৫ মার্চ বিএনপি’র সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশজুড়ে চলমান সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনাকে সরকারের ‘গণহত্যা’ আখ্যায়িত করে ৫ মার্চ সারা দেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াতের জোটসঙ্গী বিএনপি। ১ মার্চ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এছাড়া শনিবার বিকাল ৩টায় ঢাকার নয়াপল্টনে প্রতিবাদ মিছিল এবং সারা দেশে জেলায় জেলায় একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে ‘সরকারের সন্ত্রাস গণহত্যার’ প্রতিবাদে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সরকার পরিকল্পিতভাবে জনগণকে বিভক্ত করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, “আমি সরকারের কাছে এই মুহূর্তে গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।আমি সরকারকে হুঁশিয়ার করতে চাই, এর পরিণাম ভাল হবে না।” জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর রায় নিয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া না দিলেও বিএনপি চেয়ারপার্সন মনে করেন, এই ট্র্যাইবুনালের যে কোনো রায়ই ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হয়ে থাকবে। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নি সংযোগ ও ধর্মন্তরিত করার আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দেশজুড়ে গণজাগরণের মধ্যে আদালতের এই রায়ের পর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। অন্যদিকে রায় প্রত্যাখ্যান করে রবি ও সোমবার ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডাকে জামায়াতে ইসলামী। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এই দলটির নেতাকর্মীরা রায়ের পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা শুরু করে। সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হয়। বিভিন্ন স্থানে হামলা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরেও।
রায়ের সময় খালেদা জিয়া ছিলেন সিঙ্গাপুরে। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে ফিরেই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন। নিজের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই খালেদা জিয়া বলেন, “আমি স্তম্ভিত। আমি ক্ষুব্ধ। আমি গভীরভাবে মর্মাহত। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাবার কোনো ভাষা আমার নেই। আমাদের এই দেশে আবার চলছে পৈশাচিক গণহত্যা। পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা চলছে। গণহত্যার পৈশাচিক তাণ্ডবে মেতে উঠেছে সরকার।” এই ‘হত্যাকাণ্ডের’ সুবিচারের দাবিতে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান ১৮ দলীয় জোট নেত্রী। চলমান সহিংসতাকে ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ’ অভিহিত করে এর সঙ্গ একাত্মতা ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
লিখিত বক্তৃতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’, ‘অযোগ্য’, ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘গণবিচ্ছিন্ন’ আখ্যায়িত করেন খালেদা। পাশাপাশি বিএনপিকে দাবি করেন দেশের সর্ববৃহৎ দল হিসাবে। তিনি বলেন, “আমি সারা দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে এই সরকারের ঘৃণ্য ও গণবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সচেতন ও সোচ্চার হবার আহ্বান জানাচ্ছি। উদাত্ব আহ্বান জানাচ্ছি, যে-কোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার জন্য। “আমি দেশবাসীকে এই সংকটের মুহূর্তে রাজপথে নেমে আসার ডাক দিচ্ছি।” জামায়াতের সমর্থনে কর্মসূচি ঘোষণা করে খালেদা বলেন, শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৩টায় প্রতিবাদ মিছিল হবে। সারা দেশে একই সময়ে বিএনপির মহানগর ও জেলা কমিটিগুলোও একই কর্মসূচি পালন করবে। “সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যার প্রতিবাদে আগামী ৫ মার্চ মঙ্গলবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালনের জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।” এই প্রতিবাদে বাধা না দেয়ার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। “আমি সরকার ও প্রশাসনকে বলবো, জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে কোনো বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। আমি বলব, আর একটি গুলিও যেন চালানো না হয়। জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নিলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।” দেশের পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনীসহ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের টাকায় যে অস্ত্র কেনা হয়, সেই অস্ত্র নির্বিচারে জনগণের উপর ব্যবহার করবেন না।… একটি গণবিচ্ছিন্ন ব্যর্থ সরকারের অন্যায় হুকুমে আপনারা গণহত্যাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না।”
অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, জমির উদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ, সারোয়ারি রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সহসভাপতি এম মোরশেদ খান, সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, বিরোধী দলীয় নেতার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।