এবারও তরুপের তাস এরশাদ
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ আগমী নির্বাচনে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কাছে তুরুপের তাস হতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আগামী ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এরশাদের জীবনের শেষ নির্বাচন হতে পারে, আর তাই এই নির্বাচনে বাজিমাত করতে প্রথমে তার টার্গেট রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার। ৯১ পরবর্তী সব নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বিভিন্ন দল বরাবরই ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করেছে। তিনি আর কোন দলের সিঁড়ি হতে চান না বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুধু জাতীয় পার্টি নয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন নির্বাচনে যে জোট তাকে ভিড়াতে পারবে ক্ষমতারোহনের ক্ষেত্রে তাদের পাল্লাই ভারী হবে। সামনে নির্বাচন হবে কি হবে না তা নিয়ে যেমন সংশয় রয়েছে, তেমনি নির্বাচন হলে কোন দল ক্ষমতায় যাবে তা নিয়ে রয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ।
এদিকে, আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেবেন এরশাদ। মহাজোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মহাজোট ছেড়ে এককভাবে নির্বাচনের কথা এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জাতীয় পার্টির ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। এক সূত্র থেকে জানা যায়, ১৮ দলীয় জোট সম্প্রসারণ করে মহাঐক্যজোট করতে যাচ্ছে বিএনপি। এ জোটে যোগ দিতে যাচ্ছেন কাদের সিদ্দিকী, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আসম আব্দুর রবসহ জাতীয়তাবাদী সমর্থিত বেশ কয়েকটি ইসলামী দল। গত ২৯ জুন বনানী রাজউক মাঠে ঢাকা জেলা ও পার্শ্ববর্তী ৫ জেলার এক কর্মী সভায় জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি পিছিয়ে নেই। জাতীয় পার্টি ইতিমধ্যে দেশবাসীর আস্থা অর্জন করেছে। আগের চেয়ে জাপার অবস্থান অনেক শক্তিশালী। জাপা সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতা মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসার চাপ দিচ্ছেন। প্রায় ৪৭ প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে ৩৫ জনই মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির বেরিয়ে আসার পক্ষে। তারা মনে করেন, দুই দল বা জোটের সঙ্গে দর কষাকষির মতো আরও শক্ত অবস্থান তৈরি এবং নিজের ও দলের গুরুত্ব বাড়ানোর সময় এখন। তারা মনে করেন এই মুহূর্তে কোনো জোটে না গিয়ে একা থাকাই শ্রেয়। এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় না গেলেও দুই নেত্রীর ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হতে এরশাদকে লাগবে। তবে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এরশাদ এখন দলকে শক্তিশালী করতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে এককভাবে নির্বাচনের কথা বলে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। দুই বড় রাজনৈতিক দলের বাইরে ছোট দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। হেফাজতে ইসলামসহ বেশক’টি রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নিয়েছেন সম্প্রতি। এছাড়া নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়ানোর লক্ষ্যে দলের সার্বিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বড় পরিকল্পনা হচ্ছে ভুল শুধরে নতুন করে দ্বিধাবিভক্ত জাতীয় পার্টিকে এক করে পথ চলা, দলছুট নেতাদের জাপায় ফিরিয়ে আনা, ভেঙে যাওয়া জাতীয় পার্টিকে এক করার পরিকল্পনা। এরশাদ মনে করছেন, বর্তমান সময়ে দেশের জনগণ পরির্তন চায়। তারা এখন আর দুই নেত্রীকে ক্ষমতায় চায় না। তিনি মনে করছেন, এক সময় যারা তার ঘোর শত্রু ছিলেন, কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এখন তারাও বলছেন, ‘দুই নেত্রীর চেয়ে এরশাদ ভালো ছিলেন।‘ এটা তার দলের নির্বাচনী প্রচারনার একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা, সারাদেশের সংসদীয় আসনগুলোতে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় মানুষ তাকে চাইলেও তার মনোনীত ভালো প্রার্থী পাচ্ছেন না। আগামী নির্বাচনে সংসদীয় আসনগুলোতে ভালো ইমেজের প্রার্থী দিতে পারলে ভালো ফসল গড়ে তুলতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু বলেন, ২০১৩ সাল হচ্ছে জাতীয় জীবনে এবং জাতীয় পার্টির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর নির্বাচনের বছর। পরিবর্তনের বছর। জনগণের ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর বছর। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বছর। এসব বিষয় মাথায় রেখে জাতীয় পার্টি বছরের প্রথমদিন থেকেই মাঠে নেমেছে। পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। তারা এরশাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই মানুষের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। ভেঙে যাওয়া জাপা জোড়া লাগবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের মুখপাত্র কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, এরশাদ সাহেব বিচক্ষণ রাজনীতিক। একটি দলের নেতা-কর্মীরাই হলো দলের প্রাণ। তাই স্যার কর্মীদের চাওয়ার বাইরে যাবেন না বলেই আমার বিশ্বাস। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। আগামী নির্বাচনে জাপা এককভাবে নির্বাচন করবে। নির্বাচনের আগের কোনো জোটের সঙ্গে যাবে না, তবে প্রয়োজন হলে নির্বাচনের পরে জোট গঠন করা যেতে পারে। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুস সবুর আসুদ বলেন, আগামী নির্বচন যথাসময়ে হবে কি-না তা নিয়ে যেমন সংশয় রয়েছে, তেমনি নির্বাচন হলে কোন দল ক্ষমতায় যাবে তা নিয়ে রয়েছে হিসাব-নিকাশ। জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করেবে তার পর দেখা যাক কি হয়।