রসহস্যের আবডালে সিলেটের সোনালী সেনের মৃত্যু
সুমন দে, সিলেট প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর দিগেন্দ্র বর্মণ কলেজের ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষার্থী সোনালী সেনের বিয়ে হয়েছিল জকিগঞ্জের কসকনকপুর (উত্তর) গ্রামের দীনেশ কুমার দাস ওরফে দুর্জয়ের সঙ্গে। বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় গত ৩১ মার্চ সোনালী মারা গেছেন বলে স্বামীর পরিবার থেকে জানানো হয়। খবর পেয়ে ওই দিন সোনালীর বাবা সুধীর দাশসহ পরিবারের সদস্যরা মরদেহ দেখেন। সোনালীর গলায় একটি ক্ষত চিহ্ন দেখে তাঁরা গোপনে মুঠোফোনে ছবি তুলে রাখেন।
সিলেটের জকিগঞ্জের কসকনকপুর গ্রামে বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় মারা যাওয়া স্নাতকের শিক্ষার্থী সোনালী সেনের (২২) গলায় ক্ষত চিহ্ন নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ঘটনার প্রায় এক মাস পর গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সোনালীর গলায় ক্ষত চিহ্ন দেখেছেন-এমন প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। তাঁরা মহিলা পরিষদের ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যদের জানিয়েছেন-গলার ওই ক্ষত চিহ্ন অনেকটা গাঢ় ছিল।
সোনালীর মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হলে ৮ এপ্রিল সুধীর দাশ জকিগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। আদালত জকিগঞ্জ থানাকে তদমত্ম করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনার তদমত্ম শুরু করে। ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নারী নির্যাতন সেলে সোনালীর বাবা যৌতুক দাবি করে না পেয়ে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে গত ২২ এপ্রিল একটি অভিযোগ দেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য গৌরী ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল গতকাল সকালে কসকনকপুর পরিদর্শন করে।
মহিলা পরিষদ সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রীনা কর্মকার ও জকিগঞ্জ থানায় মামলার তদমত্মকারী পুলিশ কর্মকর্তাও পরিদর্শনকারী দলের সঙ্গে ছিলেন। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সোনালী সেনের স্বামীর পরিবার, প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিদর্শনকারী দল একামেত্ম আলাপ করেন। সোনালীকে দাহ করার পূর্বে গলার ক্ষত চিহ্ন দেখেছেন-এমন লোকজনের বক্তব্য সংগ্রহ করে পরে এ বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে ফেরেন।
পরিদর্শন শেষে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য গৌরী ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘গলার ক্ষত চিহ্ন দেখেছেন-এমন লোকজনের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাঁরা সবাই বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছেন। কিন্তু এ সন্দেহ সত্ত্বেও সোনালীর স্বামীর বাড়ির লোকজন কেন মরদেহের ময়না তদন্ত করল না-এ নিয়ে আমাদেরও সন্দেহ হচ্ছে। বিষয়টি লিখিতভাবে পুলিশকে জানানো হবে।’
মহিলা পরিষদের পরিদর্শন সম্পর্কে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জকিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে সোনালীর স্বামীর বাড়ির লোকজন ওই ক্ষত চিহ্ন অসুস্থ্যতাজনিত বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে এখন চিকিৎসকের ব্যাখ্যা নিয়ে তদন্ত করা হবে। সোনালী সেনের পরিবার সূত্র জানায়, জকিগঞ্জের কসকনকপুর (উত্তর) গ্রামের দীনেশ কুমার দাস ওরফে দুর্জয়ের সঙ্গে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগগাঁওয়ের সুধীর দাশের মেয়ে সোনালী সেনের প্রায় পাঁচ মাস পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সোনালী বিশ্বম্ভরপুর দিগেন্দ্র বর্মণ কলেজের ডিগ্রি পরীক্ষার্থী ছিলেন। বিয়ের পর দুটো ফাইনাল পরীক্ষা তিনি দিয়েছেন। পরীক্ষার জন্য দুই দফা বাবার বাড়িতে যাতায়াত নিয়ে স্বামীর পরিবারের সঙ্গে সোনালীর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এক পর্যায়ে তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি সোনালীকে নির্যাতন করা হয়। এ নির্যাতনেই সোনালী সেন গত ৩১ মার্চ মারা যান।
সোনালীর বাবা সুধীর দাশ জানান, ৩১ মার্চ সকালবেলা দুর্জয় তাঁদের মুঠোফোনে সোনালী হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে শয্যাশায়ী আছে বলে জানান। খবর পেয়ে ওই দিন বিকেলে তাঁরা কসকনপুর গিয়ে দেখেন সোনালী মারা গেছেন। তাঁকে দাহ করার প্রস্ত্ততি নেওয়া হয়েছে। এ সময় মরদেহ দেখতে গিয়ে সোনালীর গলায় কালচে আচড়ের দাগ দেখতে পান। মুঠোফোনে গলার ছবি ধারণ করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করে সোনালী নির্যাতনে মৃত্যুর বিষয়টি তাঁরা নিশ্চিত হন।
সুধীর জানান, এ নিয়ে দুর্জয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে এক ধরনের নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির মুখে তাঁরা পড়েন। শেষে এক সপ্তাহ পর গত ৮ এপ্রিল জকিগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তিনি নিজে বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তাৎক্ষনিক নথিভুক্ত করে আদালত তদন্তের জন্য জকিগঞ্জ থানার (স্মারক নম্বর ১০৬) পুলিশকে নির্দেশ দেন।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল হাই আদালতের নির্দেশনায় ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে বলেন, ‘লাশ দাহ করায় স্বাভাবিকভাবে ঘটনার তদন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পুলিশ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটনাটি তদন্ত করছে।’