৯ মে: কামারুজ্জামানের মামলার রায় ।। আবারও মুখরিত শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের মামলার রায় ৯ মে (বৃহস্পতিবার) ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে বুধবার তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের মামলায় রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন। সকালে ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম শুরুতেই কামারুজ্জামানের মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল তার মামলার কার্যক্রম শেষ করে রায় দেয়ার জন্য যেকোন দিন (সিএভি) রেখে দেন ট্রাইব্যুনাল। সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুকে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আগামীকাল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে। বিষয়টি তিনি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ উভয় পক্ষের আইনজীবীদের জানাতে বলেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৪ জুন ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ গঠন করা হয়। ১৫ জুলাই থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১৮ জন রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন। এ বছরের ২৪ মার্চ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২ এপ্রিল থেকে আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করে। ১৬ এপ্রিল যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও মো. শাহিনুর ইসলাম সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২-এ কামারুজ্জামানের পক্ষে দেয়া আসামিপক্ষের যুক্তি গত ১৬ এপ্রিল খণ্ডন করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, আসামি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ এবং ধর্ষণে সহায়তা, নির্যাতন, দেশান্তরসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন,‘আমরা আমাদের অভিযোগসমূহ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছি। এতে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনিত সাতটি চার্জেই মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বলেও তিনি জানান। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে একাত্তরে সাধারণ সুপিরিয়র রেসপনসিভিলিটির অভিযোগ দায়ের রয়েছে বলেন তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষের ১৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এক হাজার ৩৫৪ জন সাক্ষীর তালিকা থেকে সাফাই সাক্ষীর পাঁচজনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছেন কামারুজ্জামানের ছেলে মোহাম্মদ হাসান ইকবাল এবং তার বড় ভাই কফিল উদ্দিন। গত বছরের ১৯ জুন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায়ের করা আভিযোগনামায় সংশোধনী আনেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের এক রিভিউ পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এ সংশোধনী আনেন। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গঠন করা আদেশের ৭ নম্বর অভিযোগে ‘উপস্থিত থেকে হত্যা করিয়েছেন’ এর স্থলে ‘নির্দেশে’ এবং অন্য একটি অভিযোগে ‘হত্যা করেছেন’ এর স্থলে ‘হত্যা অথবা হত্যায় সহযোগিতা করেছেন’ বলে সংশোধন করা হয়। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। ৮৪ পৃষ্ঠার এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগে গণহত্যা, গণহত্যা সংঘটনে ষড়যন্ত্র, মানবতাবিরোধী অপরাধসমূহের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করে প্রসিকিউশন। গত বছরের ১৬ এপ্রিল প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কামারুজ্জামানের মামলাটি প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ সুবিন্যস্ত ও যথাযথ হয়নি মর্মে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ১১ জানুযারি ট্রাইব্যুনাল একই কারণে ফিরিয়ে দেন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ। পরপর দুইবার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে না নিয়ে ফিরিয়ে দেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের ব্যর্থতার কারণে। ২০১০ সালের ১৩ জুলাই একটি গণহত্যা মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২১ জুলাই এ নেতার মানবতা বিরোধী অপরাধ তদন্ত শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এরপর ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে ট্রাইব্যুনালে গ্রেফতার দেখানো হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ ও ট্রাইব্যুনাল-২ ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে একই ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
অপরদিকে, স্লোগানে স্লোগানে আবারো মুখরিত শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর। ‘আর কোনো দাবি নাই, কামারুজ্জামানের ফাঁসি চাই’ কণ্ঠে এমন স্লোগান নিয়ে গণজাগরণমঞ্চে হাজির হয়েছেন প্রতিবাদী জনতা। ৮ মে (বুধবার) সন্ধ্যা থেকে ছোট ছোট মিছিল এসে সমাবেত হয় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে। বৃহস্পতিবার যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কামারুজ্জামানের মামলার রায়কে কেন্দ্র করেই শাহবাগে আবার জনতার এই ঢল। গণজাগরণমঞ্চের সংগঠক ব্লগার মারুফ রসুল বলেন, “আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এ অবস্থান। আমাদের কর্মসূচিতে ছিল, যে দিনই কোনো যুদ্ধাপরাধীর রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে, সে দিন থেকে রায় হওয়া পর্যন্ত এখানে অবস্থান নেব। সে জন্য আজকের এ অবস্থান।” শাহবাগের গণজাগরণমঞ্চ থেকে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘জামায়াতের অপর নাম হেফাজতে ইসলাম’, ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই শফী হুজুরের ফাঁসি চাই’। বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, “গণজাগরণমঞ্চের স্থাপনা ভেঙে দিলেও এর চেতনাকে কেউ ভেঙে দিতে পারবে না। যখনই যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের দিন ঘোষণা করা হবে, তখন থেকেই আমরা শাহবাগে অবস্থান নেব।”