সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তো?
মীর আব্দুল আলীম:১৫ জুন। রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এই চার সিটি কর্পোরেশনে করপোরেশন নির্বাচন। সুষ্ঠ নির্বাচন হবে তো? বর্তমান নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচন পরিচালনায় কতটা শক্তিশালী? বর্তমান কমিশন কি নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে পারবে? নাকি সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কমিশন পরিচালিত হবে? আর অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হলে কারাইবা জয়লাভ করবে? এমন প্রশ্ন এখন ভোটার পাশাপাশি গোটা দেশবাসীর। অরাজনৈতিক হলেও এবার নির্বাচনে পুরো রাজনৈতিক আমেজ লক্ষ করা গেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের প্রেষ্টিজি নির্বাচন এটি। তাই জয়লাভে উভয় দলই বেশ মরিয়া। আর এ নির্বাচনে জয় পরাজয়ের উপরই নির্ভর করছে আগামী সংসদ নির্বাচন কি হবে? তাই ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টায় কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি। অরাজনৈতিক এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দুই পক্ষই প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে। সরকার যে কোনো মূল্যে নিজ দল সমর্থিতপ্রার্থীদের বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। শুরুতে তেমন গুরুত্ব না দিলেও পরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নামতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয় হাইকমান্ড। চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর প্রচারণা দেখভালের জন্য সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে মাঠে পাঠানো হয়। স্থানীয় এ নির্বাচনকে দুই দলই প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে নিয়েছে। এ নির্বাচনে কারা জয়লাভ করবে? এ জয়ের তরী বেয়ে কারাইবা আগামীতে ক্ষমতায় যাবে? জনগন কোন দলের হাতে দেশের ক্ষমতা নেস্ত করবে তা এ নির্বাচনেই তা আঁচ করা সম্ভব হবে। বলা অপেক্ষা রাখে না যে এ নির্বাচনের পরই ঘুরে দাঁড়াবে দেশ। বিরোধীদল আগামী সংসদ নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, সেটাও নির্ভর করছে এ সিটি নির্বাচনের নিরপেক্ষতার উপর। সে দিকে জনগনও তাকিয়ে আছে। বিএনপি তাই আপাতত কোন আন্দোলনেও যাচ্ছে না। এ নির্বাচনে কি হবে সে দিকে খেয়াল রেখেই তারা এখন কোন কর্মসূচি দিচ্ছে না। নির্বাচনের পরেই নাকি তারা সিদ্ধান্ত নেবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিরোধীদল বিএনপি ৪ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জয়ের জন্য বেশ আশাবাদী। আর এ নির্বাচনে জয়ি হলে আগামী সংসদ নির্বাচনের তাদের জয়েরে পথ সহজ হবে। আওয়ামীলীগও জয়ের বেপারে বেশ মরিয়া।কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। নির্বাচনে সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন দুই জোটের শীর্ষ দু’নেত্রী। চার সিটি করপোরেশনের আশপাশের জেলা থেকেও দুই জোটের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়। তারা প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। দুই জোটের জমজমাট প্রচার এবং নির্বাচনী তৎপরতায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে ভোটারদের মাঝেও। চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে থাকায় দুই দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ ৪ সিটি নির্বাচন। এটি যেন দুই দলের সামনে জনপ্রিয়তা পরীক্ষার কঠিন চ্যালেঞ্জ। সরকারের শেষ সময়ে নির্বাচনের ফলাফলে সরকারের প্রতি জনআস্থার বিষয়টি ফুটে উঠবে বলে মনে করছেন বিশে¬ষকরা। অন্যদিকে বিরোধী জোটের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে জনগণের সমর্থনের বিষটি নির্বাচনে স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন তারা। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচন প্রশ্নে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসে ততই এ নির্বাচন দুই বড় রাজনৈতিক গোষ্ঠীর লড়াইয়ের দিকে ধাবিত হয়। এ নির্বাচনে সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশাসন কি ভূমিকা নেয় সেটা দেখার বিষয়। বিরোধী জোটের সমর্থিত প্রার্থীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিংবা নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমকে ইস্যু করে ভোট বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নেয় কিনা সেটা দেখার জন্য ১৫ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের ইচ্ছে ছিলো এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী নামানো হোক। সরকার তা চায় না। নির্বাচন কমিশনও তা বাস্তবায়নে উৎসাহী নয়। তাই সেনা মোতায়েন ছাড়াই নির্বাচন হচ্ছে। কাজেই চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ভোট গ্রহণ, ভোট গণনা, নির্বাচন অনুষ্ঠান ইত্যাদি প্রশ্নে রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে পড়ে কিনা দেখার বিষয় সেটাও। ধর্মভিত্তিক ভোটাররা কি অবস্থান নেয়, সংখ্যালঘু ভোটারদের মনস্তত্ত্বে কোনো পরিবর্তন আসে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। চার সিটি কর্পোরেশনের ভোটার সংখ্যা বেড়েছে স্বল্পসংখ্যায়। ননপার্টিজান তরুণ ভোটাররা কোন দিকে ঝুঁকে সেটাও বিবেচ্য। তবে গতবারের ভোটের হিসাব মাথায় নিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, চার সিটি কর্পোরেশনের গতবারের ফলাফলে ব্যাপক পরিবর্তন অবধারিত। জোট, ভোট আর আওয়ামী লীগের গত পাঁচ বছরের শাসনের ওপর জনগণ কতটা ভরসা করতে পেরেছে তার একটা হালকা ছোঁয়া নামে নির্দলীয় কিন্তু বাস্তবে দলীয় এই নির্বাচনে দেখা যাবে। দুটিতে আওয়ামী লীগ, দুটিতে বিএনপি প্রার্থীর জয়ী হবার সম্ভাবনা ব্যাপক। তবে, ভোটের মাঠের অঙ্ক বদলে গেলে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন দেখলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। সেই ফল দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামীকাল ১৫ জুন পর্যন্ত।
২০০৮ সালের ৪ আগষ্ট । ১/১১ এর সেনা সমর্থিত-তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমল। সে সময় চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থিত প্রার্থীরা। এর পরই ঘুওে দাড়ায় আওয়ামীলীগ। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্দান্ত প্রতাপের শাসনের শেষে ২০০৭-২০০৮ সাল ছিল বিএনপির জন্য এক অবর্ণনীয় রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সময়। বেগম জিয়ার নির্দেশে তখন দলের কাজ পরিচালনা করছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। জরুরি অবস্থার মধ্যে সীমিত রাজনীতির শর্তে নানারকম বিধিনিষেধের মধ্যেই তখনকার তুলনামূলক সংগঠিত আওয়ামী লীগ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে রাজনৈতিক সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। অন্যদিকে বিপর্যস্ত বিএনপি চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না এই দোদুল্যমানতায় ভুগতে থাকে অবিরাম। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধায় পুরোপুরি রাজনৈতিক অবয়বে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে নিমরাজি থাকে খোন্দকার দেলোয়ার গং। তৃণমূলের তুখোড় চাপ সত্ত্বেও খোন্দকার দেলোয়ারকে দিয়ে এ নির্বাচনে দলগতভাবে বিএনপির অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করা যায়নি। এরই মধ্যে ২০০৮ সালের ০৪ আগস্ট চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির দোদুল্যমানতার কারণে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট-এ বিএনপি এখন একক কোনো প্রার্থী দিতে পারে নাই। সর্বত্রই বিএনপির একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারান্তরীণ থাকলেও সে সময়ের নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষমতাবানদের একটা বড় অংশ জেলবন্দী থাকে। বিশেষত রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু, বরিশালে মজিবর রহমান সারোয়ার নির্বাচনে দলের জন্য কোনো ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনায় সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় হেভিওয়েট নেতা তালুকদার আবদুল খালেক, সিলেটে কারান্তরীণ বদরুদ্দীন কামরান সেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেন। সে তুলনায় এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি দলীয় সরকারের অধীনে, রাজনৈতিকভাবে সংঘাতময়, বৈরী অথচ মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে এখনও পর্যন্ত সরকারের অনিচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য-দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও দেখা যায়নি। এরকম রাজনৈতিক গুমোট আবহাওয়ার মধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এবারের চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই প্রার্থী হয়েছেন গতবারের বিজয়ী আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়ররা। সেক্ষেত্রে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থিতায় বদল এসেছে সিলেট এবং বরিশালে। দুই বড় দল তাদের জোটের সমর্থন নিয়েই প্রার্থীদের মাঠে নামিয়েছে। ১৪ দলীয় এবং ১৮ দলীয় জোট এক্ষেত্রে বড় কোনো কোন্দলের মুখে পড়েনি। শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতিক্রমেই প্রার্থিতা বজায় রাখা গেছে। ব্যতিক্রম খুলনা এবং বরিশাল। খুলনায় মহাজোট সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। অন্যদিকে বরিশালে সরকার দলীয় একজন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব বিদ্রোহী বা দলছুট প্রার্থীরা মূল প্রার্থীদের কতটুকু ক্ষতি করতে পারবেন সেটা বলা কঠিন। তবে এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে ভোট যত এগিয়ে আসছে নির্বাচন দুই জোটের মূল প্রার্থীদের মধ্যে ততই সীমাবদ্ধ হয়ে আসছে।
এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক উদ্বেগ বাড়ছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী মস্তানদের ভয়ে ভোট দিতে যেতে পারবেন কিনা সে আশঙ্কাপ্রকাশ করছেন তারা। বিশেষ করে ১৮ দলীয় জোট সমর্থিতপ্রার্থীর কর্মীদের মারধোর করা হচ্ছে এবং ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে সুনিদৃষ্ট অভিযোগ তোলার পরওপ্রশাসন নির্বিকার।প্রশাসন কার্যত ১৪ দল সমর্থিতপ্রার্থীর অনুকূলে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যস্ত হওয়ায় এসব অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি তোলা হচ্ছে। অথচ নির্বাচন কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন র্নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে না। নির্বাচন কমিশনের এ অবস্থান নিয়ে এখনোইপ্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উলে¬খ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৮৬ হাজার ৯২৭ জন। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৪০ হাজার ৬৪৭ জন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটার আছেন দুই লাখ ১০ হাজার ৫৩০ জন। সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং নয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৭ জন। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৬৫২ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৪২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ করে সংশি¬ষ্ট বিভাগের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ সংখ্যা নির্ণয় করেছেন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ১০৩টি, খুলনায় ২১৫টি, বরিশালে ৬০টি ও সিলেটে ৪৫টি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংশি¬ষ্টরা জানান, যে কোন নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলোকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছেÍগুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র (ঝুঁকিপূর্ণ), কম গুরুত্বপূর্ণ (কম ঝুঁকিপূর্ণ) এবং সাধারণ কেন্দ্র। আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচন সংশি¬ষ্টরা গুরুত্ব বিবেচনায় এসব কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বাড়তি নিরাপত্তা নিয়ে থাকেন। কম গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ কেন্দ্রে শুধু পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের ২২ জন সদস্য নিয়োগ করা হয়। আর অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার থাকবেন ২৪ জন। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্সও ওই কেন্দ্রেপ্রয়োজনে অবস্থান এবং বার বার টহল দিয়ে থাকেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নির্ধারণ করতে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এগুলো হলোÍনির্বাচনেপ্রতিদ্বন্দ্বীপ্রার্থীর বাড়ির নিকটবর্তী কেন্দ্র, একটি কেন্দ্রে স্বাভাবিক ভোটারের অনুপাতে অধিক সংখ্যক ভোটার,প্রশাসনিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিগত নির্বাচনে দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা অতীত রেকর্ড। সর্বশেষ হালনাগাদ ভোটার তালিকানুযায়ী রাজশাহী সিটিতে ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৭ জন। আর ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩০টি, ভোটকেন্দ্র ১৩৭টি, ভোটকক্ষ ৮৭১টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ আছে ১০৭টি। এ সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ১শ ৩টি। খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৪৭ জন। আর ওয়ার্ড সংখ্যা ২৮৮টি। এখানে ভোটকেন্দ্র ২৮৮টি, স্থায়ী ভোটকক্ষ ১ হাজার ৪২৮টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ ৩৩টি। এ সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ২১৫টি। এর আগে ২৩৯ কেন্দ্রের মধ্যে এ সংখ্যা ছিল ১৯৫টি। বরিশাল সিটিতে ভোটার ২ লাখ ১০ হাজার ৫৩০ জন। এ সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩০টি। এখানে কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০টি, স্থায়ী ভোটকক্ষ ৬১৪টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩৭টি। এ সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৬০টি। সিলেট সিটিতে ভোটার ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৭ জন। আর ওয়ার্ডের সংখ্যা ২৭টি। মোট কেন্দ্র ১২৭টি। স্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৯৬টি এবং অস্থায়ী কক্ষের সংখ্যা ১১টি। এ সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৫টি। এর পরও আশার আলো ফুরিয়ে যায়নি। নির্বাচনের দিন নির্বাচনী এলাকায় বিপুল সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। আমরা আশাকরি, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের অপপ্রভাব থেকে নির্বাচনকে কলুষমুক্ত রাখবে। সবার সম্মিলিতপ্রচেষ্টা, সহযোগিতা ও অংশগ্রহণে চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সব মহলের কাছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মর্যাদা পাক। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হোক, দেশের গণতান্ত্রিক ধারা আরও একধাপ এগিয়ে যাক, আমরা সেই প্রত্যাশাই করি। আমরা আশা করব নিজেদের সুনামের স্বার্থে এ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত অতীতের সব নির্বাচনের মতো চার সিটি নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। দশম সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সমঝোতার পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে চার সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সরকারকে যত্নবান হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা কতটা সক্ষমতার পরিচয় দেবে তা এখন দেখার বিষয়।
[লেখক: মীর আব্দুল আলীম, কলাম লেখক ও সম্পাদক- নিউজ-বাংলাদেশ ডটকম।]
e-mail-newsstore09@gmail.com