কড়া নিরাপত্তায় নিরুত্তাপ হরতালঃ দফায়-দফায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ
শহিদুল ইসলাম ও জাহিদ হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমা বিস্ফোরণ এবং পুলিশের সঙ্গে দফায়-দফায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় মিরপুর, পুরান ঢাকা, ফার্মগেট, তেজগাঁও যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় হরতালের সমর্থনে খন্ড খন্ড মিছিল হলেও রাস্তায় যান চলাচল ছিল অনেক কম। এতে সাধারণ পথচারীদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস না ছেড়ে গেলেও ট্রেন ও লঞ্চ ছেড়ে গেছে যথাসময়ে। বিভিন্নস্থান থেকে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া রাজধানীতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সকাল থেকেই এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা কড়া পুলিশি পাহাড়ায় হরতাল শুরু করেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল আসতে গেলে পুলিশি বাধায় পড়ে। দুপুরের পর এ এলাকা কিছুটা অশান্ত হয়ে পড়ে। এ সময় পরপর ৪-৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। লোকজন নিরাপত্তা গন্তব্য খুঁজতে। আর রাস্তায় দু-একটি রিকশা সিএনজি চললেও তা ফাঁকা হয়ে যায়। প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আটক করা হয় ৩ জনকে। ভোর থেকেই এখানে হরতালের সমর্থনে খন্ড খন্ড মিছিল বের হয়। সকাল ৬টার দিকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের প্রশিকা ভবনের সামনে একটি দাঁড়িয়ে থাকা বাসে অগি্নসংযোগ দেওয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে বাসটি পুড়ে যায়। দমকল বাহিনীর লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। একই এলাকায় হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে এ সময় কয়েকজন যুবক রাস্তায় চলাচলকারী একটি এবং সিএনজি ভাঙচুর করে। পুলিশ এসে বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশকে লক্ষ্য করে পিকেটাররা ইট ছুড়তে থাকে। পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। একই সেকশনে বাসে আগুন দিয়ে হাতবোমা ছুড়ে মারা হয়। এতে চালক আহত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরেও একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। দুটি এলাকায় সকাল থেকে মিছিল বের হয় হরতালের সমর্থনে। মিছিলগুলো গলি পেরিয়ে রাস্তায় আসতে গেলে পুলিশি বাধায় পড়ে। পরে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিল করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দেশীয় অস্ত্র এবং ইট নিয়ে মিছিলকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে দুটি এলাকায় পাল্টা হামলা করে অতিরিক্ত লোকবল নিয়ে। এ সময় দুটি যানবাহনে ভাঙচুর এবং ৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। তেজগাঁও কলেজের সামনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেটও ছোড়ে। ৪-৫ জনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
পুরান ঢাকা : সকালে পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে মিছিল বের করা হয়। একটি মিছিল শাখারীবাজার এলাকায় এলে পুলিশি বাধায় পড়ে। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ কথা কাটাকাটি এবং বাকতি-ায় লিপ্ত হয়। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিল এগোতে থাকলে শুরু হয় সংঘর্ষ। দফায়-দফায় সংঘর্ষ অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়লে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় যুবলীগের কর্মীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ত্রিমুখী সংঘর্ষে ওই এলাকা এক প্রকার অচলও হয়ে পড়ে। একটি বাস ও মাইক্রোতে আগুন দেয় পিকেটাররা। প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সকালে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় সাধারণ ছাত্রছাত্রী থেকে সব মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। দুপুরের দিকে টিএসসি থেকে দুটি হাতবোমা উদ্ধার করে পুলিশ। এখান থেকে ২ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। এছাড়া মিপুর কমার্স কলেজ, সবুজবাগ, মতিঝিলে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এছাড়া রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, বোমাবাজির ঘটনা ঘটলেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে হরতাল চলাকালীন পিকেটিং করার সময়, পিকেটিং করবে এই সন্দেহে এবং সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার অপরাধে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে বিএনপির দাবি কোনো কারণ ছাড়াই তাদের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
সরেজমিন পল্টন, বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব ও হাইকোর্ট মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি। ফজরের নামাজের পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এ আশঙ্কায় ভোর থেকেই এসব এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। সারিবদ্ধভাবে পুলিশ, র্যাব দাঁড়িয়ে আছে পাড়া-মহল্লার অলিগলির মুখে। সঙ্গে জলকামান, নিরাপত্তা ট্যাংক এমনকি সাজানো যান প্রস্তুত ছিল। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলও দিতে থাকে। প্রধান সড়কগুলোতে ঢুকতে গলিপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সদা প্রস্তুত ছিল। অবশ্য দুপুরের পর থেকে এসব স্থান থেকে তাদের সরিয়ে ফেলা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা রাস্তাগুলো আবার দখলে নেয় যানবাহন।