গণমাধ্যমের দুর্নীতিময় বর্তমান
মোমিন মেহেদী:
বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় অথবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যৈষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান নয়। দেশের জন্য নিবেদিত তরুণরাই দেশ গড়তে তৈরি হচ্ছে। তারা রাজনীতি সচেতন তৃণমূল সাংগঠনিক দক্ষতাসহ। তাদেরকে কেউ সহায়তা করছে না; কেউ দেখিয়ে দিচ্ছে না রাজনীতির ‘অ’ ‘আ’ ‘ক’ ‘খ’। যেমনটা একজন আইটি বিশেষজ্ঞ জয়কে এগিয়ে আনতে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা অথবা একজন দুর্নীতিবাজ তারেকের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কার্যকর সমর্থন রয়েছে খালেদা জিয়ার।
এই নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক হিসেবে বাংলাদেশকে ক্ষমতার দ্বন্দ থেকে মুক্ত করে সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিবেদিত হয়ে যারা আসছেন; তারা কেউ ছাত্র রাজনীতি, কেউ সংস্কৃতি অথবা কেউ সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করে দক্ষ হয়েছেন। শিখেছেন নাগরিক অধিকার সম্পর্কে। জেনেছেন নিজেদের দেশকে কিভাবে গড়তে হবে, কিভাবে ধরতে হবে বাংলাদেশ নামক এই সোনার স্বদেশের হাল। আর তাই একথা এখন স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুয়ারে কড়া নাড়ছে নতুন প্রজন্ম।
যদিও বলা হয়ে থাকে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবির আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। উভয় দলেই জানান দিচ্ছে নতুন নেতৃত্বের আগমনী বার্তা। তবে তার মধ্যে একজন রাজনীতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অদক্ষ অযোগ্য সজীব ওয়াজেদ জয় ও অন্যজন দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমান। দেখা যাচ্ছে এই মুহূর্তে রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় এই দু’জন উত্তরসূরী। দুর্নীতিতে তারা অবশ্য কেউ কারো চেয়ে কম কি না তা প্রমাণ হবে মহাজোট সরকারের শাসনামল শেষ হওয়ার পর। কেননা, তারেকের দুর্নীতির খবর কিন্তু তখন দেশের মানুষ জেনেছিলো; যখন ওয়ানইলেভেন নামক ঝড়ে উলট-পালট হয়ে গিয়েছিলো ‘হাওয়া ভবনের সরকার আর তাদের স্বপ্ন’। অবশ্য সংবাদ মাধ্যম চাইলে এখনই সেই খবর আমাদেরকে জানাতে পারে, কিন্তু তাও সম্ভব নয়। প্রশ্ন আসতে পারে কেন সম্ভব না? উত্তরটা অনেকের জন্যই কাঁটা গায়ে লবনের ছিটার মত মনে হবে। তবুও বলছি, আমাদের সংবাদ মাধ্যম হলো আরেকটি দুর্নীতিবাজ জগত। এখানে নিগুঢ়ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ঘুরে ফিরে সেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির স্বার্থ রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে থাকেন তারা। এমন কি নতুন কোন দল, কোন সংগঠন, কোন নেতৃত্ব তৈরি হতে চাইলে মুকুলেই ঝরে যেতে হয় এই মিডিয়ার জন্যই। টাকার বান্ডিল পকেটে পরলে এরা সত্যকে মিথ্যে; আবার মিথ্যেকে সত্য বানাতে একটুও পিছপা হয় না। অবশ্য সংখ্যায় তারা শতকরা ৯০ জন। বাকি যে ১০ জন থাকেন তারা রাজনীতি নিয়ে ভয়েও কথা বলেন না। পাছে জীবনটাই না চলে যায় বন্ধু সাগর-রুণি অথবা শামছুর রহমানের মত।
এই বর্তমানে দাঁড়িয়ে একজন সংবাদকর্মী, একজন সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করে রাজনীতিতে আবারো সক্রিয় হয়েছিলাম। ২০০৪, ৫, ৬, ৭ এবং ৮-এর সেই ভয়াল দিনগুলোতে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছিলাম নিরন্তর। সেই সাহসী দিনগুলোকে মনে রেখে ২০১২ তে এসে স্বাধীনতাকে লালন করে গড়ে তুলেছিলাম নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)। ৩০ ডিসেম্বরের পর অনেক কিছু শিখেছি। দেখেছি সংবাদমাধ্যমে কিভাবে বাংলাদেশকে বিক্রি করা হয়; বিক্রি করা হয় আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; কিভাবে বিক্রি করা হয় আমাদের মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে; বিক্রি করা হয় আমাদের গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে, কিভাবে বিক্রি করা হয় আমাদের শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে, কিভাবে বিক্রি করা হয় আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমানকে; কিভাবে বিক্রি করা হয় আমাদের রাজনীতির পল্লীবন্ধু সাবেক রাষ্ট্রনায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে; শুধু বিক্রি করেই সংবাদমাধ্যম ক্ষান্ত থাকে না। তারা মাত্র ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় এশিয়ান টিভির মালিক হারুনুর রশিদের মত লোকদেরকে সৎ-দক্ষ ও যোগ্য লোক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। ৫ শ থেকে ৫ হাজার টাকায় এমন অনেক নেতার বক্তব্যকে শিরোনাম করে; যারা ‘জঙ্গী’ শব্দটাও সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারেন না। ‘জঙ্গী’ কে জঙলী বলা সেই নেতাদেরকে আমাদের গণমাধ্যম বলে ‘সাবেক ছাত্রনেতা, অমুক দলের প্রাণপুরুষ’। পাশাপাশি দুইনেত্রীর উত্তরসূরীদেরকে নিয়েও করা হয় অনেকটা বাড়াবাড়ি। যোগ্যকে অযোগ্য বানিয়ে দিয়ে অযোগ্য-অদক্ষ-অথর্বগুলোকে আমাদের গণমাধ্যম-আমাদের সংবাদ মাধ্যম করে তোলে ‘রাজনীতির আলোচিত ব্যাক্তি’। যেমনটি এখন করছেন জয়কে নিয়ে। চ্যানেল আইতো লাইভ অনুষ্ঠান-ই প্রচার করলো। একে আসলে অতি মোসাহেবী, অতি নোংরামি এবং অতি সংবাদ ব্যাতিত আর কিছুই বলার নেই আমার পক্ষ থেকে। চ্যানেল আই লাইভ করেছে, হয়তো অন্য চ্যানেলগুলোও ইতিমধ্যে অন্য কোন উপায়ে লাইভের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেননা, আমাদের গণমাধ্যমের ধারনা যে যত দালালিতে পারদর্শী, তার চ্যানেল, তার পত্রিকা তত বেশি জনপ্রিয়। হয়তো তারা ভুলেই গেছেন ‘কি’ ‘কোথায়’ ‘কেন’ এবং ‘কখন’-এর সেই সূত্রের কথা। তাদের কাছে এখন নিতান্তই ভিন্ন কিছুর নাম সাংবাদিকতা, ভিন্ন কিছুর নাম সংবাদমাধ্যম। আর তাই এই অতিমাত্রাই তৈলমর্দন। তবে বাংলাদেশের রাজনীতির রাস্তায় এগিয়ে যেতে যেতে এতটুকু চেনেছি যে, তারেক- কোকো অথবা মামুনদেরকে যেভাবে গণমাধ্যম লাথি মেরে শত হাত নিচে ফেলে দিয়েছিলো, সেই গণমাধ্যমই যে জয়কে ‘আউট অফ বাংলাদেশ’ করবে; তাতে কোন রকম সন্দেহ নেই। তার প্রমাণ হলো, আজ জয়কে নিয়ে যে গণমাধ্যম লাইভ শো করছে, সেই গণমাধ্যম-ই কিছুদিন আগে গোলাম মাওলা রনি এমপিকে না হলে টকশো-ই করতো না। প্রতিটি দিন; প্রতিটি চ্যানেল অপেক্ষা করতো রনির। আজ সেই গণমাধ্যম রনির বিরোধীতা করছে। এর চেয়ে আর কি প্রমাণ দেবো যে, জয়-তারেক-রনি-পার্থ-মাহী অথবা বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৈরি জীবন্ত কিংবদন্তি পল্লীবন্ধু এরশাদকে কখনো এই গণমাধ্যম নিজেদের স্বার্থের বাইরে দেশ বা মানুষের জন্য নিবেদন করেনি; আগামীতেও করবে না। কেননা, এখানে চলে কেবল টাকার খেলা আর ক্ষমতার কানামাছি। এইতো ক’দিন আগে ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে করা হলো প্রথানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা। তার কিছুদিন আগে তাকে করা হয়েছিলো বাংলাদেশের একমাত্র সরকারী সংবাদ সংস্থা বাসসের চেয়ারম্যান। কিন্তু কেন করা হলো? এজন্য যে, তিনি নিজে সাগর-রুণি হত্যাকান্ডের বিচার চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘সাগর-রুণি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার না করা পর্যন্ত সাংবাদিকদের আন্দোলন চলবে।’ তার সেই মুখ থামানোর জন্য নিজে থেকেই প্রধানমন্ত্রী এই তথ্য উপদেষ্টার পদে বসিয়েছেন ইকবাল সাহেবকে। আর ইকবাল সাহেবও বসেছেন মহানন্দে। নিজের গোত্রের ভাই আর বোনের রক্তে ভেজা তথ্য উপদেষ্টার আসনে নিজেকে বেশ মানিয়েও নিয়েছেন তিনি। এই হলো আমাদের গণমাধ্যম-সংবাদমাধ্যম-সাংবাদিকতা। যেখানে নিজের স্বার্থ হাসিলের পর নির্মমভাবে খুন হওয়া সাংবাদিক বন্ধুদের হত্যাকান্ডের বিচার চাইতেও ভুলে যান সাংবাদিকগণ। এমনকি আমাদের রাজনৈতিক দালাল হিসেবে ব্যস্ত রয়েছেন প্রায় শতাধিক সাংবাদিক। দালালি সংবাদ মাধ্যম হিসেবে ব্যাপক পরিচিত রয়েছে ২০ টি জাতীয় দৈনিক, ১০ টি টিভি চ্যানেল এবং ৩ টি এফএম রেডিও। কিন্তু কেন? কেবলই নিজেদের কথা ভেবেই যদি সাংবাদিকতার মত পবিত্র স্থানটিতে বিচরন করেন, তাহলে দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা কারা বলবে? কারা বলবে নিশ্বার্থ মানুষগুলোর কথা? যারা নিজেদের চেয়ে দেশের কথা, মানুষের কথা বেশি ভাবেন।
যাইহোক, আমি খুব ভালো করেই জানি; এই লেখাটি প্রকাশ করতে অনেক কষ্ট করতে হবে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক এবং প্রকাশককে। কেননা, সময় এখন দুষ্টচক্রের। আর সেই দুষ্টচক্রের সত্য সমালোচনা করায় আমার লেখার কারনে মামলাও হতে পারে। কিন্তু আমি ভয় পাই না। যার কিছু নেই তার হারানোর ভয়ও নেই। আমার বাবা সাধারন স্কুল মাস্টার ছিলেন। অর্থকড়িও স্কুল মাস্টারের সাথে সামাঞ্জস্য রেখেই আছে। অতএব, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, প্রেসিডেন্ট জিয়ার সন্তান অথবা ক্ষমতাসীন দলের কোন ক্যাডার যদি ইচ্ছে করেন আমাকে শেষ করে দিতে পারেন। স্তব্ধ করে দিতে পারেন আমার কলমকে, আমার রাজনীতিকে। তাতে আমি ভয় পাই না। নিরন্তর রাজনীতি-কলমনীতি তো আমি আমার দেশের জন্য- দেশের মানুষের জন্য করি। সেখানে নিরঞ্জন-ই রক্ষা করবেন আমায়; অথবা বিলুপ্ত ডাইনোসোরের মত বিলুপ্ত করে দেবেন পৃথিবী থেকে। তাতে কিছু যায় আসে না; অন্তত তৈরি হওয়া সাহসকথাগুলোতো বলে যেতে পেরেছি; এই হবে শান্তনা।
সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে তৈরি হওয়ার জন্য নিবেদিত হতে আহবান থাকলো গণমাধ্যমের প্রতি-সংবাদমাধ্যমের প্রতি। উত্থান-পতনের এই পৃথিবীতে কেউ-ই স্থায়ি নয়; অতএব, বাংলাদেশের জন্য-বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিবেদিত হোন সাহসের সাথে-সত্যেও সাথে। সত্যকে সত্য আর মিথ্যেকে মিথ্যে বলুন। সে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী অথবা বিরোধী দলীয় নেত্রী আসলেও-ভয় দেখালেও। কেননা, তাদেরও বয়স শেষের দিকে। পতনের দিকে তারা। পতনের দিকে তাদের সন্তানেরা। শুধু শুধু ব্যার্থ চেষ্টা কেন করবেন মিথ্যেকে প্রতিষ্ঠার জন্য। বরং আসুন নতুন প্রজন্মের রাজনীতি সচেতন স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক কর্মীদেরকে উৎসাহ দিন-ধরিয়ে দিন ভুলগুলো- দেখিয়ে দিন এগিয়ে যাওয়ার পথ…
মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ