বহুবিধ ঝক্কিঝামেলা অতিক্রম করে অবশেষে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার চালু হচ্ছে!
পুলক চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে স্বপ্নের ‘মেয়র মোহম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার’ (গুলিস্তান- যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার)। বেসরকারি অর্থায়নে এই প্রথম নির্মিত হচ্ছে নগরীর সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভার। এটি চালু হলে নগরীর যানজট অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। ২০১০ সালের জুনের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এটি নির্মাণ করছে ওরিয়ন গ্রুপ। এ ফ্লাইওভার সম্পর্কে ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম বলেন, ‘আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই এটি উদ্বোধন করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এটি চালু করার কথা থাকলেও আমরা আগেই এটি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি এটি চালু হলে নগরীর যানজট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে।’ ফ্লাইওভারটি সরেজমিনে ঘুরে এবং নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন সেখানে নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে। ডিসিসি দক্ষিণের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উদ্বোধনের পর ওরিয়ন গ্রুপ নিজেই এর ব্যবস্থাপনা, টোল আদায় এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে। চালুর পর থেকে ২৪ বছর টোল আদায় করবে ওরিয়ন গ্রুপ। টোল আদায় করেই তারা নির্মাণ ব্যয় তুলে নেবে। তারপরে এটি হস্তান্তর করা হবে ডিসিসির কাছে। ফ্লাইওভারটির ধারণক্ষমতা ২০০ টন এবং স্থায়ীত্বকাল ১০০ বছর। এটি ৩০টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে। তারা আরও জানান, ফ্লাইওভারটির ডিজাইন করেছে কানাডিয়ান কোম্পানি লি কানাডা। এটি নির্মাণ করছে ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল লিমিটেড। নির্মাণকাজের ব্যবস্থাপনা করছে লাসা নামে ভারতের আরেকটি কোম্পানি। টোল আদায়েও থাকছে প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিকতার ছোঁয়া। এই প্রথমবারের মতো টোল আদায়ে ব্যবহার করা হবে এভিসি (অটোমেটিক ভেহিকেল ক্লাসিভিকেশন) পদ্ধতি। ফ্লাইওভারটি যারা ব্যবহার করবেন, তারা আগেই টোল পরিশোধ করবেন। গাড়িতে লাগানো থাকবে একটি প্রি-পেইড স্টিকার। কোনো গাড়ি ফ্লাইওভার অতিক্রম করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল কেটে নেয়া হবে। পরিশোধিত টাকা শেষ হয়ে গেলে আবারও রিচার্জ করা যাবে। এছাড়াও থাকছে দৃষ্টিনন্দন টোল প্লাজা। সেখানেও টোল পরিশোধ করা যাবে।
ডিসিসি দক্ষিণ সূত্র জানায়, প্রকল্পটি হাতে নেয়ার পর থেকেই তাদের পোহাতে হয়েছে নানা ঝক্কিঝামেলা। নগরীর যানজট কমিয়ে আনতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংক ১৯৯৮ সালে বরাদ্দ দেয় ২৫০ কোটি টাকা। তখন সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এটি নির্মাণ করার কথা ছিলো। পরবর্তী সময়ে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় নগরীতে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। প্রকল্পটির আওতায় নগরীতে কয়েকটি ফ্লাইওভার, রাস্তাঘাটের সংস্কার-সম্প্রসারণ, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু, তিনটি নতুন বাস টার্মিনাল, নগরবাসীর চলাচলের জন্য ফুটপাথ ও ওভারব্রিজ নির্মাণের সুপারিশ করা হয। তাতে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারটিও ছিলো। প্রকল্পের অধীনে সবগুলো সম্পন্ন হলেও ফ্লাইওভারটি করতে পারেনি। তাই ২০০৩ সালে সরকার এটি নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। তখন ৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভারটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়ে ছিলো ৬৭০ কোটি টাকা। সরকার এটি বিল্ট-অন-অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করে। অবশেষে কাজটি পায় ওরিয়ন প্রুপ। ফ্লাইওভারটি নির্মাণের জন্য ডিসিসি ২০০৫ সালের ২১ জুন ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। কিন্তু, কাজ শুরুর আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার চুক্তিটি বাতিল করে দেয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ আবার ওরিয়ন গ্রুপকেই দেয়। তবে শর্ত জুড়ে দেয় নতুন করে নকশা তৈরি এবং এটি আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। তাই সরকারের নির্দেশে ওরিয়ন গ্রুপ আবারও নকশা সংশোধন করে। নতুন নকশায় ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১১ কিলোমিটার। দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়া এবং আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় এর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি এবং অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থার লাইন নিজেদের উদ্যোগে সরানোর কথা ছিলো। কিন্তু, কেউ সেগুলো সরিয়ে নেয়নি। তাই এটি নির্মাণে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে বলে জানায় নির্মাণকারী কোম্পানি। শুধু তাই নয়, এর ফাউন্ডেশনের ডিজাইন পরিবর্তন করে নির্মাণ পদ্ধতিও পরিবর্তন করা হয়েছে।