রাজধানীতে পুলিশের সাথে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষঃ বিজিবি মোতায়েন

রাজধানীতে পুলিশের সাথে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষঃ বিজিবি মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, কাকরাইল, বিজয়নগর, সাতরাস্তার মোড় ও ফকিরেরপুল এলাকায় ২ মার্চ (শনিবার) পুলিশের সাথে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়। গতকাল সকালে ফকিরেরপুল এলাকায় জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের এবং বিকেলে মালিবাগসহ আশপাশের এলাকায় বিএনপি’র সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও বিএনপি, জামায়াত শিবিরের কর্মীদের তাণ্ডবে ঐসব এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।  অর্ধশত গাড়ি ভাংচুর ও ৫টি গাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। জানা গেছে, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ‘গণহত্যা’র প্রতিবাদে ও ‘গণতন্ত্র রক্ষা’য় পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল করার সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা অতর্কিতে মালিবাগের কর্ণফুলী টুইনটাওয়ার, মৌচাক এবং শান্তিবাগ এলাকায় ভাংচুর শুরু করলে আতঙ্কিত সাধারণ লোকজন দিগি¦দিক করতে থাকেন। এলোপাথাড়ি যানবাহন ভাঙচুরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীরা ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইনের দিকে দৌড়াতে থাকেন। এসময় পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল ও রাবার ছোঁড়ে। বিএনপির কর্মীরা কাকরাইলে চারটি ও মৌচাক মার্কেটের সামনে একটি যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঐসময় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এখানে পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপে ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, কাকরাইল, বিজয়নগর ও সাতরাস্তার মোড় এলাকায় রণক্ষেত্র পরিণত হয়। এ সময় যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তার ডান পায়ের গোড়ালিতে গুলি লেগেছে। এছাড়াও মেরী নামে এক পথচারীসহ অনেকই আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নয়াপল্টনের সমাবেশ শেষে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রথম অংশ মালিবাগ পার হওয়ার সময় মধ্যভাগ শান্তিনগরে বাধার মুখে পড়ে। এসময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা একটি গাড়িতে আগুন দেয় এবং মালিবাগের পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এরপর পুলিশের সাথে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় পুলিশ কয়েকশ’ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। মিছিলের প্রথম ভাগ মগবাজার মোড়ে পৌঁছলেও মধ্যভাগ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং শেষ ভাগ কাকরাইল মোড় থেকে নয়াপল্টনে ফিরে যায়। মতিঝিল বিভাগের এডিসি মেহেদী হাসান বলেন, বিএনপির মিছিল ঠিকমতোই যাচ্ছিল। হঠাৎ করে মালিবাগ মোড়ে পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এসময় আমরা মানুষের জানমাল রক্ষার্থে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করি। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীরা ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দৌড়াতে থাকেন। উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার বিকেলে ‘গণহত্যা ও জুলুম-নিপীড়নে’র প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ছিল। অপরদিকে, রাজধানীর ফকিরাপুলে পুলিশের সাথে শিবির নেতা-কর্মীদের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে। শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে ফকিরাপুল মোড় থেকে একটি মিছিল বের হয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। ঐ মিছিল থেকে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এক পর্যায়ে শিবির নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ ৫ জন শিবিরকর্মীকে আটক করেছে।

অপরদিকে, রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শনিবার সন্ধ্যা থেকে আবারও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী রোব ও সোমবার জামায়াতের এবং মঙ্গলবার বিএনপির হরতালেও বিজিবি মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। বিজিবির সিকিউরিটি ইউনিট জানিয়েছে, এর আগে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর হরতাল এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের আগে রাজধানীতে বিজিবি নামানো হয়েছিল। প্রথমে ২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হলেও এবার এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে সিকিউরিটি ইউনিট।

নিজস্ব প্রতিনিধি