সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে দুটি বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিক সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন ও ধ্বংসযজ্ঞ পূর্বপরিকল্পিত। হত্যা-নির্যাতনসহ বহুমাত্রিক নাশকতা চালিয়ে দেশকে চরম অস্থিতিশীল ও সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে বাধ্য করে সরকারকে আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে হটানোই তাদের মূল লক্ষ্য। আর এসব করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করে দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করার জন্য। এ ধরনের কর্মকান্ড রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তাই ভবিষ্যতে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যত দ্রুতসম্ভব বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার করতে হবে। ২৩ মার্চ (শনিবার) সকালে রাজধানীর মুক্তি ভবনে দুটি বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন- গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশ- জিসিবি ও মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডেভেলপমেন্ট-মেড আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ মোট ছয়টি সুপারিশ উত্থাপন করেন আয়োজকরা।
‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জিসিবির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান, জিসিবির সভাপতি নুরুর রহমান সেলিম, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, মেডের নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম সবুজ, বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, পিসের নির্বাহী পরিচালক ইফমা হুসাইন প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডাদেশ ঘোষণার পর একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চারজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বৃদ্ধ দয়াল হরি শীল, সিলেট নগরীর জগৎ জ্যোতি তালুকদার, মৌলভীবাজারের সুশীল বিশ্বাস ও নোয়াখালীর প্রকৌশলী সুমন ভৌমিক। ২৮ ফেব্রুয়ারি-১৯ মার্চ পর্যন্ত তিন সপ্তাহে ৪২টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক হাজার ৭০০ পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বসতবাড়িসহ দেড় শতাধিক দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরসহ প্রায় ১০০টি ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগি্নসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আনুমানিক ১২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের উদ্দেশে ছয় দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো-সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতকরণ, সংখ্যালঘুসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পদ ধ্বংসের অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের এবং যত দ্রুত সম্ভব আদালতের মাধ্যমে ক্ষতি পূরণবাবদ আদায়কৃত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার ব্যবস্থা, নিহত ও আহত পরিবারগুলো উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো পুনঃস্থাপনে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গ্রামভিত্তিক সর্বদলীয় সম্প্রীতি রক্ষা কমিটি গঠন।