ঈলাশবাড়ীর এক হত দরিদ্র পরিবারের প্রতিচ্ছবি
মো. ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার ৩নং ইউনিয়নের এক অজো পাড়া গাঁয়ের নাম পশ্চিম গোয়ালপাড়া। ওই গ্রামের এক হত দরিদ্র পরিবারের বাড়িতে কান্না আহাজারি চলছে। স্থানীয় লোকজনের ভীড় চোখে পড়ায় গত শনিবার দুপুর অনুমান ১২ ঘটিকায় সেখানে ছুটে যাই। কান্না-আহাজারির কারণ অনুসন্ধানে জানতে পারি প্রায় ৬০ বছর বয়সী নিজাম উদ্দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তার মুখে পানি সেবনের চেষ্টা করছেন অসহায় স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা। বুকের হাড় হাড্ডি গণনা করা যায়। পেটে কোন দানা পানি নেই। বুকÑপিঠ শুকিয়ে এক হয়ে গেছে। চোখে নিরব কান্নার দৃশ্য। কথা বলার শক্তি নেই। নেই শ্রবণ শক্তি। হাত পা চিকন হয়ে গেছে। এমন অবস্থা কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রতিবেশী লোকজন বিশেষ করে মালেকা বানু জানায়, নিজাম উদ্দিন একজন ভূমিহীন ক্ষেতমজুর। তার পিতার নাম মৃত দারাজ উদ্দিন। পৈত্রিক সম্পত্তি না থাকায় ক্ষেত খামারে দিন মজুরি করে তার সংসার চলতো। অনাহার অর্ধাহারে প্রায় এক বছর যাবৎ সে অপুষ্টির শিকার। ৬ মাস ধরে শয্যাশায়ী। পেটের পীড়া, বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট সহ নানা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। ২ মাস যাবৎ কিছুই খাচ্ছে না। স্থানীয় চিকিৎসার বাইরে উচ্চতর সুচিকিৎসা সেবা তার ভাগ্যে জোটেনি। স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা জানায়, ৪ কণ্যার বিয়ে হলেও এক কণ্যা স্বামী পরিত্যাক্তা। একমাত্র পুত্র শাহ আলম জন্ম থেকে দুই পা পঙ্গুত্ব প্রতিবন্ধী। ২০০৬ সাল থেকে এই প্রতিবন্ধীর সরকারি ভাতা ছাড়া আর কোন সুযোগ পাওয়া যায়নি। ভিজিডি, ভিজিএফ সহ অন্য কোন সাহায্য নাগালের বাইরে রয়েছে। নগদ অর্থ বিনিময়ের অভাবে স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা এই তালিকার বাইরে রেখেছে তাদের অসহায় পরিবারের নাম। এমন পরিস্থিতির শিকার পরিবার প্রধান নিজাম উদ্দিন সহ সবাই অনাহার, অর্ধাহারে জীবন মরণ সমস্যায় থাকলেও কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। এধরণের আকুতি শোনার পর পালাশবাড়ি বন্দরে ফেরত এসে রাত অনুমান ৮টায় জানতে পারি দুই মাস ব্যাপী অভূক্ত নিজাম উদ্দিন মারা গেছে। গত বৃহস্পতিবার তার দাফন স্থানীয় উদ্দ্যোগে সম্পন্ন হয়েছে। এ খবর পেয়ে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি পলাশবাড়ি উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, বিনা চিকিৎসায় নিজাম উদ্দিনের অকাল মৃত্যুর কারন ঘটে। তার পঙ্গুু পুত্র শাহ আলম সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও অনাহার অর্ধাহারে কষ্ট পাচ্ছে। পরিবারের আয় উপার্জনের কেউ নেই। সুত্রের মতে, ক্ষেত মজুর পরিবারের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারিÑবেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহ সমাজের বিত্তবান ব্যাক্তিদের আর্থিক সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এতে অনাহার অর্ধাহারে থাকা এই অসহায় পরিবার উপকৃত হতে পারে।