রাজধানীতে কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার!
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজধানীর মুগদাপাড়া ও মতিঝিল এলাকা থেকে এক কোটি টাকার জাল নোটসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও জালনোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম। গত ২৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) দুপুর থেকে ২৭ জুলাই (শুক্রবার) ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলঃ জাল নোটের পাইকারি বিক্রেতা রোজিনা বেগম (৩০), জালাল উদ্দিন (৪০), আবিদ হোসেন (৪২), শহীদুল ইসলাম (৩০), তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম (২২) ও জাল নোট তৈরির কারখানার মালিক মোহাম্মদ সেলিম। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের পশ্চিম জোনের এডিসি মশিউর রহমান বলেন, আসন্ন ঈদে এসব জাল টাকা বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিয়েছিল এই চক্র। সাংবাদিকদের সামনে চক্রের মূল হোতা সেলিম জালনোট তৈরির পদ্ধতি দেখান। একইভাবে জালনোট বাজারজাত কিভাবে করেন, তারও বর্ণনা দেন। সংবাদ সম্মেলনে এডিসি মশিউর রহমান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে জালনোট তৈরির চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে তারা নজরদারি বৃদ্ধি করেন। তিনি বলেন, এরই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, মুগদা থানার মা-া সড়কের বাসার টাওয়ারের সামনে জাল টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ খবর পাওয়ার পর পরই একটি টিম নিয়ে সেখানে অভিযান চালান। অভিযানকালে শহিদুল, তার স্ত্রী মরিয়ম ও রোজিনাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। তাদের ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে জানায়, তারা জাল টাকার ব্যবসায়ী। এ টাকা তারা প্রস্তুতকারী সেলিমের কাছ থেকে আনেন। পরে সেলিমকে গ্রেফতারের অভিযান শুরু হয়। এক পর্যায়ে একই থানার মুগদাপাড়ার ওয়াপদা গলির ১/৮/খ/২ বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে জাল নোট প্রস্তুতকারী সেলিমকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকেও ৩২ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। একই সময় জালাল ও আবিদকে আটক করা হয়। ডিবি এডিসি মশিউর রহমান জানান, সেলিম জাল টাকা তৈরি চক্রের সক্রিয় নেতা। তার বাড়ি একটি ছোটখাটো ল্যাব। এই ল্যাবেই কোটি কোটি টাকার জালনোট তৈরি করা হতো। ল্যাপটপ, প্রিন্টারসহ বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তৈরির সামগ্রী সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকার জালনোট, ল্যাপটপ, ৬টি প্রিন্টার, জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদি সিকিউরিটি থ্রেড, স্ক্রেনার, স্ক্রিন ফ্রেম, কালি, গাম, তারপিন, আইকা, রংসহ কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
জাল টাকা তৈরি চক্রের নেতা সেলিম জানান, গত প্রায় এক বছর ধরে তিনি এ জাল টাকা তৈরি করে আসছেন। রংপুরের এক বন্ধুর কাছ থেকে এ প্রযুক্তি শিখে তিনি এ কাজ করছেন। তিনি জানান, আসন্ন ঈদে তারা এ টাকা বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেলিম টাকা তৈরির কৌশলও বর্ণনা করেন। তিনি জানান, রাজধানীর গুলিস্থান থেকে ১০০ টাকার নোট ১২০/১৩০ টাকায় কেনা হয়। সেগুলো গরম পানির মধ্যে সিদ্ধ করে এক ধরনের তেল মিশিয়ে মুছে দিলে টাকার ওপরের অংশ মুছে যায়। কিন্তু টাকার ভেতরে জলছাপ থেকে যায়। ওই টাকার ওপর ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকার ছাপ বসিয়ে প্রিন্ট দেয়া হয়। সেলিম আরো জানায়, সারাদেশেই তার গ্রাহক রয়েছে। ৪০ হাজার টাকা দিলে তারা ১ লাখ টাকা দেয়। এভাবে সে গত এক বছর ধরে ব্যবসা করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত রোজিনা জানায়, রোজিনার স্বামী মৃত আব্দুল মান্নান জাল টাকার একজন বড় পাইকার ছিল। স্বামীর অবর্তমানে সে এ ব্যবসার হাল ধরে। স্বামীর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে সে জাল টাকা প্রস্তুতকারী ও জাল টাকার খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচিত হয়। এভাবেই গত এক বছর ধরে বিভিন্ন জাল টাকা প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে এক লাখ জাল টাকা ৮/৯ হাজার টাকা দরে সংগ্রহ করে তা ১২/১৬ হাজার টাকা দরে ঢাকাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করত। শহিদুল ও মরিয়ম পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। তারা রোজিনার কাছ থেকে জাল টাকা খুচরাভাবে সংগ্রহ করে মিরপুরের বিভিন্ন মুদি দোকান, কাপড়ের দোকান এবং কাঁচাবাজারে পণ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রির মাধ্যমে সরবরাহ করত। আশুলিয়া থেকে গুলিস্থান সবখানে তার গ্রাহক রয়েছে। সে তার শিশু সন্তানকে নিয়ে লাখ লাখ টাকার জালনোট ব্যাগে করে এগুলো সরবরাহ করত।
অভিযানে অংশ নেয়া টিমের পরিদর্শক আজাহারুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে এ ধরনের আরো কয়েকটি বড় চক্র রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন ধরনের তথ্য তারা পেয়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে ওই চক্রগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, পুরো চক্রকে গ্রেফতারের জন্য তারা অভিযান শুরু করেছেন। তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃদের বিরুদ্ধে মুগদা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবারই তাদের আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।