হায়রে কার্ড, হায়রে পুলিশ…

হায়রে কার্ড, হায়রে পুলিশ…

মো. ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বয়স্ক ভাতার কার্ড ছিনতাইয়ের অভিযোগ দিতে এসে পুলিশের অবহেলা আর তাড়া খেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক নারী তা মায়ের সঙ্গে সারা দিনই বসেছিলেন থানা চত্বরের এক কোণে। বৃদ্ধ মাকে সঙ্গে নিয়ে আসা ওই প্রতিবন্ধীর পরনে ছিল ছেঁড়া কাপড়, হাতে লাঠি আর ছোট্ট টোপলা। বিচার পাওয়ার আশায় ভোর বেলায় থানায় এলেও পুলিশের সময় হয়নি তার অভিযোগ শোনার।দায়িত্ব আর দায়বদ্ধতা থেকে ওই প্রতিবন্ধীকে পাত্তা না দিলেও অবশেষে স্থানীয় সাংবাদিক আর পুলিশ সুপারের নির্দেশে বাধ্য হয়েই অভিযোগকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করে গাইবান্ধা সদর থানা। হালিমা বেওয়া। শারীরিক প্রতিবন্ধী। গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের পূর্ব খোর্দ্দমালীবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। এলাকাবাসীর সহায়তায় গড়ে তোলা পরম শান্তির আশ্রয়স্থল তার ঝুপড়ি ঘরে নিজস্ব সম্পদ বলতে একটি কাঁথা, একটি থালা আর পড়নের দু’একটি ছেঁড়া কাপড়। তিন বছর আগে অজ্ঞাত রোগে স্বামীর মৃত্যুর পর উপায়হীন হালিমার ঠাঁই হয় বাবার বাড়িতে। খেয়ে না খেয়ে শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলেও হাত পাতেন না অন্যের কাছে। আশপাশের বাড়িতে কাজ করেই যোগান নিজের জন্য দুমুঠো ভাত।অবস্থা বিবেচনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হালিমাকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন। এতে অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাবার আর কার্ডের টাকায় তার পরনের কাপড় জুটে। স্বচ্ছলতা ফিরে না এলেও অভাবী হালিমার দিন কাটতে থাকতে সূর্য ওঠা আর ডোবার বিরতিতে, বেশ সুখেই। হঠাৎ করেই আত্মতৃপ্তিতে থাকা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হালিমার সুখে ছাওয়া ঝুপড়ি ঘর ও বয়স্ক ভাতার কার্ডের ওপর নজর পড়ে স্থানীয় শুকরু মিয়ার। সুখের চেরাগ বাতির মতো হালিমার কার্ড তার চাই।তাই অসহায়ত্ব আর সরলতার সুযোগে প্রায় ৫ মাস আগে হালিমাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওই কার্ডটি নিজের কাছে নিয়ে নেন শুকরু মিয়া। হালিমা শুকরু মিয়ার চালাকি বুঝতে পারেননি। হয়তো সরলতায় গড়া তার মন ধুরন্ধদের কর্ম নিয়ে ভাবে না কখনোই। কার্ডের টাকা না পাওয়ায় হালিমার অনটন বাড়তে থাকে। হয়তো অসহায় হালিমা ভেবেছিলেন কার্ডের মেয়াদ শেষ কিংবা আরও ভালো কোনো খবর দিবেন ধুরন্ধর শুকরু। কিন্তু এভাবেই এক দিন দুই দিন করে চার মাস অতিবাহিত হয়।এদিকে ওই কার্ড দিয়ে নিয়মিত টাকা তোলেন শুকরু মিয়া। একথা জানার পর অনেক চেষ্টা করেও কার্ডটি আর ফেরত পাননি অভাবী ওই প্রতিবন্ধী। স্থানীয়দের কাছে বিচার দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বরং মানহানি হওয়ায় শুকরু মিয়া এসে হালিমার শেষ সম্বল ঝুপড়ি ঘরটিও ভেঙে নিয়ে য়ায় কোনো রকম বাধা ছাড়াই। অবশেষে তার ঠাঁই হয় বৃদ্ধ মায়ের স্নেহের আঁচল তলে।হালিমা ওই কার্ড আর ঝুপড়ি ভেঙে ফেলার অভিযোগ দিতে মাকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার ভোর বেলায় হাজির হন থানায়। পুলিশ তাদের অভিযোগের কোনো মূল্য না দিলেও উপায়হীন মা-মেয়ে বসে থাকেন ওখানেই।বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে এলে মানবিকতার পাশ কাটিয়ে যেতে পারেননি তারা। তারা ডিউটি অফিসার ও ক্যাশিয়ারকে বিষয়টি জিডি হিসেবে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এতে পুলিশ কর্মকর্তারা রাজি হন ঠিকই কিন্তু বসেন আর নিচ্ছি আশ্বাসে বসিয়ে রাখেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।দুপুর পর অবেহেলার বিষয়টি আবার নজরে আসে সাংবাদিকদের। মানবিক কারণে তারা বিষয়টি পুলিশ সুপার সাজিদ হোসেনকে অবগত করেন। পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক ডিউটি অফিসারকে জানান। এবার নড়েচড়ে বসেন সদর থানার ডিউটি অফিসারসহ দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।হঠাৎ দায়িত্বশীল পুলিশ এসে মাঠে বসে থাকা হালিমা আর তার মাকে ডেকে নিয়ে যায় থানার ডিউটি অফিসারের কাছে। তারপর চেয়ারে বসিয়ে মুহূর্তেই বয়স্ক ভাতার কার্ড ছিনতাই আর ঝুপড়ি ঘর ভাঙার বিষয়টি সাধারণ অভিযোগ আকারে লিপিবদ্ধ করেন পুলিশ কর্মকর্তা।পুলিশ হালিমাকে জানায়, তার ছিনতাই হওয়া বয়স্ক ভাতার কার্ড উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।কিন্তু নিরুপায় হালিমার দাবি, সাংবাদিকরা তার পাশে না এলে পুলিশ হয়তো তাদের কোনো কথা শুনতো না। হয়তো সাংবাদিকরা নজর সরিয়ে নিলে জিডি জিডিই থাকবে; বয়স্ক ভাতার কার্ড আর ফিরে পাবেন না কোনোদিন।

এসবিডি নিউজ ডেস্ক