ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটার ব্যবহারে সাবধান ।। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পলাতক!
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটারের স্ট্যাটাস, যোগাযোগ আলোচনা, ভিডিওচিত্র ও স্থিরচিত্র ব্যবহারে সাবধান! কোনো স্ট্যাটাসে যদি অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোনো আলামত পাওয়া যায়, তাহলে ১৪ বছরের জেলের ঘানি টানতে হতে পারে। কারণ সংসদে সদ্য পাশ হওয়া সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠনের ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটার বা ইন্টারনেটের যেকোনো মাধ্যমের অপরাধসংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা অথবা অপরাধসংশ্লিষ্ট স্থির ও ভিডিওচিত্র অপরাধের সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আদালতে উপস্থাপন করতে পারবে এবং তা আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে। যদিও প্রচলিত সাক্ষ্য আইনে এ ধরনের আলামত আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়।
মঙ্গলবার ‘সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) বিল ২০১৩’ জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। তবে বিল পাসের বিরোধিতা করে বিরোধী দল ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে সংসদ থেকে মাত্র দুই মিনিটের জন্য প্রতীকী ওয়াকআউট করে। ওয়াক আউটের আগে মওদুদ আহমদ বলেন, শুধুমাত্র বিরোধী দলের গণআন্দোলন দমনের জন্য এ আইনে সংশোধন আনা হয়েছে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের পর এ আইনটি হবে আওয়ামী লীগ সরকারের আরেকটি কালো আইন। তাই কালো আইনটি পাসের প্রতিবাদে আমরা সংসদ থেকে ওয়াকআউট করছি।
এদিকে, সংবিধানের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক হতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তা লাভের অধিকার থাকবে এবং চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকবে। এ অবস্থায় সামাজিক সাইটের আলোচনা যদি আলামত হিসেবে আদালতে উপস্থাপিত হলে জনগণের গোপনীয়তা বিঘ্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন কোনো ব্যক্তি বা সত্তা অপরাধ করার চেষ্টা চালালে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য উক্ত ব্যক্তি বা সত্তার প্রধান সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। চলতি বছরে বাংলাদেশে ফেসবুকে নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজা পরিচালনাকারী ইমামকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের এক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই মামলায় তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠন হয়। বিচারক মো. জহুরুল হক আগামী ১৬ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুহুল আমীন তার ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু কামনা করে (পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ফল তারেক ও মিশুক মুনীরসহ নিহত ৫: সবাই মরে, হাসিনা মরে না কেন?) স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাস নিয়ে ১৮ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জাবির জামায়াতপন্থী শিক্ষকের ঔদ্ধত্য’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ আদালতের নজরে নেয়ার পর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে এবং ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এই স্ট্যাটাস দেয়ায় হাইকোর্ট ওই বছরের ১৭ অক্টোবর তাকে আদালতে আসার নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের এ তলবে হাজির না হওয়ায় ১২ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর তার বিরুদ্ধে আদালত তিনবার আদেশ দিলে ওই শিক্ষক আদালতে হাজির হননি বা কোন জবাব দেননি। আদালত অবমাননার রুলের জবাব না দেয়ায় তাকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করতে আইজিপিকে নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২৪(ক) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করতে বলেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির খণ্ডকালীন প্রভাষক রুহুল আমিন ২০০৮ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়ার পরের বছর থেকে বিনা বেতনে শিক্ষা ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন।