জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে জীব-বৈচিত্র্য
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ দেশের উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া ক্রমশ বৈরী আচরণ শুরু করছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বিলুপ্তি ঘটছে মৎস্যসম্পদ ও পশু-পাখি। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ প্রজাতির দেশী মাছ ও ২০ প্রজাতির পাখির বিলুপ্তি ঘটেছে। গত ৩৫ বছরে অর্ধশত নদী ও খাল-বিল মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলে গত ২৫ বছরে প্রায় ১৫ হাজার একর বনভূমি বেদখল হয়েছে। উজাড় করা হয়েছে বৃক্ষ। বনভূমি উদ্ধারে মামলা করেও ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃক্ষ নিধনে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে।
জীব বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনে ২০ প্রজাতির পাখির বিলুপ্তি ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে শকুন, চিল, ঘুঘু, হড়িয়াল, মাছরাঙ্গা, কাঠঠোকরা, তিলা ঘুঘু, ডাহুক, পানকৌলি, বগিলা, কানা বগিলা, কানা কুহু, পেঁচা, হুতুমপেঁচা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া গুইসাপ, বেজী, নেউল প্রভৃতি সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। বিলুপ্তি ঘটেছে নন্দই, ভ্যাদা, চেলা, কানিয়া, রাখলা, পবদা, কৈ, মৃগেল, কালিবাউশ, শোল, বাইম, ফ্যাসা, খলিশা, বাচা, বাইজা, চাপিলা, পুঁটি, সরপুঁটি, কাকিলা, আইড়, ফলি প্রভৃতি দেশী প্রজাতির সুস্বাদু মিঠা পানির মাছ। বিলুপ্ত এসব দেশী প্রজাতির মাছের বদলে স্থান করে নিয়েছে বিদেশী প্রজাতির মাছ সিলভারকার্প, জাপানী রুই, থাই পুঁটি ও থাই কৈ। বিলুপ্ত নদীর পাঙ্গাশের স্থান দখল করে নিয়েছে পুকুরে চাষ করা পাঙ্গাশ ও থাই চাপিলা।
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরেন্দ্র এলাকায়। জীব বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, নদ-নদী ও খাল-বিলের অস্তিত্ব হারানো, শহর, বন্দর ও গ্রামের অসংখ্য পুকুর-জলাশয় ভরাট করে বসতি গড়ে তোলা ও আবাদি জমিতে পরিণত করার ফলে উত্তরাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু ও আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। জেলা প্রশাসনের মানচিত্র (নকশা) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ৩০/৩৫ বছরে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, রংপুর, সিরাজগঞ্জ জেলার ছোট-বড় ১৫ হাজারেরও বেশী পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এসব পুকুর ভরাট করে দালান-কোঠা, বসতবাড়ি ও আবাদি জমিতে পরিণত করেছে প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসীরা। এছাড়া আবাদি জমিতে অধিক ফলনের আশায় ব্যাপকহারে সার, কীটনাশক ওষুধ ব্যবহারে পশু-পাখি ও মাছের বিলুপ্তি ঘটছে। নদ-নদীর পানি প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ নদী করতোয়া, ইছামতি, বড়াল, গুমানি, আত্রাই, দইভাঙ্গা, হুরাসাগর, বুড়িতিস্তা, দইজান, নাওতারা, চাড়ারখোড়া, বুড়িকড়া, দেওনারী, খরখড়িয়া, যমুনেশ্বরী, চিকলি, মহানন্দা, ছোট যমুনা প্রভৃতি নদী মানচিত্র (নকশা) থেকে অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। সেসব স্থান দেখে মনে হয় না যে, একদিন এখানে স্রোতস্বিনী নদী ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরিপ থেকে জানা যায়, পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা প্রভৃতি নদ-নদীর গতি-প্রকৃতিই হারিয়ে গেছে। গত ৩৫ বছরে এসব নদীর তলদেশে ২৫ থেকে ৩০ ফুট বালির স্তর জমে গভীরতা হ্রাস পেয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীর তলদেশে সাড়ে তিন লাখ টন বালির স্তর জমছে। বছরের ৯ মাসই এসব নদ-নদী পানিশূন্য থাকে। প্রধান নদ-নদী ভরাট হওয়ায় অভ্যন্তরীণ নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।