১৪ ডিসেম্বরঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
মোক্তার হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস তথা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র মিলিতভাবে বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ যখন হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে চূড়ান্ত বিজয়ের লগ্নে উপস্থিত হয়েছিল তখনই বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশ্যে মানবতার বিরুদ্ধে তারা এই ঘৃণ্য হত্যাকান্ড সংঘটিত করে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কৃতী বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তুলে দেয়া হয়েছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। পেছন থেকে কলকাঠি নাড়েন পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্বে থাকা পাক জল্লাদ জেনারেল রাও ফরমান আলী। ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত সে তালিকা ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘৃণ্যতম অপকর্মটি করে এই ঘাতক চক্র। সান্ধ্য আইনের সুযোগে রাতের আধাঁরে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদেরকে বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিজয়ের পর রায়েরবাজার, মিরপুরসহ কয়েক জায়গায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ক্ষত-বিক্ষত বিকৃত লাশ পাওয়া যায়। একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ার হিসেবে একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী এবং ১৬ জন শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী। এদের মধ্যে রয়েছেন_ ড. জি সি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজউদ্দিন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমেদ লাডু ভাই, খন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, নাজমুল হক, আলতাফ মাহমুদ, নূতন চন্দ্র সিংহ, আর পি সাহা, আবুল খায়ের, রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, ফজলুল মাহি, ড. সাদেক, ড. আমিনুদ্দিন, সায়ীদুল হাসান, হাবিুবর রহমান, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীনসহ আরো অনেকে।
এবারের পরিবেশটা একটু ভিন্ন হবে। ঠিক ৪০ বছর পর এবার শুরু হয়েছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের আনুষ্ঠানিক বিচার। বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের প্রধান হোতা গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, সাকা চৌধুরী, কামারুজ্জামানরা যুদ্ধাপরাধের দায়ে আজ বিচারের কাঠগড়ায়। কেউ কেউ সমাজে ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে। কেউ কেউ আবার বিদেশে অবস্থান করছে। দেশদ্রোহী এ দেশীয় নরপশু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার গোটা দেশ। দাবি উঠেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর রাজনৈতিক ভিত্তি জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী যুদ্ধাপরাধী-বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার।