অস্থির বাজারঃ রোজায় কি হবে?
মীর আব্দুল আলীমঃ রমজান মাস আগত। আর তাতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম। এটি দ্রব্য মুল্য বাড়ারই মৌসুম । তবে এবার দাম বাড়ার ধরনটা একটু বেশী উর্দ্বমূখী। ঈদ আর রোজা মানেই পণ্য মুল্যের দাম বেড়ে যাওয়া। দীর্ঘ দিন ধরে এটাই চলে আসছে এদেশে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রোজা শুরম্ন না হতেই দ্রব্য মুল্যেও লাগামহীন পাগলা ঘোড়াটা ছুটছে তো ছুটছেই । এরই মধ্যে অস্থিও হয়ে উঠেছে বাজার। বাড়তি মুনাফার প্রস্ত্ততি শুরম্ন করে দিয়েছে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা। রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরম্ন করে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীরা হম্বিতম্বি করেন। ততে যে খুব একটা কজ হয় তা কোন বছরই চেখে পড়েনি। প্রযোজনীয় পন্যেও দাম যে পরিমান বাড়ানো দরকার ততটা বাড়িয়েই ছাড়ে মজুদদাররা। এবারও বাড়াচ্ছে। আগেভাগেই বাড়ানো হয়েছে হয়েছে দাম। তাই বাজারে কোন সুখবর নেই। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, আলু, খেজুর, মাছ, মাংস, মসলা, কাঁচামরিচ, শাকসবজি, ফলমুলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। সংযম নয় এ যেন ব্যবসায়ীদের বেশি আয়ের মহা উৎসব। যদিও সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। খোদ প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন । মজুদদার; মুনাফা খোরদের কারনে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়াটিকে বর্তমান সরকার সামাল দিতে পারবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ অবশেষে সত্যি হলো। দ্রব্যমূল্যেও দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। বিগত সরকারেরও কেউই তা রোধ করতে পারেনি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্বাবধায়ক সরকারও ছিল এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থ। হুমকী ধমকীতে সব জায়গায় তারা পারঙ্গম হলেও বাজার নিয়ন্ত্রনে তারা তেমন ভহমিকা রাখতে পারেনি। তখনও রোজায় নিয়ন্ত্রন করা যায়নি বাজার। মোদ্দা কথা হলো রোজা শুরম্ন হলে যা হবার তাই হয়। আর এ পরিস্থিতি অনেকটা গাঁ সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। পণ্যের দাম এতটাইি বাড়ে যে গায়ে সহয় কিন্তু পেটে সয়না। যাদের কাড়ি কাড়ি টাকা আছে তাদের সয়ে যায় সবই। আর যারা ন্নির্ম আয়ের মানুষ তাদেরই যত জ্বালা। তাদের পকেটের অবস্থা অনুসারে কম পণ্য কিনেই বাড়ি ফিরতে হয়। বাচ্চা-কাচ্চ নিয়ে ভূখা থাকতে হয় ২/১ বেলা। তখন কি আর পেটে সয় বলুন। এবার কিন্তু সিয়াম সাধনার এ মাসটি শুরম্ন হওয়ার আগেই প্রায় সকল দ্রব্যসমূহের মূল্য বেড়তে শুরম্ন করেছে। এবার মনে হচ্ছে একটু আগে ভাগেই বাড়ছে ভোগ্য পণ্যেও দাম। এতে নাভিশ্বাষ উঠেছে কারো কারো। হাই প্রেসারের রোগিদের দিন দিন প্রেসার বাড়তে শুরম্ন করেছে । ভোক্তাদের এমন অবস্থা বাজারের বর্তমান হাওয়া দেখেই। এমনটি হওয়া একেবারে অমূলক নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় হেন পণ্য নেই যে, গায়ে মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ নেই- তফাৎটা শুধু ডিগ্রির, কোনোটার বেশি কোনোটার কম। নতুন বাজেটের পরও পণ্যবাজারে তার বিরূপ প্রভাব পড়েনি- সরকারি মহল স্বসিত্মর নিশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু মাস পার না হতেই রমজানের আগমনী বার্তায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ লাগছে। রমজান উপলক্ষে কতক বিশেষ পণ্যের চাহিদা দাঁড়িয়ে যায় বেশি। ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, নানা রকম গরম মশলার চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বাড়ে মাছ, মাংস, দুধের। আর ব্যবসায়ী-মজুদদাররা ধরেই নেয়, মুনাফায় পকেট ভারি করার মওকাই হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। রমজানে দুটো পয়সা কামিয়ে নিতে এরা কোমর বেঁধে প্রস্ত্ততি নেয় পূর্বাহ্নেই। মজুদ গড়ে তোলে, দফায় দফায় মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ে। এবার আগেভগেই শুরম্ন হয়েছে দাম বাড়ার কাজটা।
এ অবস্থায় মূল্যসীতিও ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এপ্রিলে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখানো হয়েছে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যসীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। রিপোর্টে এপ্রিলে খাদ্যে মূল্যসীতি রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৩৭। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষ এখন মূলসীতির ফাঁদে পড়েছেন। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছেন, রোজার মাসে খাদ্যে মূল্যসীতি আরও বাড়বে। আর এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে মূল্যসীতি। পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, গত মার্চেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যসীতি বিপজ্জনক মাত্রা অতিক্রম করেছে। এপ্রিল মেতে এসে তা আরও বাড়ল। সরকারি হিসাবে গত মাচের্ঞ্চ খাদ্যে মূল্যসীতির হার ছিল ১৩ দশমিক ৮৭ ভাগ, যা আরেক দফা বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ৩৭। গত জানুয়ারি থেকে এ হার বাড়ছেই। জানুয়ারিতে মূল্যসীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয় ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। খাদ্যে মূল্যসীতির হার গ্রামাঞ্চলে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্যে মূল্যসীতি বাড়ার কারণে সার্বিক মূল্যসীতির হারও বেড়ে গেছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, মূল্যসীতির এ হার বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকি অতিক্রম করেছে, যা গরিব এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। খরচের হিসাব মেলাতে গিয়ে পণ্যের পরিমাণে কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের।
পণ্য মূল্য নিয়ে আর কোন দিন লেখব না এমনটিই ভাবছিলাম । লিখে কিই বা লাভ । আমার লেখায় কি বাজারে দ্রব্যের উত্তাপ এতটুকুও কমবে। কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে কি সীমিত আয়ের এদেশের অসহায় মানুষদের। আর যদি তাই না হয় তাহলে লিখব কেন ? জানি লিখে লাভ নেই। লিখে কষ্ট বাড়ানো পাঠকের। এত বড় লেখা পড়তেওতো এনাজি নষ্ট হয়। মূল্যহীন লেখা তবুও লিখছি। যদি কোন মুনাফাখোর, মজুতদার আমার লেখাটা পড়েন তাদের জ্ঞতার্থে বলছি। নানা ছলচাতুরিতে টাকার পাহাড়তো গড়েছেন। আর কত টাকা চাই আপনাদের ? একজন মানুষের জীবনে কত টাকার প্রয়োজন হয় ? দামী গাড়ী হাকান; নানা জায়গায় আলীসান বাড়ি আছে; আছে কারো কারো ভোগ বিলাশের বাগান বাড়িও । আর খাবার ? যখন যা চাইছেন তাইতো মিলছে। বাঘের চোখওতো চাইলে পান আপনারা। এবার অন্তত সিয়াম সাধনার মাসে এদেশের অসহায় মানুষ গুলোর কথা ভাবুন। রোজার আগেই নির্ন্ম আয়ের মানুষ গুলো আপনাদের চাপিয়ে দেয়া যথেচ্ছ দাম দিয়ে খাবার কিনতে পারছে না। ওরা ২ বেলা পেট পুরে খেতে পাছে না। রোগে শোকে মরছে ওরা। আপনারা কি নিজের সন্তান না খেয়ে কাতড়াতে দৃশ্য দেখেছেন কখনো ? ঐ মানুষ গুলো প্রতি নিয়তই তা দেখছে। ওদের অভ্যাসগত দেখা এটি। ক’টা টাকার অভাবে ওরা সন্তানের মৃত্যুটাও চেয়ে চেয়ে দেখে নেয়। বাজারে নতুন বাজেটের প্রভাবেও বেড়েছে পণ্যের দাম। বাজেট সামনে রেখে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের প্রবণতা থাকে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়ার। বাজেটে আদৌ দাম বাড়ানো হলো কিনা বা কী হারে বাড়ানো হলো, সেসব বিচার-বিবেচনা ছাড়াই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন তারা। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। সব মিলিয়ে সীমিত আয়ের পরিবারে নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের কার্যকর ভূমিকাও অপ্রতুল। সঙ্গত কারণে সাধারণ মানুষের হতাশা ও দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছেই। বাজেট ঘোষণার পর থেকে অহেতুক অস্থির হয়ে পড়ে ভোজ্যতেলের বাজার। আমদানির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করা না হলেও আমদানি করা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ান ব্যবসায়ীরা। রমজানকে সামনে রেখে দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকটও সৃষ্টি করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। অতীতেও দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব ব্যবসায়ীদের পুরোনো কৌশল। এগুলো যে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে অজানা- তাও না। কাজেই সরকারের সংশিস্নষ্ট কর্তৃপÿ শক্ত হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কেন সম্ভব নয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ীর জন্য জনসাধারণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠবে তা হতে পারে না। অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। সর্বোপরি বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশিস্নষ্ট কর্তর্ৃপÿÿর কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ সকলের প্রত্যাশিত। বাজার সংশিস্নষ্টরা মনে করছেন, সরকার ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছে ব্যবসায়ীদের ওপর- এরই বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারের ওপর। বাজার সংশিস্নষ্টদের অভিমত, পরিবেশক প্রথা চালুর আগেই ব্যবসায়ীরা একদফা বাড়িয়েছেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ওপর মূল্য নির্ধারণের যে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার তারও সুযোগ নিচ্ছেন তারা। ব্যবসায়ীদের বাড়াবাড়ির কথা কে না জানে। সরকার গত বছর ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মানেননি। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বৈঠকে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করে বলেছেন, অমত্মত ভোজ্যতেল ও চিনির ÿÿত্রে এবার ‘নো লস, নো প্রফিট’ নীতি গ্রহণ করতে। ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিশ্রম্নতিও দিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেই প্রতিশ্রম্নতি রাখছেন না। সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মানেন না, আবার তাদের ওপর দায়িত্ব দিলেও তারা ইচ্ছেমতো পণ্যমূল্য বাড়ান- ব্যবসায়ীদের এমন বাড়াবাড়ি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে ব্যবসায়ীদের একথা মনে রাখা দরকার যে, তারাও এই সমাজেই বসবাস করেন। এমন স্বেচ্ছাচারী মনোভাব যে কারো জন্যই ইতিবাচক কিছু নিয়ে আসবে না তা সহজেই বলা যায়।
সত্যিই এখন বড় কঠিন সময় পার করছে দেশের অধিকাংশ মানুষ। পকেটে যে টাকা, মাস শেষে যে মাইনে কিংবা আয় হয় তা দিয়ে চাল, তেল, নুন-মরিচ, হলুদ সবজি কিনতেই সব পয়সা শেষ। আমিষের প্রয়োজন মেটাতে মাছ কিংবা মাংস, সকালের নাস্তার বাজেট, সন্তান এবং নিজেদের ওষুধের টাকা কই? ঘর ভাড়া, রান্নার জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানির বিল? এ কোত্থেকে? বাজারে আসি, গিন্নির দেয়া প্রয়োজনীয় সামগ্রী কাটছাঁট করতে করতে অর্ধেকে নেমে আসে। কোনোমতে ‘বাজার গরম’, কিংবা ‘বাজারে আগুন’ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঘরে গিয়ে বাজারের ব্যাগ দিলে গিন্নির চিৎকার, এটা আননি কেন, ওটা কই, এটা ছাড়া কি চলে, মসুর ডাল কই? নিত্যপণ্যের মূল্য আকাশচুম্বি হলেও বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে টিসিবি। একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকারি এ সংস্থাটি। টিসিবিকে অকার্যকর করে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রন করছে চক্রটি। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি টিসিবিকে উদ্ধারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও নীরব ভূমিকা পালন করছে । চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোট দুই লাখ পাঁচ হাজার টন চিনি সরবরাহের চুক্তি করেও তা সরবরাহ করেনি। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৪২ হাজার ৮০০ টন সয়াবিন সরবরাহের চুক্তি করে এক ফোঁটা তেলও দেয়নি সাতটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। চলতি অর্থবছরে চারটি প্রতিষ্ঠান ১৮ হাজার ৮০০ টন সয়াবিন তেল সরবরাহের চুক্তি করেও তা রক্ষা করেনি। আর ২০১০ সালের জুনে এবং চলতি বছরের মে মাসে দুটি প্রতিষ্ঠান ১১ হাজার ৬০০ টন পামঅয়েল সরবরাহের চুক্তি করলেও তা সরবরাহ করেনি। পণ্য সরবরাহে চুক্তি সম্পাদনকারী ব্যবসায়ীদের পণ্যের মোট দরের ৫ শতাংশ অর্থ জামানত বাবদ টিসিবির কাছে জমা দিতে হয়। সরবরাহের পর দামের সঙ্গে হিসাব করে নেয়া হয় ওই অর্থ। পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে ওই অর্থ ফেরত দেয়া হয় না। গত বছর জামানত অর্থ বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা পেয়েছে টিসিবি।
ফিরে যাই বাজার অর্থনিতিতে। বাজার বিশ্লেষকরা আগে থেকেই সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে দ্রব্যমূল্য ব্যাপারে। তবুও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাড়ছে উদ্বেগজনক এবং নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে প্রতিদিন। বিশেষত বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের তাবৎ হুমকি-ধামকি, অনুরোধ-উপরোধ, আবেদন-মিনতি সব কিছুকে প্রত্যাখ্যান করে- সকল কিছুর প্রতি স্রেফ বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলেছে মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের হোতারা। এর ফলে দেশের কোটি কোটি ভোক্তা দরিদ্র জনসাধারণ হয়েছেন মারাত্মক ক্ষতির শিকার- তাদের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়- জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে যন্ত্রণাবিদ্ধ। অপরপক্ষে ঐ সিন্ডিকেট মাতববররা এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার অসৎ ব্যবসায়ীদের হয়েছে পোয়াবারো।মন্ত্রী মহোদয়ের ছোড়া হুংকারকে দিব্যি ধিক্কার দিয়ে চলেছে ব্যবসায়ী সমাজের নিয়ন্ত্রক অসৎ বৃহৎ ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী। এভাবেই দিন চলে যাচ্ছে। দরিদ্রজনেরা ঠিকই আহাজারি করে মরছেন আর পকেট দিন কে দিন স্ফীত হয়ে চলেছে অসৎ ব্যবসায়ীদের। এ এক করম্নণ ইতিহাস- বেদনাদায়ক ইতিহাস। এর পরিত্রান ঘটা দরকার। দ্রব্য মূল্যের নিয়ন্ত্রন সরকারকে নিতেই হবে। এ জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে বিরোধীদল গুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে । তা না হলে এদেশের সাধারন মানুষগুলে ঠকবে প্রতি পদে পদে। মুনাফা খোররা গড়বে টাকার পাহাড়। এটা চলতে দেয়া যায় না। কোন সভ্য সমাজ; জাতিতে তা চলতে পারে না। দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রতনে এখনই ওদের রম্নখতে হবে। সরকার, জনগন দলমত নির্বিশেষে ওদের উপর দুর্বার গতিতে ঝাপিয়ে পরতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রনে এর আর বিকল্প আছে বলে আমি মনে করি না। মানুষকে জিম্মি করে অধিক মুনাফা লাভের এই খেলা কোন সরকারই বন্ধ করতে পারে না- এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। সরকারের সৎ ইচ্ছা থাকলে এই খেলা বন্ধ করা অবশ্যই সম্ভব, কিন্তু এই সম্ভবকে অসম্ভবের হাত থেকে বাঁচাতে সরকারকে অবশ্যই হার্ড লাইনে চলে যেতে হবে। প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে সেই সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের সকল বিবেকহীন আয়োজন সম্পূর্ণ করেছে। মনে রাখতে হবে সারদিন রোজা রেখে পবিত্র সেহরির সময় সামান্য আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে আর ইফতারির সময় পানি নিয়ে বসে তত্বাবধায়ক ও জোট সরকারের মতো এই সরকারও জনগনের বদদোয়া কামিয়ে নিবে বলেই মনে হচ্ছে।
অর্থনীতিতে একটা কথা আছে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন যতো কম হবে পণ্যের দাম বাজারে ততো বেশি হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্বাবধায়ক সরকার ও চারদলীয় জোট সরকার এবং বর্তমান ক্ষমতাসিন সরকারের সময় দেখেছি, যতোবার পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, ততোবার বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা সরকারকে বারবার আশ্বাস দিচ্ছে, রোজার মধ্যে পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। না থাকার কারণ হলো, ব্যবসায়ীরা সরকারকে চটাতে চান না। সে জন্য সরকারকে আশ্বাস দেন, আর ব্যবসার ক্ষেত্রে যে যার মতো করে মুনাফা অর্জন কার পলেসি গ্রহণ করে। কেননা, সরকার কোন দলের হলো সেটি দেখার বিষয় নয়। ব্যবসায়ীরা মুনাফা করবে সেটিই হলো বাস্তবতা। এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা জোট সরকারকে জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে সেই সিন্ডিকেট বর্তমান সরকারকেও বেকায়দায় ফেলার প্রচেষ্টা করছে বলে আমার ধারণা। সরকারের কাছে যে কথা বলতে চাই তা হলো সীমাহীন দীর্ঘসূত্রতা, স্থবিরতা এবং এক ধরনের আত্মতৃপ্তিমূলক মনোভাবের ফলেই বাজার এমন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। তাই দ্রুত প্রচুর পরিমাণে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ডিম, পেঁয়াজ আমাদিন করা হোক এবং সেগুলো প্রশাসনের মাধ্যমে সর্বদলীয় কমিটির পরামর্শ ও সুপারভিশনে সুলভমূল্যে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হোক। এই কার্যক্রমের পাশাপাশি টিসিবিকে শক্তিশালী করা হোক এবং তার কার্যকর নেটওয়ার্ক জেলা উপজেলা ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত করা হোক। জনগণকে রেশন কার্ড সরবরাহ করে রেশনিং প্রথাও চালু করা হোক। এই ব্যবস্থাগুলো যদি অতিশয় দ্রুততা এবং সততার সঙ্গে গ্রহণ করা হয় তবে ঐ সব অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোকে এবং তাদের হোতাদেরকে কার্যকরভাবে শায়েস্তা করা যাবে বলে আমার দৃঢ় ধারণা। অপরদিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের বেশি পণ্য যদি কারও গুদামে পাওয়া যায় তবে তাদেরকেও যাতে শাস্তি দেয়া যায় এমন বিধিবিধান করে, প্রয়োজনে মজুদদারি এবং মুনাফাখোরির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার কার্যকর প্রয়োজনের ব্যবস্থা করে একটা দৃশ্যমান অভিযান পরিচালনা শুরু করা হোক। সকল অপরাধীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হোক এবং কঠোর শাস্তি বিধানের ব্যবস্থাও করা হোক। আল্লাহ ব্যবসাকে যেমন হালাল করেছেন, তেমনি মজুদদারিও হারাম করেছেন। রমজান মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিম্নগামী হলেও আমাদের বাজারগুলোতে তা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাতের মাধ্যমে। এখন মিথ্যা যেন ব্যবসার মূলধন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে যতোবেশি মিথ্যা বলতে পারবে, তার ব্যবসাও যেন ততোবশি ভালো হবে। কিন্তু মিথ্যা যে জঘন্য অপরাধ, তারা কি তা জানে না?
দ্রব্যসামগ্রী অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসমূহের মূল্য স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে বর্তমান পরিস্থিতিতে যা করা দরকার তা হলো- সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তাদেও নেয়া পদক্ষেপ গুলোকে কার্যকর করতে হবে। মধ্যস্থানীয় শ্রেণীর কারসাজি বন্ধ করতে হবে। সরকারকে ব্যবসায়ীদের ওপর বাজার নিয়ন্ত্রণের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য সামঞ্জস্য আছে কিনা নিয়মিত তা তদারকি করতে হবে। দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজি বন্ধের ব্যাপারে কঠোর পদÿÿপ নিতে হবে। পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। রমজান মাসে যে সব পণ্যের চাহিদা বেশি, তা বেশি করে জোগান দিতে হবে। পাইকারি বাজার থেকে মধ্যশ্রেণীর গোষ্ঠী যাতে স্বার্থ হাসিল না করতে পারে, সেজন্য পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সরকারি নিজস্ব পরিবহন ও জনবলের মাধ্যমে খুচরা বাজারে পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া যেতে পারে। তাতে করে চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজিও বন্ধ হবে। বেশি করে পণ্য আমদানি করে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা। আরো বেশি করে সরকারি বিক্রির কেন্দ্র স্থাপন করে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি ব্যবসায়ীদের পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা অনুধাবন করে এখনি শপথ নেয়া উচিত- ‘আমরা পণ্যসামগ্রী মজুদের মাধ্যমে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়াবো না এবং পণ্যসামগ্রীতে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করবো না।’ আগাম সতর্কবার্তার মতো উচ্চারণ করা যায়, রমজানে বাজার একবার চড়লে সেই চড়া বাজার আর নামতে চায় না। এটা হচ্ছে অতীতের অভিজ্ঞতা। সে জন্য পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে যা যা করা দরকার রমজানের আগেই করতে হবে। হাতে যে সামান্য ক’টা দিন আছে সে ক’দিনকেই কাজে লাগাতে হবে। সে জন্য বাজার মনিটরিংয়ে সরকারকে চৌকস হতে হবে । আর তাতেই জনগন কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।
(লেখক- সাংবাদিক ও কলামিষ্ট ,newsstore09@gmail.com)