হরতাল সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াত
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বাধা দেয়ায় নিজেদের ডাকা হরতাল সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকবেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। প্রয়োজনে মারমুখী আচরণে পিছপা না হওয়ার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। তবে গ্রেফতার এড়াতে জামায়াত নেতাদের বেশিরভাগই বাসায় থাকছেন না। তারা মুঠোফোন বন্ধ রাখছেন। হরতালে মিছিল-পিকেটিং করতে গেলে পুলিশের ধরপাকড়ের মুখে পড়তে পারেন বলে দলটির নেতারা আশঙ্কা করছেন। তাই গ্রেফতারের ঝুঁকি এড়াতে হঠাৎ পিকেটিং করতে কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুযোগ পেলে পুলিশের চোখ এড়িয়ে পাড়া-মহল্লার ভেতরের রাস্তায় একক মিছিল করতেও বলা হয়েছে বলে সূত্রগুলো জানায়। জানতে চাইলে দলটির মহানগর শাখার একজন নেতা বলেন, হরতালে সামনে থেকে পিকেটিং করার সম্ভাবনা খুবই কম। পুলিশের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন এই আশঙ্কায় এই নেতা নাম প্রকাশে রাজি হননি। দলটির আরেকটি সূত্র জানায়, গ্রেফতার আতঙ্কে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মধ্যম সারির নেতাদের পাশাপাশি অনেক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাও আত্মগোপনে আছেন। এ অবস্থায় হরতালে নেতাদের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা কম। তবে কর্মীদের মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। হরতালে রাজধানীর পুরানা পল্টন, মতিঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, মিরপুরসহ কমপক্ষে ২৫টি পয়েন্টে পিকেটিংয়ে থাকবেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। হরতাল ঘোষণার পর থেকেই জামায়াত-শিবির দফায় দফায় বৈঠক করে প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রয়োজনে মারমুখী এবং ভাঙচুর করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতের দলের ঢাকা মহানগর সহকারী সেক্রেটারি ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, হরতাল সফর করতে প্রতিটি থানায় নেতাকর্মীদের আলাদাভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেয়ায় হরতাল ডাকা হয়েছে। এতে কোনো প্রকার সাংঘর্ষিক আচরণ করলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার সরকারকে গ্রহণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে।
এদিকে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ঝটিকা মিছিল করেছে। ৩ ডিসেম্বর (সোমবার) ৪টার দিকে পল্টন থানা থেকে জোনাকি সিনেমা হল পর্যন্ত মিছিল করে মহানগর জামায়াত। পুলিশ তাদের ব্যানার কেড়ে নিলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি। তবে এর পরপরই কারওয়ান বাজারে বের হওয়া এক মিছিলের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে জনতা টাওয়ারের পাশ থেকে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে যুবলীগের কর্মীরা কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন আড়ত থেকে ১২ থেকে ১৫ জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।
তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুর রহমান বলেন, নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, বিভিন্ন দাবিতে ৩ ডিসেম্বর রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসুচি ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এই কর্মসূচি পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আবেদন জানায় দলটি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানিয়ে দেন যে যথাযথ অনুমতি না নেয়ায় জামায়াতের এই সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। তাই এই কর্মসূচি দমনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জামায়াত পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বাতিল করে মঙ্গলবার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে।