মিশরে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করলো সেনাবাহিনী
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্কঃ অবশেষে কায়রোর তাহরীর স্কয়ারের লাখো জনতার বিক্ষোভের মুখে এবং সামরিক অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট মুরসি সরকারের পতন হয়েছে। সেনাবাহিনীর বেঁধে দেয়া ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম শেষে সেনাবাহিনী মিশরে নতুন সংবিধান স্থগিত করে প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে উৎখাত করে। প্রধান বিচারপতিকে ইতোমধ্যে মিশরের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানও করা হয়েছে। ৩ জুলাই (বুধবার) বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে এই মুরসিকে উৎখাতের ঘোষণা দেন। তিনি সাংবিধানিক পরিষদকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার কথা জানান। একই সাথে সেনাবাহিনী প্রধান মুরসি বিরোধী আন্দোলন এবং প্রেসিডেন্টের অনড় অবস্থানের ফলে সৃষ্ট ‘রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নতুন ‘রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। এর আগে মঙ্গলবার এক রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির সংকট নিরসনে মিশরের সেনাবাহিনী ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয়। আল্টিমেটামে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি এবং বিরোধীদলের মধ্যে সংঘাত নিরসন করতে না পারলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি রোডম্যাপ দেয়া হবে। সেই সাথে রাজনৈতিক দলগুলো যদি এ আল্টিমেটামে সাড়া না দেয় তাহলে দেশের জনগণের স্বার্থে যা করার তাই করা হবে।
সেনাবাহিনীর এমন আল্টিমেটামের পর মঙ্গলবার এক টেলিভিশন ভাষণে মুরসি দেশটির সেনাবাহিনীর বেঁধে দেয়া এ সময়সীমা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, যেকোন মূল্যে তিনি তার গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক পদে অটল থাকবেন। মুরসি বলেন, ‘দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত মিসরের সকল জনগণ তাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে।’ মুরসির এমন ঘোষণার পরই সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। সেনাবাহিনী প্রথমে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন দখল করেন। এরপর সাঁজোয়া যান কায়রোর রাস্তায় অবস্থান নেয়। কায়রোর রিপাবলিকান গার্ডের একটি কম্পাউন্ডে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। টেলিভিশনে মিশরের জেনারেল আল-সিসির ঘোষণা পর তাহরির চত্বরে আন্দোলনরত মুরসিবিরোধীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। আতশবাজির আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রাতের আকাশ। হর্ষধ্বনি আর গগণবিদারী চিৎকার করে তারা সেনাবাহিনীর এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। ইতোমধ্যে মুরসির দল ব্রাদারহুডের নেতাদের মালিকানাধীন সকল টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে মোহাম্মদ মুরসি’র প্রেসিডেন্টসিয়াল ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টায় প্রকাশিত এক পোস্টে সামরিক বাহিনীর এই অভ্যুত্থানকে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, রোববার দেশটিতে প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসির পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করে সর্বস্তরের জনগণ। এ সময় কায়রোর তাহরির স্কয়ারে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। ২০১১ সালের ক্ষমতা বদলের পর সেখানে এত বড় জনসমাবেশ আর দেখা যায়নি।