ঈদকে সামনে রেখে বাড়ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড ।। পুলিশ নীরব!
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন| এরই মধ্যে ঈদকে সামনে রেখে ২শ’ ৫০ কোটি টাকার টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি চক্র| তাদের সহযোগিতায় রয়েছে কতিপয় দুর্নীতিবাজ কিছু পুলিশ সদস্যর| ঈদ আসার আগেই চড়া দামে বিক্রি হয়ে গেছে রাজধানীর ফুটপাত| মহানগরীর ১৬৩ কিলোমিটার ফুটপাতের প্রায় দেড়’শ কিলোমিটারই চলে গেছে দখলদারদের কব্জায়| এরই মধ্যে চাঁদা আদায়ের ৪শ’ লাইনম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে| বর্তমানে রাজধানীর ফুটপাতকে ঘিরে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব| খবর সংশিস্নষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের| এদিকে শুক্রবার রাজধানীর গুলিসত্মানে রমনা ভবনের সামনে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ফুটপাতের হকার এবং রমনা সুপার মার্কেটের দোকানদারদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ ১২ জন আহত হয়| যার ফলে রাজধানীর ফুটপাতে চাঁদাবাজির চলমান মহোৎসবের বিষয়টি প্রকাশ পায়| সূত্র জানায়, পুলিশ, স্থানীয় মাসত্মান, সরকারদলীয় থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং কয়েকটি হকার সমিতি এই ফুটপাত-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত| এ ছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীও এরই মধ্যে শুরম্ন করেছেন বরাদ্দ-বাণিজ্য| সূত্রটি জানায়, ঈদকে সামনে রেখে পুরো রমজান মাসজুড়ে রাজধানীতে চলছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কেনাকাটা| নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকজন কেনাকাটার জন্য ভিড় করেন ঢাকার ব্যসত্ম রাসত্মার ফুটপাতগুলোতে| গত বারের মতো এবারো ফুটপাট দখল নিয়ে প্রথম রোজার শুরম্ন থেকেই বিক্রি করা হয়েছে| যদিও নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার দায়িত্ব ডিসিসি’র| কিন্তু রোজা এলেই সড়কের বেশির ভাগ অংশ হকারদের দখলে চলে যায়| এবার অবশ্য ডিসিসি আরো একটু এগিয়ে| গত মে মাসে সংস্থাটি এক চিঠিতে ফুটপাত থেকে নির্মাণসামগ্রী ও অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়| হকাররা জানান, নির্মাণসামগ্রী উচ্ছেদের পর তাদের কাছে ফুটপাত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে| মূলত রমজান মাস সামনে রেখে ডিসিসি’র ওই চক্রটি স্থান বরাদ্দ বাণিজ্যের অংশ হিসেবে নানা ফন্দি-ফিকির করে থাকে|
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মাহবুবুর রহমান রোজাকে কেন্দ্র করে ফুটপাতের চাঁদাবাজি বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, এটি রোধে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে| তারা এ বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে| তবে রাজধানীর গুলিসত্মান, মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে তাদের দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা গুণতে হয়| রোজার শুরম্নতে এ চাঁদা বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়| তবে ২০ রোজার পর এ হার আরো বেড়ে যায়| ক্ষেত্রবিশেষে এ হার দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যনত্ম হয়ে থাকে| জাতীয় হকার ফেডারেশনের তথ্যমতে, রাজধানীতে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ হকার রয়েছে| তবে রোজায় এ সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়| গড়ে ২০০ টাকা করে চাঁদা উঠলে দৈনিক এ পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ কোটি টাকা| হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থান ও আকৃতিভেদে চাঁদার পরিমাণে পার্থক্য হয়ে থাকে| যারা ছাউনি টানিয়ে চৌকিতে শার্ট, প্যান্ট, কাপড়চোপড় বিক্রি করেন, তাদের চাঁদার হার একটু বেশি হয়| গুলিসত্মান এলাকায় এ ধরনের ব্যবসার জন্য রোজার মাসে হকারদের দৈনিক ২০০ থেকে ২২০ টাকা চাঁদা গুণতে হবে| মতিঝিল ও ফার্মগেট এলাকার হকারদের গুণতে হবে দৈনিক ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা| আর নিউমার্কেট এলাকার হকারদের ক্ষেত্রে এ হার ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা| ভাসমান হকারদের ক্ষেত্রে চাঁদার হার সবচেয়ে কম| তাদের দৈনিক ৫০ থেকে ৮০ টাকা গুণলেই চলে| এ ছাড়া যারা কাপড় ছাড়া অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রেও চাঁদার হার কম হয়ে থাকে| এসব হকারের প্রত্যেককে দৈনিক চাঁদা গুণতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা| এ ছাড়া রোজায় যারা ফুটপাতে বিভিন্ন ফল বা খেজুর বিক্রি করেন, তাদের স্থান ও আকৃতিভেদে গুণতে হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা| তবে যারা ফুটপাতে স্থায়ী ফলের দোকান দিয়ে বসেন, তাদের গুণতে হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা|
এদিকে শুক্রবার দুপুরে চাঁদাবাজিকে ঘিরে গুলিসত্মান বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় রমনা সুপার মার্কেট ও সামনে ফুটপাতের হকারদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে| এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ১২ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে| আহতদের মধ্যে এসআই মোতালেব, কনস্টেবল ইলিয়াস (২৫), দুই হকার কবির, রমিজ ও পথচারী জনিকে (২০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে| জানা গেছে, মূলত ফুটপাতে চাঁদাবাজির ফলে রমনা মার্কেট ব্যবসায়ী ও হকারদের মধ্যে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে| এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে| তবে পল্টন থানা পুলিশ জানিয়ে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে|
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হকার সমিতির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সারা বছরই হকারদের চাঁদা গুণতে হয়| তবে ঈদ আসলে চাঁদার হার বেড়ে যায়| ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ বা এরও বেশিও গুণতে হয়| আমরা প্রতিবছর আগে থেকেই পুলিশকে জানাই| কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয় না| কারণ এ চাঁদার একটি অংশ পুলিশকেও দেয়া হয়|