কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে একাত্তরে বদিউজ্জামান হত্যা, প্রভাষক আব্দুল হান্নানকে নির্যাতন ও টেপা মিয়াসহ ৫ জনকে হত্যাসহ পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগে রয়েছে। ৯ মে (বৃহস্পতিবার) বেলা সোয়া ১১টা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২এ জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মামলার রায় পড়া শুরু হয়। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় রায় পড়া শুরু হয় ট্রাইব্যুনাল-১ এ। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজনভ্যানে করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে।
সকাল ১০টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের-২ এর চেয়ারম্যান বিচারক ওবায়দুল হাসান এবং অপর দুই সদস্য মজিবুর রহমান মিয়া ও শাহিনুর ইসলাম ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেছেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ট্রাইব্যুনালে পৌঁছান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও বেশ কয়েকজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল। দুটি গাড়িতে করে তারা প্রবেশ করেন। সকাল ১০টার দিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ট্রাইব্যুনালে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘিরে জাতির যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, সে হিসেবে কামারুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনও একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এছাড়াও বেলা ১১টায় মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে র্যালি করেন। সংগঠনের সভাপতি হেলাল মোর্শেদের নেতৃত্বে রায় পর্যন্ত তারা ট্রাইব্যুনালের ফটকে অবস্থান করবেন বলে জানান। কামারুজ্জামানের রায় ঘিরে বুধবার থেকেই ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের আশপাশের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে র্যাব-পুলিশ। অভিযোগের মধ্যে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত অপরাধে কামারুজ্জামানের সংশ্লিষ্টতা ও দায়বদ্ধতা আছে বলে জানিয়েছেন আদালত। তবে তার বিরুদ্ধে ৬ ও ৭ নং অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগ হলো :
১ বদিউজ্জামান হত্যা
কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে ’৭১ সালের ২৯ জুন নালিতাবাড়ী থানার কালীনগর গ্রামে ফজলুল হকের ছেলে বদিউজ্জামানকে রামনগর গ্রামের আহম্মদ মেম্বারের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। এরপর তাকে নির্যাতন করে আহম্মদনগরের রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে লাশ কাঠের পুলের নিচে পানিতে ফেলে দেয়া হয়।
২ প্রভাষক আব্দুল হান্নানকে নির্যাতন
কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা একাত্তরের মে মাসের এক দুপুরে শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে মাথা ন্যাড়া করে, গায়ে ও মুখে চুনকালি মেখে গলায় জুতার মালা দিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় চাবুক দিয়ে পেটাতে পেটাতে শেরপুর শহর ঘোরানো হয়।
৩ সোহাগপুরে গণহত্যা
কামারুজ্জামানের পরিকল্পনা ও পরামর্শে একাত্তরের ২৫ জুলাই ভোরে রাজাকার, আলবদরসহ পাকবাহিনী নালিতাবাড়ি থানার সোহাগপুর গ্রাম ঘিরে ফেলে। এরপর তারা ১২০ জন পুরুষকে ধরে এনে হত্যা করে। আর ধর্ষণের শিকার হন গ্রামের মহিলারা।
৪ গোলাম মোস্তফা হত্যা
কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা ’৭১ সালের ২৩ অগাস্ট সন্ধ্যায় গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে ধরে নিয়ে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে বসানো আলবদর ক্যাম্পে রাখা হয়।
মোস্তফার চাচা তোফায়েল ইসলাম এরপর কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তার ভাতিজাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই রাতে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা গোলাম মোস্তফা ও আবুল কাশেম নামের আরেক ব্যক্তিকে মৃগি নদীর ওপর শেরি ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গুলি করে। গুলিতে গোলাম মোস্তফা নিহত হলেও হাতের আঙ্গুলে গুলি লাগায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান আবুল কাশেম।
৫ টেপা মিয়াসহ পাঁচজনকে হত্যা
কামারুজ্জামানের নির্দেশে একাত্তরে ২৭ রোজার দিন দুপুরে টেপা মিয়ার বাড়ি ঘেরাও করে আলবদর বাহিনী। এরপর টেপা মিয়াসহ পাঁচজনকে হত্যা করা হয়।
৬ লিয়াকতসহ আটজনকে হত্যা
শেরপুরের চকবাজারের বাসা থেকে একাত্তরে রমজান মাসের মাঝামাঝি এক সন্ধ্যায় মো. লিয়াকত আলী ও আরো ১১ জনকে ধরে নিয়ে ঝিনাইগাতী আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায় আলবদররা। এরপর তিনজন ছাড়া বাকি সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
৭ দিদারসহ কয়েকজনকে নির্যাতন
একাত্তরের নভেম্বরে দিদারসহ কয়েকজনকে ময়মনসিংহ শহরের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায় আলবদর বাহিনী।