অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনঃ সংঘাত ও সহিংসতার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের!
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট ও প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। যার ফলে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও জননিরাপত্তা কমিটি গঠন ও কর্মসুচির কারণে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা করছেন বিশিষ্টজনেরা।
বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক উল হক বলেছেন, দুই দলকেই দেশের স্বার্থে আলোচনায় বসা উচিত। তিনি আশঙ্কা করে দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেশকে আরো সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে। অন্যদিকে এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম উদ্দিন বলেছেন, রাজনৈতিক সহিংসতার প্রভাব পড়ছে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর। অবিলম্বে দুই দলকেই আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ নিরসনের আহ্বান জানান তিনি। সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য প্রতিহত করতে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের ঘোষণা দেন। এই কমিটি গঠনে শনিবার দুপুরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে দায়িত্বও বণ্টন করা হয়। এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিরোধী জোটের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সারাদেশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ‘কমিটি ফর পাবলিক সিকিউরিটি বা জননিরাপত্তা’ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়। আওয়ামীলীগের সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি ও বিএনপির জননিরাপত্তা কমিটি গঠনের ঘোষণায় দেশের রাজনীতিতে সংঘাতের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। পাল্টাপাল্টি এ কমিটি গঠনের ফলে সংঘাত সহিংসতা নতুন মাত্রা পাবে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মানুষ। অবশ্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধীজোটকে এই মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরে এসে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীজোটের পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন ও পাল্টাপাল্টি কর্মসুচি ঘোষণায় দেশের মানুষ খুবই শঙ্কিত। এই সংঘাতময় পরিস্থিতির ফলে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হবে। দেশের ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান অগ্রগতি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-আলম হানিফ বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরে সারাদেশে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ’ কমিটি করা হচ্ছে। এই কমিটি একই সঙ্গে সারাদেশে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় পরিদর্শন করবে।বগুড়াতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জয়পুরহাটে মোহাম্মদ নাসিম, নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদের, রংপুরে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, খুলনা ও সাতক্ষীরায় শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সিলেটে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আবুল মাল আবদুল মুহিত, কঙ্বাজারে তোফায়েল আহমেদ, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এসব টিমের নেতৃত্ব দেবেন।
তিনদিনের মধ্যে সারাদেশের সকল পাড়া-মহল্লায় জননিরাপত্তা কমিটি গঠন করবে ১৮ দলীয় জোট। সেই কমিটিতে জোট ছাড়াও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকল মানুষ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির আহমেদ রিজভী। কমিটি গঠনের যুক্তি দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের ছাত্রলীগ-যুবলীগ সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। পুলিশ পিটিয়ে ও গুলি করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে, গণতন্ত্র আজ পদদলিত। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতেই এই জননিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে রোববার ১৮ দলের পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পরের দিন সোমবার করা হবে বলে জানানো হয়। সারাদেশে বিরোধী মতের উপর সরকারের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার সকল জেলা ও মহানগরে এই বিক্ষোভ করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-আলম হানিফ জানান, জামায়াত-শিবিরের অব্যাহত নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আগামী ১৮ মার্চ জনসভা করা হবে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনের এই জনসভায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। তিনি আরও বলেন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির তাণ্ডবে সংখ্যালঘুদের যে উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব এলাকায় আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি টিম পরিদর্শন করবে। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে মসজিদে গিয়ে ইমামদের সাথে বৈঠক করা হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। হানিফ বলেন, জামায়াত-শিবিরের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষায় তারা এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। আর বিএনপি এতে মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।