শ্রমিকদের গ্রুপ বীমার নামে মহাজালিয়াতি করছে বিজিএমইএ
সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ শ্রমিকদের গ্রুপ বীমার নামে মহাজালিয়াতি করছে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকেরা। কারখানার প্রতিটি শ্রমিকের নামে বীমা থাকার কথা থাকলেও কারখানা প্রতি মাত্র ২০ জন শ্রমিকের নামে বীমা করা হচ্ছে। আর বিজিএমইএ’র তত্ত্বাবধানেই শ্রমিক স্বার্থবিরোধী এই কাজ চলছে। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)’র সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি হলেও মাত্র দুই হাজার তিনশ কারখানার ২০ জন করে শ্রমিকের বীমা করা আছে। বিজিএমইএ বর্তমানে বেসরকারি বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বীমা করছে। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ড, রানা প্লাজায় ভবন ধস-এমন বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়তই দেশে পোশাক শ্রমিক আহত ও নিহত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ আর আহত শ্রমিকদের প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতিবোধ নেই মালিকদের। নিজেদের রক্ষায় ব্যস্ত বিজিএমইমএর সদস্যভুক্ত মালিকেরা। সম্প্রতি সাভারে রানা প্লাজা ধসে পাঁচটি গার্মেন্টে নিহত শ্রমিকদের নামে আলাদা কোনো বীমা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর ডেপুটি সেক্রেটারি ফারজানা শিরিন জানান, সাভারের ঘটনায় নিহত এবং আহত সব শ্রমিকদের নামে কোম্পানির পক্ষ থেকে বীমা রয়েছে। কারখানার তালিকা অনুসারে নিহত এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। এসব কথার সত্যতার জন্য কারখানাগুলোর কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, সব কাগজপত্র দেখানো যাবে না। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বিজিএমইএ’র এই তথ্য সঠিক নয়। বীমা কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সাভারের ধসে পড়া ভবন রানা প্লাজার পাঁচ পোশাক কারখানার একটিতেও শ্রমিকদের জন্য বীমার ব্যবস্থা ছিল না। ইথার টেক্স, নিউ ওয়েভ, নিউ ওয়েভ বটমস, নিউ ওয়েভ স্টাইল, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেডের পক্ষ থেকে ২০ জন করে মোট পাঁচটি সীমিত বীমা করা হয়েছে। বীমা কোম্পানি শুধুমাত্র ১০০ জনের বীমার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। এ বিষয়ে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের নির্বাহী পরিচালক ড. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বিজিএমইএ তো শ্রমিকদের জন্য কাজ করে না। তারা নিজেদের রক্ষা করতে দায়সারা বীমা করে। এটি শ্রমিকের নিরাপত্তা বীমার নামে আইওয়াশ ছাড়া কিছুই না। সাভারের পাঁচটি কারখানার জন্য বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে পাঁচটি সীমিত বীমা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সামান্য প্রিমিয়ামের কারণে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বীমা করা হয় না। তবে এই বীমা নির্বাহী জানান, দেশে ব্যবসা করছে এমন বিদেশি পোশাক কারখানাগুলোতে সব শ্রমিকের জন্য বীমা করা হয়ে থাকে। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আগে বিজিএমইএ’র সাথে চুক্তি ছিল জীবন বীমা করপোরেশনের। তবে বিজিএমইএ’র অনিয়মের কারণে জীবন বীমা তাদের সঙ্গে এখন আর ব্যবসা করছে না বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছে।
শ্রম আইনের ৯৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো কারখানায় ২০০ জন শ্রমিক থাকলেই গ্রুপ বীমা করার কথা পোশাক কারখানাগুলোর। কিন্তু এই আইন মানছে না কেউ। বিজিএমইএ নিজেই মনে করে না যে, শ্রম আইনের এই ধারা মানতে হবে। আইন অনুযায়ী সব শ্রমিকদের নামে একটি করে বীমা থাকতে হবে। যাতে কোনো শ্রমিক আহত অথবা নিহত হলে তার জন্য ক্ষতিপুরণ দেয়া যায়। কিন্তু বীমা করলে প্রিমিয়ামের টাকা দিতে হয় বলে শ্রমিকদের নামে আলাদা করে কোনো বীমা করেন না মালিকরা। আইনের বাধ্যবাধকতা এবং বিদেশি ক্রেতাদের শর্ত পূরণের জন্য কারখানা প্রতি ২০ জন শ্রমিকের নামমাত্র বীমা করা হয়। আর এই বীমার প্রমাণপত্র দেখিয়ে মালিকেরা একদিকে আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থাভাজন হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শ্রম আইন না মানলে মালিকদের সাজা দেয়া হয় না, সাজা দেয়ার ঘটনা সেভাবে কখনো ঘটেনি। শ্রম আইন লঙ্ঘন করলে ৩০২ ধারায় সামান্য কিছু জরিমানা দেয়ার বিধান রয়েছে। এ জন্য মালিকরা বিষয়টিকে আমলে নেয় না। সামান্য জরিমানা দিয়ে তারা পার পেয়ে যান। আমরা দাবি করেছি-শ্রম আইন লঙ্ঘন করলে ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় বিচারিক কার্যক্রম চালাতে হবে। শাস্তির বিধান থাকলে মালিকরা আইন লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকবে।