বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ঈদ আনন্দ
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ঈদ আনন্দে মেতেছে সব বয়সীরা। এক মাস সিয়াম সাধনার পর সোমবার আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ঈদ উল ফিতর উদযাপন করছে দেশের মুসলমান সম্প্রদায়। দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। প্রতিবারের মত এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতটি হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এই ময়দানে আট লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে। আর ঢাকায় ঈদের প্রধান জামাত হয়েছে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। ঈদ জামাতের আগে বৃষ্টি হওয়ায় মুসল্লীরা কিছুটা বিপাকে পড়ে। উক্ত জামাতে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদ বর্গ, প্রধান বিচারপতি, রাষ্ট্রদূত, আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। মুসল্লিরা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেন। জামাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব অধ্যাপক মাওলানা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। জামাত শেষে সকাল পৌনে ৯টার দিকে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনাসহ দেশের মানুষের জন্য দোয়া করা হয়। দোয়া শেষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান মুসল্লিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় তিনি সবার সঙ্গে কোলাকুলিও করেন।
এদিকে, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতে অনেক নারী ও শিশুও অংশ নেয়। নারীদের জামাতের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। অপরদিকে, বড়দের সঙ্গে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আসতে পেরে শিশুদের অনেক আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়সহ কোলাকুলি করে। সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো.জিল্লুর রহমান জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ত্যাগ করেন। বর্তমানে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করছেন। রাজধানীতে ভোর থেকে বৃষ্টি হলেও দলে দলে মুসল্লিরা যোগ দিয়েছেন ঈদের নামাজে। বরাবরের মতো এবারো রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ঈদের সকালে বঙ্গভবনে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আর বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে। সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সব শিশু পার্কে ঈদে বিনা টিকেটে প্রবেশ করতে পারবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। এছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিনা টিকিটে ঢাকা জাদুঘর দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মহানগরীতে প্রীতি ফুটবল খেলার ব্যবস্থা করবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে থাকবে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন। সোমবার সকালে
সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বনানি-ঢাকা গেইট থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক এবং সড়ক দ্বীপগুলো সাজানো হয়েছে জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারক লিখিত ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে। রাতে কিছু সরকারি ভবনে আলোকসজ্জারও আয়োজন থাকছে। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি চ্যানেলগুলো কয়েক দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে বিশেষ সংখ্যা।জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মাওলানা সালাহ উদ্দিন। এছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৯টার ঈদের জামাত হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এবার নগরের ৫৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই চারটি করে মোট ২২৪টি জায়গায় ঈদের জামাত হচ্ছে। বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত হবে এসব জামাত।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার বাণী রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, “ঈদ অর্থ আনন্দ, খুশি। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদ-উল-ফিতর মানবজাতির জন্য বয়ে আনে এক অনাবিল আনন্দ ও খুশির বারতা। “ঈদ সব শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে গড়ে তোলে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বন্ধন। এদিন ধনী-গরীব, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হয় এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেয়। শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় সমাজ গঠনে ঈদ-উল-ফিতরের আবেদন তাই চিরন্তন। সব ধরণের ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে সামিল হওয়ার শিক্ষায় দিয়ে থাকে পবিত্র ঈদ।” প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, “ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে সব মানুষকে। ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঈদ-উল-ফিতরের শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।ঈদে বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম সম্প্রদায়েয় উত্তরোত্তর সম্পৃদ্ধি বয়ে আনুক।” বিরোধীদলীয়
নেতা তার বাণীতে বলেন, “ঈদের উৎসব ধনী-গরিব, উচু-নিচু নির্বিশেষে সকল মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করায়। হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ ও তিক্ততার গ্লানি থেকে মানুষের মনকে এক স্বর্গীয় শান্তি ও সম্প্রীতির চেতনা দান করে।’’ তিনি দেশবাসীর প্রতি হানাহানি ও হিংসা-দ্বেষ পরিহার করে সম্প্রতির চেতনা নিয়ে ঈদ উপযাপনের আহবান জানান এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।