সমবায়ঃ অর্থনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম উৎস
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ প্রতি বছর জুলাই মাসের প্রথম শনিবার বিশ্বব্যাপী আর্ন্তজাতিক সমবায় দিবস পালিত হয়। দীর্ঘকাল আগে থেকে পালিত হলেও ১৯৯২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম শনিবারকে আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস ঘোষণা করা হয় (সিদ্ধান্ত ৪৭/৯০)। মূলত এই দিবসটি ঘোষণার অন্তরালে উদ্দেশ্য ছিলো একটি নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক সমবায় জোট গোড়ে তোলা। একশ’টি দেশের ৭৬০ মিলিয়ন সমবায়ীকে এক ছাতার নীচে একত্রিত করা। ১৯৯৪ সালে সিদ্ধান্তে গৃহীত হয় যে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমবায় অপরিহার্য। আর তাই ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর গৃহীত জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের (৪৯/১৫৫) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছরই উল্লিখিত দিন সমবায় দিবস পালনের জন্য সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমবায় সংস্থা, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বিশেষায়িত এজেন্সিগুলোকে আহ্বান জানানো হয়।
প্রথম থেকেই বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস পালন করছে। দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীর সকল সমবায়ীর মধ্যে সৌহার্দ স্থাপনের লক্ষে কাজ করা, বিশ্বের ব্যাপক অনুন্নত অসংগঠিত দরিদ্র জনগোষ্ঠির আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রচার কার্যক্রম করা, সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন কি করে সম্ভব তা সকলের সামনে তুলে ধরা। প্রকৃত অর্থে সমবায়ের মূল নীতিই হলো সকলের প্রতি সহযোগিতা সুলভ মনোভাবের সঞ্চার ঘটানো। এই সহযোগিতাই আন্তর্জাতিক সমবায় সংস্থার মূল চালিকা শক্তি। বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য এ সহযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। এ উপমহাদেশে সমবায় আন্দোলনের উন্মেষ ঘটেছিলো ১৯০৪ সালে। আজ এই চেতনা অর্থনীতির প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বিস্তৃত। বাংলাদেশের সমবায়কে ধরে রাখা হলেও তা কাঙ্খিত সাফল্য লাভ করতে পারেনি। কোটি কোটি মানুষের মাত্র প্রায় লক্ষাধিক লোক সমবায়ের পতাকাতলে সমবেত হতে পেরেছে। যদিও গরীব মেহনতি মানুষের জন্য সমবায় নির্ভরতা অর্জনের জন্য খুবই উপযোগী পন্থা। কারণ, সমবায়ের আবেদন ব্যক্তিকেন্দ্রীক নয় বরং সমষ্ঠিকেন্দ্রীক। সমবায়ের সম-অংশীদারিত্ব, সমপুঁজি, সমঝোতা ও পারস্পারিক হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ উৎপাদন বৃদ্ধির যৌথ প্রচেষ্টা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক সমবায় সংস্থা (আই এস এ) এর বিধি বিধান অনুসরণে সমবায় দিবসে সাতরং এর সমবায় পতাকা উত্তোলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা, আলোচনা ও র্যালী আয়োজিত হয়। সাত রং এর সমাহার রয়েছে সমবায় পতাকায়। সাত রং এর মিশ্রণে জন্ম নেয় সাদা রং। আর সাদা রং হচ্ছে শান্তি ও সৌহাদ্যের প্রতীক। আন্তর্জাতিক সমবায় দিবসের আহ্বান হচ্ছে বিশ্ব শান্তি, ভ্রাতৃত্ব এবং পারস্পারিক সহযোগিতা।
বিশ্বে সর্বপ্রথম সমবায় উদ্যোগ সংগঠিত হয়েছিলো ইংল্যান্ডে। ১৮৪৪ সালে ইংল্যান্ডের রডচেল শহরে ২৮ জন বেকার ও দরিদ্র তাঁতী বেতনভোগী কর্মচারী কারিগর মাত্র ২৮ পাউন্ড মূলধন নিয়ে সমবায় যাত্রা শুরু করে। অতি অল্প সময়ে তাঁরা জীবনযাত্রায় খুঁজে পায় অভূতপূর্ব সাফল্য। এতেই অনুপ্রাণিত হয় অন্যান্যরা। ফলে পর্যায়ক্রমে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে দারিদ্র বিমোচন, আতœকর্মসংস্থান এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সমবায়ের দ্রত প্রসার বিস্তার লাভ করতে থাকে। স্বল্পবিত্ত সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় মূলধন গঠন ও উৎপাদনমুখি লাভজনক কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে সদস্যদের অর্থনৈতিক কল্যাণ ও জীবনমানের উন্নয়ন সাধান সমবায়ের মূল প্রেরণা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও লভ্যাংশের সুষম বন্টন হচ্ছে সমবায়ের ভিত্তি। সর্বপরি এটি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের জন্য অর্থনৈতিক আন্দোলনের উৎস।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।