ঝিনাইদহে ৪ মাসে ২৩ খুন
আহমেদ নাসিম আনসারী,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ মহাজোট সরকারের শেষ বছরে ঝিনাইদহের রাজনৈতিক মাঠ দখলে নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধি ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠনগুলো। তারা বড় দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় মাঠ দখলে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে। এসব সন্ত্রাসীদের হাতে গত ৪মাসে ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতাসহ ২৩জন খুন হয়েছে। এসব খুন রাজনৈতিক কোন্দল, অপহরণ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থীদের আন্তঃকোন্দলের কারণে ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ফলে জেলার মানুষের মধ্যে একটা অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে, পুলিশ প্রতিটি হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত, খুনিদের চিহ্নিত বা আটক করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে একের পর এক অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় চরম উৎকন্ঠায় রয়েছে জেলাবাসী। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে ছানার উদ্দিন (৫৩) নামে এক আওয়ামীলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহত ছানার উদ্দিন সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আর্য্যনারায়ণপুর গ্রামের গোলাম রব্বানী মন্ডলের ছেলে। ছানার উদ্দিন হত্যাকান্ডের পর ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি জালার উদ্দিন জানান, রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার পানামি নামক স্থানে তাকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ আগষ্ট ঝিনাইদহ সদর উপজেলার জোছনা খাতুন (৩২) নামে এক গৃহবধুকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। একই দিন মফিজ উদ্দিন (৩৭) নামে এক চরমপন্থী সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই দিন সকালে পুলিশ রুপদাহ গ্রামের মাঠ থেকে ক্ষত-বিক্ষত গৃহবধু জোছনার ও চান্দেরপোল গ্রামের নুড়কিতলা মাঠ থেকে পুলিশ মফিজ উদ্দিন নামে এই চরমপন্থী সন্ত্রাসীর লাশ উদ্ধার করে। ৫ আগস্ট ঝিনাইদহে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধের লিটন (৩৪) নামে এক সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহত লিটন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের বাক্কা মিয়ার ছেলে। ২ আগস্ট ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামের তার বাবার বাড়ি বারান্দা থেকে বিলকিস (৩৫) নামে এক গৃহবধুর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৭ জুলাই ঝিনাইদহে দুই চরমপন্থী নেতাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের লক্ষীপুর বেলে মাঠে একটি আমবাগানে তাদের লাশ পাওয়া যায়। নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাজীডাঙ্গা গ্রামের সাদেক হোসেনের ছেলে উজ্জল হোসেন ও একই গ্রামের নুর বক্সেও ছেলে আসাদুল ইসলাম।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ত্রাস, চরমপন্থী নেতা আব্দুর রশিদ ওরফে তপন মালিতা ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর এ অঞ্চলের দায়িত্ব পালন করছিলের নিহত উজ্জল ও আসাদুল। চরমপন্থি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দে তারা খুন হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া, ১৪ জুলাই রোববার রাত ৯ টার দিকে সদর উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামে শহিদুল ইসলাম নামে এক চরমপন্থি দলের সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১১ জুলাই, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আওয়ামীলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ফজের উদ্দিন ওরফে সরো (৩৫) নামের এক আওয়ামী কর্মী নিহত হয়। ১২ জুলাই, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু কাপাশহাটিয়া গ্রামের দুবাইপ্রবাসী দুলাল মিয়ার ছেলে ২য় শ্রেণীর ছাত্র আসাদকে সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের পর হত্যা করে। ৯ জুলাই, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারের মিঠুন হোসেন নামের এক যুবলীগ নেতাকে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। তার আগে ১ এপ্রিল বারোবাজারের আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রউফকে দিনের বেলা কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আজীম আনারের রাজনৈতিক দ্বন্দেও কারণে তারা খুন হয় বলে জানা গেছে। ১৬ জুলাই নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চরমপন্থী নেতা রুহুল বিশ্বাসকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত রুহুল বিশ্বাস কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের আশির্বাদপুষ্ট ছিলেন। ১১ জুন সন্ত্রাসীদের দায়ের কোপে খুন হন কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহী গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা খাইরুল ইসলাম। ৮ জুলাই ঝিনাইদহের শৈলকুফায় অজ্ঞাতনামা (৪২) এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারম করে পুলিশ। উপজেলার মীনগ্রামের মাঠের মধ্যে একটি বটগাছ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৫ জুলাই, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর বাজার থেকে পুলিশ আজাদ হোসেন নামে অষ্টম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রের দ্বি-খন্ডিত ও গলিত লাশ উদ্ধার করেছে। ২৮ জুন দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। একইভাবে ৩০ জুন অপহরণের পর খুন হয় ঝিনাইদহে সুলতান আহমেদ (৪৫) নামে এক ঠিকাদার। একই সময় জেলার মহেশপুর পুড়োপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদের নামের একজনকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ওই গ্রামের মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে। ২৬ জুন শৈলকুপা উপজেলার জুগিহুদা গ্রাম থেকে ইলিয়াস হোসেন নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগের রাতে তাকে অপহরণ করা হয়। ১৫ মে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আলমডাঙ্গা গ্রাম থেকে হাসমত আলী (৫৫) নামে এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩ মে, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার দোলুয়াখালি গ্রামের ক্যানেলের ধারে শাহাবুল ইসলাম ওরফে শাবু (৩০) নামের এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
এভাবে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটলেও পুলিশের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়নি দাবি করে বলেন, সরকারের শেষ মুহুর্তে কিছু চরমপন্থী সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে আসার ফলে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, কিছু হত্যাকান্ড ব্যক্তিগত দ্বন্দেও কারণে। তবে, আমরা চেষ্টা করছি কঠোর হাতে দমন করতে।