ডাকসু টু নাগরিক ঐক্য ভায়া আওয়ামী লীগ
মোমিন মেহেদী: আওয়ামী লীগ সরকার ও দলের দৃশ্যমান নেগেটিভ বিষয় নিয়ে সমালোচনা মূখর দলের সাবেক দুই প্রভাবশালী প্রতিভাবান ও আলোচিত নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মাহামুদুর রহমান মান্নাকে হঠাৎ করেই অন্য চেহারার দেখা যেতে পারে। এমন আশঙ্কা চলে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এখন সেই আশঙ্কার সাথে নতুন করে যোগ হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে আসার সম্ভাবনাও।
কেননা, সাবেক দুই ডাকসাইটে ছাত্রনেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মাহামুদুর রহমান মান্নার মধ্যে একজন নির্ভিকভাবে সত্য উঢ়ারনের পাশাপাশি সবসময় এগিয়ে চলেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে লালন করে। কিন্তু অন্য গড়ে তুলেছেন নাগরিক ঐক্য নামক একটি বহুমাত্রিক সংগঠন। তবে বাস্তবতা হলো, মিডিয়াতে বড় বড় কথা বলা ব্যাতিত নাগরিক ঐক্য কোন নতুনধারা নির্মাণ করতে পারেনি। সারাদেশে সর্বসাকুল্য ১০ টি জেলা কমিটি গঠনের খবর পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হলেও কার্যত তাও নিষ্ক্রিয় বলে আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এই পরিস্থিতিতে তারা না পারছেন ঘরকা হতে, না পারছেন ঘাটকা হতে। যে কারনে নতুন করে সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের দিকে। যে কোন সময় আবারো অতিতের মত তারা ফিরতে পারেন পুরোনো আশ্রয়স্থলেই। সম্প্রতি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং রাজনৈতিক সূত্র থেকে পত্রিকাগুলো লেখালেখি করছে যে, শিগগিরই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় করা হচ্ছে দলের সাবেক দুই সাংগঠনিক সম্পাদককে। দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে তাদের দলে সক্রিয় হবার বিষয়টি।
ইতিহাস সবসময় সত্য বলে। সেই সত্য ইতিহাসের পাতায় আমরা চোখ রাখলে দেখতে পাবো, ১/১১ এর পরবর্তী সময়ে সংস্কারপন্থী অপবাদের কারণে মনোনয়ন ও দলীয় পদ থেকে বঞ্চিত হয়ে রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন সাবেক প্রভাবশালী দুই মেধাবী ছাত্র নেতা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা বিভিন্ন ফোরামে নিজেদেরকে আ’লীগের কর্মী দাবি কের আসলেও কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে দেখা যায়নি। বরং সরকার ও দলের নানা নেগিটিভ বিষয়ে সমালোচনায় দুই জনই ছিলেন ব্যাপক সক্রিয়। মূলত: সরকার বা দলের জন্য তাদের কাজে লাগানো হয়নি। ১/১১ এর পরবর্তী সময়ে শীর্ষ সংস্কারপন্থী নেতারা নেত্রীর ক্ষমার আওতায় আসলেও এই দুই নেতাই ছিলেন বঞ্চিত। অনেকেই ধারনা করছেন, নাগরিক ঐক্যের জন্মও শ্রেফ না পাওয়ার বেদনা আর বঞ্চনার কষ্ট থেকে। সেই বেদনার অবসান করতে তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট। দলে না ফিরলেও মহাজোটে ফিরে মাহামুদুর রহমান মান্না তাঁর বেদনা ভুলবেন, একই সাথে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরও নৌকায় আবারো রাখবেন নিজেকে। এমনটা যখন হবে তখন নাগরিক ঐক্যের বর্তমান নেতাদের আর জলে পরে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া কোন উপায়-ই থাকবে না। বিশেষ করে যদি বলি, তাহলে বলতে হয় তাদের কথা। যাদেরকে মনোনয়ন দিয়ে ইতিমধ্যে পানিতে নামিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহামুদুর রহমান মান্না।
সম্প্রতি তিনি নাগরিক ঐক্য নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন। সেই খবর দেশের সবগুলো দৈনিক প্রকাশ না করলেও তারা ঠিকই করেছে। যারা ভূমি দস্যুতার আড়ালে সংবাদ মাধ্যম নামক গোয়ালঘর গড়ে তুলেছেন। আর লালন পালন করছেন গৃহপালিত গরুর মত করে সাংবাদিকদেরকে। সেই সাংবাদিকদেরকে বাধ্য করে প্রকাশ করা হচ্ছে বিভিন্ন মনগড়া সংবাদ, নিবন্ধ, প্রবন্ধ আর ফিচার। গড়ে তোলা হচ্ছে এশটি দালাল গোষ্ঠি। যাদের একমাত্র কাজ ভূমিদস্যুতে আড়াল করা। আর এই কাজে যেহেতু মাহামুদুর রহমান মান্নাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে দুইভাবে। এক. গণমাধ্যমে দুই. রাজনীতিতে। সে যাইহোক বলছিলাম, মাহামুদুর রহমান মান্নার রাজনৈতিক কর্মকান্ড প্রচার ও প্রকাশের কথা। সেই প্রচার ও প্রকাশের সূত্র ধরে জানা যায়, ঢাকার ১৪ আসনে নাগরিক ঐক্যের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন তিনি।
এখানে এশটি বিষয় বলে রাখি, আমার রাজনৈতিক কর্মকান্ড মাত্র ১৭ বছরের। বলা যায়, আমার শ্রদ্ধেয় রাজনীতিক মাহামুদুর রহমান মান্নার রাজনৈতিক জীবনের ৪ ভাগের একভাগ। তবুও ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার সাথে সম্পর্কটা অনেক গভীর। যে কারনে নতুন প্রজন্মের অনেক না জানা কথা জেনেছি খুব সহজে। তারা আর যাইহোক কখনোই তথাকথিত ছাত্র রাজনীতিকে ‘হ্যাঁ’ বলবে না। ‘হ্যাঁ’ বলবে না তথাকথিত রাজনীতিকদেরকেও। দিন বদলের রাজনীতিতে তারা আর রাজনীতিকদের হামলায় মৃত্যু বরণ করতে চায় না। আর চায় না বলেই এড়িয়ে যাচ্ছে তাদেরকে। তবে বিএনপি-জামায়াত বা আওয়ামী লীগের বাইরে রাজনীতিতে তৈরি দক্ষ- যোগ্য এবং সৎ নেতা পেলে গস্খহণ করবে। সেই চাওয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছেন নাগরিক ঐক্যের মান্না। কেননা, তিনি এশবার বলছেন নাগরিক ঐক্য রাজনীতিতে তৃতীয় ঐক্য করবে, আরেকবার বলছেন, নাগরিক ঐক্য কোন রাজনৈতিক দল নয়। এসব বলে তিনি আবার রাজধানী ঢাকার ১৪টি নির্বাচনী আসনে প্রার্থীও ঘোষণা করেছেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্না সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দিয়েছেন। যাকে বলা যায় ‘ছাল নাই কুত্তার বাঘা নাম।’ এই কথার পর অনেকেই ক্ষেপে যেতে পারেন। কিন্তু সত্যটা হলো এই যে, তিনি নিজেও যদি নির্বাচন করেন নাগরিক ঐক্যের মনোনয়নে তাহলে তাঁরই জামানত থাকবে না। এর মানে এই নয় যে, আমি তাকে হেয় করছি। বাস্তবতার রাজনৈতিক কথা বলছি। তার উপর আবার সেদিন তিনি বলেছেন, নাগরিক ঐক্য কোন রাজনৈতিক দল নয়। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেউই সুশাসন নিশ্চিত করতে পারছে না। দুই নেত্রীর কাছে দেশ নিরাপদ নয়। ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শোচনীয় ভাবে পরাজয়ের পরও তাদের শিক্ষা নেয়ার কোন লক্ষণ নেই। আঞ্চলিক ও ব্যক্তিক কারনের উপর দায় চাপিয়ে জাতীয় রাজনীতির সংকটকে আড়াল করার চেষ্টা করছে সরকার। যারা জিতেছেন তারাও বিশেষ যোগ্যতায় জিতেননি। তাদেরও শেখার আছে। কিন্তু তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তাই নাগরিকদের মধ্য থেকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন ঢাকা-৪ (যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুর) আসনে মাহমুদ জামাল কাদেরী, ঢাকা-৫ (ডেমরা, যাত্রাবাড়ী) ইফতেখার আহমেদ (বাবু), ঢাকা-৬ (যাত্রাবাড়ী, সুত্রাপুর) আসনে আবু বকর সিদ্দিক, ঢাকা-৮ (লালবাগ, মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, রমনা) আসনে রেহানা পারভীন, ঢাকা-৯ (খিলগাঁও, সবুজবাগ) আসনে শাহ আলম কবীর, ঢাকা-১০ (বাড্ডা, খিলগাঁও) আসনে মো. শরীফ আহমেদ খান, ঢাকা-১১ (রমনা, তেজগাঁও, বাড্ডা, ভাটার) আসনে শেখ শামসুল আলম বুলবুল, ঢাকা-১২ (ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর) আসনে রেহানা আক্তার, ঢাকা-১৩ (আদাবর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর) আসনে ডা. নজরুল ইসলাম, ঢাকা-১৪ (মিরপুর, শাহ আলী, সাভার) আসনে আব্দুল¬াহ আল আমিন দারা, ঢাকা-১৫ (মিরপুর, কাফরুল) আসনে মো. ইব্রাহীম মেল¬া, ঢাকা-১৬ (মিরপুর, পল¬বী, শাহ আলী) আসনে ক্যাপ্টেন অব. আব্দুল জব্বার, ঢাকা-১৭ (ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, কাফরুল, পল¬বী) আসনে মো. মাসুদুল হক ও ঢাকা ১৮ (বাড্ডা, বিমানবন্দর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরা, খিলক্ষেত) আসনে অধ্যাপক লিয়াকত হোসেন।
যাদের নাম ঘোষণা হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ষাটোর্ধ বয়স্ক এবং বলার মত তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয়ও নেই। কেবলমাত্র লোক দেখানোর জন্য এই মনোনয়ন নিয়ে আর কথা বলবো না। আশা করি জনগন-ই বুঝে নেবেন নাগরিক ঐক্যের মূল লক্ষ্য। যদিও নাগরিক ঐক্যের এক নেতা গর্ব করে বলেছিলেন, নাগরিক ঐক্য একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। এই দল অন্যদেরকে নেতৃত্ব দেবে। কোন দলের বা জোটের নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্য যাবে না। তাঁর উদ্যেশ্যে বলতে চাই, ভাইরে মাত্র ছয়টা মাস দেখেন। তারপর বলবেন নাগরিক ঐক্যের ঐক্যতো দূরের কথা অস্তিত্বই থাকে কি না। এর কারন হিসেবে বলি, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মাহামুদুর রহমান মান্নার মত লোক দেখলেই ২৮ বছরের জীবনে একটা কথা মনে মনে সবসময় উচ্চারণ করেছি। আর সেই কথাটি হলো, ‘যেই বিড়ালের ইঁদুর মারে গোঁফ দেখলেই বোঝা যায়।’ কেননা, তাদের গোঁফ একথা প্রমাণ করে না যে, তারা কিছু করতে পারবেন। বার্ধক্যে উপনীত এই দু’জনের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বলতে চাই, এখন আর বড় বড় বুলি আউড়াবেন না দয়া করে। পারলে ছোট ছোট কাজ করে দেশ ও মানুষের রাজনৈতিক চেতনাকে শানিত করুন। জাগিয়ে দিন স্বাধীনতার চেতনা। দয়া করে আর যুদ্ধাপরাধী-জামায়াত-শিবিরের রঙ্গলীলার শিকার হয়ে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনটাকে আর নষ্ট বা হাস্যকর করবে না। তাছাড়া দেশের মানুষ খুব ভালো করেই জানে ডাকসু থেকে জাসদ, জাসদ থেকে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ থেকে সংস্কারপন্থী হওয়ার সেই ইতিহাস…
[মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)]
Website: www.mominmahadi.com