রস্তুতি চলছে নগরজুড়ে।
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির পহেলা বৈশাখ উদযাপন করার রীতিতেও লেগেছে বিভিন্ন পরিবর্তনের ছোঁয়া। অনেক ঐতিহ্য কালের গর্বে বিলীন হতে যাচ্ছে, আবার সংযুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন রীতির। সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে রমনার বটমূলে ‘এসো হে বৈশাখ’ উচ্চারণে যোগ হতো নতুন মাত্রা। কিন্তু এখন গান-বাজনার পাশাপাশি রঙবেরঙের পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে পান্তা-ইলিশ পেটে পুরে গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।
অতীত বছরের দুঃখ-গ্লানিকে ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় সবাই। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ এপ্রিল অথবা ১৫ এপ্রিল নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ হিসাবে চালিত হয়। তবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল নববর্ষের উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমীর আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে নববর্ষ পালনের জন্য ১৪ এপ্রিলকে নির্দিষ্ট করা হয়।
মুঘল বাদশা আকবর-এর শাসনামলে কৃষিকাজ ও কৃষকদের খাজনা প্রদানের সুবিধার্থে ভারতীয় স্যোলার ক্যালিন্ড্যার বা সৈার-পঞ্জিকা ও হিজরি লূনার ক্যালিন্ড্যার বা চান্দ্র-পঞ্জিকার ওপর ভিত্তি করে বাদশা আকবর-এর নির্দেশে ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ফাতেউল্লাহ শিরাজি বাংলা পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন যেটা বঙ্গাব্দ বা বাংলা অধিবর্ষ হিসাবে পরিচিতি পায়। পহেলা বৈশাখের উদ্যাপন আকবরের আমল থেকেই শুরু হয়।
আর কয়েকদিন পরেই পহেলা বৈশাখ। ভোজনরসিক বাঙালির এই দিনের একটি বিশেষ খাবার পান্তা ভাত। কিন্তু পহেলা বৈশাখের প্রায় সপ্তাহ খানেক আগ থেকেই পান্তার আকর্ষণীয় উপকরণ ইলিশ মাছের দাম বাজারে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এখানেই শেষ নয়। দাম আরও বাড়বে। কত বাড়বে? তা কেউ বলতে পারেননি। তবে এরই মধ্যে যেহারে দাম বেড়েছে তাও রীতিমতো সাধারণ মানুষের ক্রয় মতার বাইরে চলে গেছে। অনেকে আগেভাগে পান্তার ইলিশ কিনে রাখতে বাজারে গিয়েছিলেন। কিন্তু দামের কথা শুনে অনেকেই ফিরেছেন নাখোশ মনে। শখের ইলিশ আর কেনা হয়নি। গতকাল রাজধানীর নয়া বাজার থেকে মাছ কিনে ফিরছিলেন আরিফ হোসেন এক ব্যবসায়ী। ‘ভাবছিলাম, বড় দেখে কিনবো।
দামের কারণে ছোট্ট আকারের একটি ইলিশ কিনতে বাধ্য হলাম।’ মন্তব্য করলেন এভাবে। বললেন, একদিনের উৎসবের জন্য, না হলে হয়তো এই দামে মাছ কেনার সাহস করতাম? বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশের দামে আগুনের উত্তাপ কেমন। শুধু রাজধানী ঢাকা শহরই না, দেশের বিভিন্ন স্থানেও দাম বেড়েছে অকল্পনীয়। খোদ ইলিশের এলাকা চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলায়ও দাম আকাশচুম্বী।
ঢাকার বৃহৎ মাছের আড়তগুলোতে দেখা গেছে দামে ধরনভেদে পার্থক্য অনেক। কেজিতেই ছোট ও বড় মাপের ইলিশের দামে ৫ থেকে ৮শ’ টাকা তফাত। তবে কোনটির কেজিই এখন আর ৭শ’ টাকার নিচে নেই। রাজধানীর ‘মিনাবাজর’-এ প্রতিকেজি ছোট ও মাঝারি আকারের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা। বড় মাপের ১০৬২ টাকা। মগবাজারের ‘আগুরা’য় ইলিশের দাম আরও বেশি। সেখানে প্রতিকেজি ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭৯৫টাকা। মাঝারি আকারের ১২৫০ টাকা এবং বড় আকারের ইলিশ ১৪৫০ টাকা। খরচ বাঁচাতে কম দামের পুকুরে চাষ করা পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ ছিল অনেকের ভরসা। কয়েক মাস আগেও পাঙ্গাস ৭০-৮০ টাকা ও তেলাপিয়া ১০০ টাকায় কেনা যেত। শুক্রবার পাঙ্গাস ১২০-১৪০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৪০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।