আজও ভুলতে পারিনি তাকে…
ইফাত শারমিনঃ আজ সারাদিন কেবল তার কথাই ভেবেছি। কী আশ্চর্য। ‘৯০-এর পর যে মানুষটাকে আর দেখিনি, আজকাল প্রায়ই সে এসে হানা দেয় আমার স্মৃতির মণিকোঠায়। কার কথা বলছি? আমার প্রথম প্রেমের কথা।
মিটুল, মানে আমার সেই প্রেমের রাজকুমার। আমরা এক সাথেই পড়তাম ক্লাস সিক্স থেকে। থাকতামও পাশাপাশি বাড়ি। কিন্তু ওর সাথে বরাবরই একটা দুরত্ত্ব ছিলো। কারণ ও ছিল ঠিক আমার বিপরীত। আমি ছিলাম দুর্দান্ত, একটু দস্যি স্বভাবের। আর ও? ও ছিলো ভীষণ শান্ত,ভদ্র আর চুপচাপ। ও ছিলো ক্লাসের ফার্স্ট বয়, আর আমি ছিলাম থার্ড গার্ল…(তাও থার্ড হতাম না, যদি বাবা-মা’র মারগুলো না খেতাম)। প্রেম ট্রেম বুঝিনা তখনো। আমার আর আমার দলের কাজই ছিল খেলা ধুলা করা আর মানুষের বাগানের এটা ওটা তুলে নেয়া। তবে মজার ব্যাপার হল চুরি করতে ধরা খাইনি কখনো।
যাই হোক। ধাক্কাটা যখন খেলাম, তখন ক্লাস নাইন এ। হয়তো ক্লাসে ঢুকছি, চোখ পড়তেই দেখতাম মিটুল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ধুমসে খেলছি, হঠাৎ চোখ পড়তো দূরে মিটুল দাঁড়িয়ে আছে, তাকিয়ে আছে আমার দিকেই। সুন্দর সুন্দর সব ডায়েরি, ক্যালেন্ডার দিয়ে যেত বাসায়, আমার ভাই-এর কাছে। আমি যেন পরীক্ষায় ভালো করি, আমার চেয়ে ওরই চেষ্টা ছিল বেশী। তবে এসব কিছুই আমাকে তেমন নাড়া দিতে পারেনি। একদিন প্রবল নাড়া খেয়েছিলাম কেমিস্ট্রির প্র্যাকটিকাল ক্লাসে। টিচার গেছেন বাইরে, এমন সময় কী একটা করে গিয়ে যেন টিউবে রাখা তরল পদার্থের খানিকটা পড়ে যয় আমার হাতে, দূর ছাই, কে পাত্তা দেয় ওসব? সবার হা- হুতাশ তোয়াক্কা না করে আমি আমার মত কাজ করেই যাচ্ছিলাম। ভয়ে আঁৎকে উঠলাম মিটুলের এক ধমকে,’রাখো এগুলো, এসো আমার সাথে’…ও ততক্ষণে ওর রুমালটা ভিজিয়ে এনে আমার হাত ভিজিয়ে দিচ্ছে, তারপর অন্যরা যখন ক্লাসে চলে গেছে, ও যায়নি আমাকে ছেড়ে। বেসিনে নেয়ে কলের নিচে ধরে রেখেছে আমর হাতটা। সেদিন আমি অপলক দৃষ্টিতে ওকেই দেখছিলাম, দু’জোড়া চোখ স্থির দৃষ্টি মেলে একে অপরকে জানিয়ে দিচ্ছিলো,’ ভালোবাসি তোমাকে’। সেইদিন প্রথম তোলপাড় হয়ে যাচ্ছিল আমার ভেতরটা, সেই-ই আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি।
তারপর ওরা বদলি হয়ে চলে গেলো ঢাকা। আমি থেকে গেলাম গাজীপুর একবুক যন্ত্রণা নিয়ে। আজও ভুলতে পারিনি তাকে। জানিনা কখনো তার দেখা পাবো কি না, তবে তার কথা মনে হলেই বুকের ভেতর চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভব করি!