৩০ এপ্রিলঃ বহু প্রতীক্ষিত জেলহত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ জেল হত্যা (জাতীয় চার নেতা হত্যা) মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে ৩০ এপ্রিল (মঙ্গলবার)। এর মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত জেলহত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। এর আগে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণা করবেন। আপিল বিভাগের ৩০ এপ্রিলের (মঙ্গলবার) এটি ১ নম্বরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আদালত বসার পর প্রথমেই এ রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল মামলার আপিলের শুনানি শেষ হলে ৩০ এপ্রিল রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়। পরে দায়ের করা হয় জেল হত্যা মামলা।
জেল হত্যা মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় গেলে ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান এ মামলার রায় দেন। রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১৫ জনকে। খালাস পান বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুর। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে অব্যাহতি দেন। রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বহাল রাখেন আট সেনা কমকর্তার সাজা। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, আবদুল মাজেদ, মো. কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসর। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করে সরকার। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি সরকারের আপিল আবেদন মঞ্জুর করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদনের অনুমোদন দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল দায়েরের অনুমতি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সার (concise statement) জমা দিতে বলেছিলেন আদালত। ওই আদেশের এক বছর আট মাস পরে গত বছরের ৩১ অক্টোবর সেই সংক্ষিপ্ত বিবরণী অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেন রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার অ্যাটর্নি জেনারেলের মর্যাদায় নিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর আনিসুল হক অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে আপিলের ওই সংক্ষিপ্ত সার জমা দেন। ১ নভেম্বর তা আদালতে দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর পর ৪ নভেম্বর সংক্ষিপ্তসার গ্রহণ করে ১১ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। ওই দিন মাহবুবে আলমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি একদিন মুলতবি করেন আপিল বিভাগ। ১২ ডিসেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা (জেলহত্যা) মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের করা দুই পলাতক আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে নতুন করে নোটিশ না দেয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে তাদেরকে নতুন করে নোটিশ না দিয়ে পলাতক হিসেবেই গণ্য করে এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। উল্লেখ্য, এর আগে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলেও হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের আদেশ দেয়া হয়েছিল। আত্মসমর্পণ না করলে তাদের গ্রেফতার করার জন্যও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ ছিলো আদালতের। গত ১৫ জানুয়ারি শুরু করে ৩ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। এরপর থেকে ৩ কার্যদিবসে সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দুই আসামির সম্পৃক্ততা না থাকার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের আইনজীবী। জেল হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা পলাতক থাকায় আপিল বিভাগ তাকে সরকারি খরচে ওই দুই আসামির আইনজীবী নিযুক্ত করেন।