ঢাকায় ‘ম্যারেজ মিডিয়া’র প্রতারণার ফাঁদ
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজধানী ঢাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক প্রতারক ‘ম্যারেজ মিডিয়া’৷ তারা প্রবাসী পাত্রীদের লোভ দেখিয়ে কৌশলে পাত্রপক্ষের কাছ থেকে মোট অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়৷বাড্ডার আফতাব নগরের ইস্টার্ন হাউজিং এলাকার একটির বাড়ির নীচ তলায় ফারুক হোসেন নামে একজন ম্যারেজ মিডিয়ার নামে চালিয়ে আসছিলেন জমজমাট প্রতারণার ব্যবসা৷তিনি পত্রিকায় পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন অ্যামেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী পাত্রীদের জন্য পাত্র চেয়ে৷পাত্রের কোনো বিশেষ যোগ্যতা চাওয়া না হলেও পাত্রকে বিয়ের পর ঐসব দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হত৷নামহীন এই ম্যারেজ মিডিয়ার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন অনেকেই৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, প্রতারক চক্র অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশের ভুয়া পাসপোর্ট ও ভিসাসহ ভুয়া পাত্রীদের দেখিয়ে পাত্রপক্ষের কাছ থেকে কয়েক দফায় টাকা হাতিয়ে নেয়৷এমনকি সাজানো বিয়ের পর টাকা পয়সা নিয়ে পাত্রী উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে৷সেরকমই কয়েকটি একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রতারক চক্রের প্রধান ফারুক হোসেন ও কথিত পাত্রীসহ ৮ জনকে আটক করেছে শনিবার রাতে৷ তাদের কাছ থেকে জাল ভিসা এবং পাসপোর্টও উদ্ধার করা হয়েছে৷মাসুদুর রহমান আরো জানান, এর আগেও তারা বেশ কয়েকটি প্রতারক চক্রের সদস্যদের আটক করেছেন৷ তারাও একইভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করেন৷ তিনি জানান তারা গত এক বছরে অন্তত ২০টি ভুয়া ম্যারেজ মিডিয়ার সদস্যদের আটক করেছেন৷ কিন্তু পরে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে একইভাবে প্রতারণা করেন৷ কারণ প্রতারণার বিরুদ্ধে আইন শক্ত নয়৷ আর সিটি কর্পোরেশনের একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই এই ব্যবসা করা যায়৷
ঢাকায় শতাধিক ম্যারেজ মিডিয়া থাকলেও ভালো বা মানসম্পন্ন ম্যারেজ মিডিয়ার সংখ্যা ৩০টির বেশি নয় বলে জানান, ‘লগন’ ম্যারেজ মিডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়হান রুমি৷ তিনি দাবি করেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান এই সব প্রতারণার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ এবং প্রতারকদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্যও দিচ্ছে৷ তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন একটু ভালভাবে খেয়াল করলেই প্রতারণা বোঝা যায়৷ যারা প্রতারণা করে, তারা বিজ্ঞাপনে ম্যারেজ মিডিয়ার নাম না দিয়ে শুধু মোবাইল ফোন নাম্বার দেয়৷প্রবাসী উচ্চশিক্ষিত পাত্রীর জন্য কম শিক্ষিত, গ্রামের ছেলে এমনকি মাদ্রাসা পাশ পাত্র হলেও চলবে বলে জানায়৷ কৌশল হিসেবে পাত্রীকে ডিভোর্সি বা অন্য কোনো নেতবিাচকভাবে উপস্থাপন করে৷জানায় বিয়ের পর পাত্রকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে৷ আর এতেই অনেকে প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হন৷রায়হান রুমি বলেন, বাংলাদেশের বেকার সমস্যা এবং দারিদ্র্যকে পুঁজি করে তারা৷ তারা বেকারদের বিয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রলোভন দেখায়৷ তাঁর মতে, একটু সচেতন হলেই এ রকম প্রলোভনের ফাঁদ এড়ান যায়৷ তিনি বলেন, ভাল ম্যারেজ মিডিয়া যোগ্য পাত্রীর জন্য যোগ্য পাত্রই চায়৷ এরপর দুই পরিবারের মধ্যে সাক্ষাত্ ঘটানোই তাদের কাজ৷ তাদের মধ্যে মিল হলে বিয়ে হয়, নয়তো হয়না৷আর বিয়ে হলে মিডিয়া একটি নির্দিষ্ট ফি নেয়৷ তাঁর মতে, ব্যস্ততার এই সময়ে ম্যারেজ মিডিয়া, অনলাইন ম্যারেজ মিডিয়া অপরিহার্য৷ তবে প্রতারণা বন্ধ করতে প্রয়োজন নীতিমালা এবং নজরদারি৷