বিশ্বজিতের মৃত্যুঃ আমার অনুভূতি ও ব্যথা…
জাফরুল হাসান রুহানঃ যুবকটি একা, চারপাশে কিছু বিচ্ছিরি কুকুর! ঘেউ ঘেউ করে চরম উল্লাসে কামড়ে চলেছে তাকে! দিগ্বিদিক ছুটে চলেছে যুবকটি… একটু বাঁচার আশায়… কিন্তু নাহ! বাঁচতে পারলো না, মরতেই হলো তাকে। প্রথম কোপটি যখনশরীরে পড়লো, নিশ্চয়ই ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরলো, কার চেহারাটি চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল তখন? মা কল্পনা দাস, যে নিজের সবটুকু মমতা ঢেলে এক ফোঁটা দূষিত রক্তের দলাকে তিল তিল করে মানুষ বিশ্বজিতের রূপ দিয়েছেন? নাকি বাবা অনন্ত দাস, শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু ঘামে রূপান্তর করে যে নতুন শার্টটি এনেছেন ছেলের আব্দার পূরণ করতে? নাকি অন্য কোনো প্রিয়জনের, যে কপালে এসে পড়া চুলটি সরিয়ে লাজুক হেসে আড়ালে লুকাতো? কিন্তু এখনো কেন আমরা কষ্ট পাই বিশ্বজিতদের মরতে দেখলে! এ কি নতুন হলো? বিশ্বজিৎদের তো মরতেই হবে। যুগে যুগে মরেছেও।
দেশের যারা কল্যাণ (!) চায়, তাদের এক-আধটু শিকারের নেশা থাকবে। তাদের খায়েশ মেটাতে হরিণ শাবক তো বিশ্বজিৎরাই হবে। তীরের ফলা বিশ্বজিৎদের বুকের যতো গভীরে গেঁথে যাবে, শিকারের মজাতো ততই বেশি হবে ক্ষমতা লিপ্সুদের। আমাদের নেতারা, আমাদের নেত্রীরা বড় বড় রাজা- উজির মারবেন, কিন্তু কখনো হয়তো জানতে পারবেন না, তাদের এই ক্ষমতার যুদ্ধে শুধু ঘোড়ার খুরের আঘাতেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে কতো জীবন! কতো মায়ের বুক! এ দল সে দলকে দুষবে, সে দল ওই দলকে দুষবে- কী যাবে আসবে কারো? কিচ্ছু না। বেঁচে যাবে রক্তপিপাসু মানুষগুলো। তারা হয়তো বিশেষ কাজটি (!) সেরে ভালো মানুষটি হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। খুব খাটুনি (!) করে এলো বলে, মা গরম ভাত বেড়ে খাইয়েছে, ‘বাছা আমার, মুখটা রোদে পুড়ে কেমন লালচে হয়ে গেছে!’ কিন্তু সেই মা হয়তো কখনোই জানবেন না। তার এই বাছা অন্য মায়ের বাছাকে লালচে নয়, লাল রক্তে লতপত করে এসেছে। তাই কষ্ট শুধু বিশ্বজিতের মায়ের জন্য হচ্ছে না। তার হত্যাকারীদের মায়ের জন্যও হচ্ছে। কারণ সেসব মায়েরা জানেন না, এতো আদরে সোহাগে বুকের মধ্যে তারা কালসাপ পুষছেন। কোনো ভূমিকা থেকেই বিশ্বজিতদের জন্য কিছুই করার ক্ষমতা নেই। শুধু অভিশাপ চাই, অভিশাপ দাও আমায়। ক্ষমা নয় বিশ্বজিৎ…
জাফরুল হাসান রুহানঃ সাংবাদিক।