মানবতাবিরোধী অপরাধঃ সাকা চৌধুরী’র ফাঁসির আদেশ
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেন। ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি প্রমাণিত, ৮টি প্রমাণিত হয়নি এবং সাক্ষী পাওয়া যায়নি ৬টির। এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু হয়। ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়ে শোনান বিচারপতি আনোয়ারুল হক। রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়ে শোনান বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। এদিকে এই রায়কে ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
২০১০ সালের ২৬ জুন বিএনপি-জামায়াতসহ জোটের সমমনাদের ডাকা হরতালের আগের রাতে মগবাজারে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা হয়। এই মামলায় দলের অন্যান্য নেতাকর্মীর সঙ্গে এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এই মামলায় ১৬ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ ডিসেম্বর তাকে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখায় পুলিশ। ৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাকে হাজির করা হয়। ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রবর্তী প্রতিবেদন দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করা হয়। ওই বছরের ৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণে সহযোগিতা, অগ্নিসংযোগ, ভিন্নধর্মীয় লোকজনকে দেশান্তরী হতে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত রিপোর্টে ৫৫ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ও ১ হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্র ও ১৮টি সিডি দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ১৮ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ আমলে নেন। প্রসিকিউশন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত ৭২টি ঘটনায় ২৩টি অভিযোগ দাখিল করে। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তি উপস্থাপন করা হয় ১৭টি অভিযোগের ভিত্তিতে। ৬টি অভিযোগ সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির ও অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেনি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩ শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা, ৫ নারীকে ধর্ষণে সহযোগিতা, ৬টির বেশি গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩ (২) (এ), ৩ (২) (সি), ৩ (২) (জি) ও ৩ (২) (এইচ) ধারায় এ অভিযোগ গঠন করে প্রসিকিউশন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সহ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা ছিল ৪১। এর মধ্যে জব্দ তালিকার সাক্ষী ৪ জন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলামকে দেয়া ৪ সাক্ষীর জবানবন্দি তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ২০১২ সালের ১৪ মে থেকে ২০১৩ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ ও তাদের জেরা করে উভয়পক্ষ। চলতি বছরের ১৭ জুন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত সাফাই সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ২৮ জুলাই এই মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ ৫ কার্যদিবস ও অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ৭ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী এডভোকেট আহসানুল হক হেনা। যুক্তি খণ্ডন শেষ হলে ১৪ আগস্ট উভয়পক্ষের সমাপনী বক্তব্য শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর এই আলোচিত মামলার রায় অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখেন। এই মামলার বিচারকাজ চলে প্রায় ২ বছর ৮ মাস।