১৫ জুলাইঃ বাংলার নবজাগরণ যুগের অন্যতম কবি অক্ষয়কুমার দত্তের জন্মবার্ষিকী
১৮২০ সালের ১৫ জুলাই বর্ধমান জেলার চুপী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি পিতাকে হারান। তারপর তিনি দারিদ্র-দশার ভিতর প্রতিপালিত হয়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘকালব্যাপী নানাবিধ অসুখে ভুগেছেন। ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে বছর-দুই পড়ার পরেই পিতৃবিয়োগের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক পড়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর তিনি ছেড়ে দেন অর্থোপার্জনে উদ্যোগী হন। ইনি নিজের চেষ্টায় সংস্কৃত, ফারসী, জার্মান প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষায় গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি অনঙ্গমোহন নামক কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। একটু বড় হয়ে, তিনি ঈশ্বর গুপ্ত সম্পাদিত সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার জন্য ইংরেজী সংবাদপত্র থেকে প্রবন্ধাবলী বঙ্গানুবাদ শুরু করেন। এই ভাবে গদ্য রচনার সূত্রপাত। ১৮৩৯ সালে তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সভ্য হন এবং কিছুদিন এই সভার সহ-সম্পাদক ছিলেন। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী পাঠশালার শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন। ১৮৪১ সালে তত্ত্ববোধিনী সভা থেকে তাঁর রচিত বাংলা ভূগোল প্রকাশিত হয়। ১৮৪২ সালে টাকির প্রসন্নকুমার ঘোষের সহযোগিতায় বিদ্যাদর্শন নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। দু’টি সংখ্যার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয় যায়।
১৮৪৩ সালের ১৬ আগষ্ট তাঁর সম্পাদনায় ব্রাহ্মসমাজ ও তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপাত্র তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে। রচনাসম্ভারে ও পরিচালনার গুণে পত্রিকাটি শ্রেষ্ঠ বাংলা সাময়িকপত্রে পরিণত হয়। পত্রিকাটিতে তত্ত্ববিদ্যা, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, বিজ্ঞান, ভূগোল প্রভৃতি নানা-বিষয়ক প্রবন্ধ থাকত। সচিত্র প্রবন্ধও থাকত। স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার ও হিন্দু-বিধবাদের সমর্থনে এবং বাল্যবিবাহ ও বিবিধ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তিবহুল বলিষ্ঠ লেখাও এতে প্রকাশিত হত। নীলকর সাহেব ও জমিদারদের প্রজাপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি এই পত্রিকায় নির্ভীক ভাবে লেখনী চালনা করেন। ১২ বছর এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর-এ, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অপর ২১ জন বন্ধুর সঙ্গে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষাগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, এই দলই প্রথম দীক্ষিত ব্রাহ্ম। বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদে বিশ্বাসী অক্ষয়কুমার বেদের অভ্রান্ততা স্বীকার করতেন না। এ সম্পর্কে তিনি তিনি যে আন্দোলন শুরু করেন, তার ফলে দেবেন্দ্রনাথ ও ব্রাহ্মসমাজ শাস্ত্রের অভ্রান্ততায় বিশ্বাস বর্জন করেন। ব্রাহ্মসমাজে সংস্কৃত ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষায় ঈশ্বরোপাসনার তিনি অন্যতম প্রবর্তক। পরে তিনি প্রার্থনাদির প্রয়োজন স্বীকার করতেন না এবং শেষ বয়সে অনেকটা অজ্ঞাবাদী হয়ে পড়েন। ১৮৫৫ সালের ১৭ জুলাই বিদ্যাসাগর কলকাতায় নর্ম্যাল স্কুল স্থাপন করলে, অক্ষয়কুমার ১৫০ টাকা বেতনে প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু মাথার প্রদাহজনীত রোগের প্রাবল্যে তিন বছর পরে এই কাজ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’ থেকে তাঁকে মাসিক ২৫ টাকা বৃত্তিদানের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু অল্পকালমধ্যেই পুস্তকাবলীর আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বৃত্তিগ্রহণ বন্ধ করেন। ১৮৮৬ সালের ১৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য, তাঁর পৌত্র ছিলেন প্রখ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।