আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল আকর্ষনে বাংলাদেশকে একটি জাতীয় সংস্থা নির্বাচন করতে হবে
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে অধিকারভিত্তিক নাগরিক সংগঠনের নেটওয়ার্ক ভবিষ্যতে বৈশ্বিক সবুজ জলবায়ু তহবিল (Green Climate Fund) থেকে অর্থায়ন পেতে হলে বাংলাদেশকে স্বচ্ছ ও ব্যাপক অংশগ্রহনমূলক প্রক্রিয়ায় একটি জাতীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি (National Designated Authority-NDA) নির্বাচিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা আরও বলেন যে, জাতীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা (NDA) হতে হবে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত, যাতে করে এই প্রতিনিধি সকল আন্ত:মন্ত্রণালয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর সমন্বয় সাধন করার ক্ষমতা রাখেন। বক্তারা আরও বলেন যে, কোন অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে বা তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘউঅ নির্বাচিত সরকারের উচিৎ হবে না এবং এটা করলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কাংখিত স্বার্থ অর্জিত না হওয়ার আশংকা রয়েছে।
“সবুজ জলবায়ু তহবিল, দেশীয় মালিকানা ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নঃ বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?” এই শিরোনামে ৭ অক্টোবর (সোমবার) এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বিপনেট-সিসিবিডি, কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড ইকোলোজিকাল একশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন), ক্লাইমেট চেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিসিডিএফ), ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল) এবং ইক্যুইটি এন্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্র“প বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি)। সেমিনার সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটিবিডি’র প্রধান জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জনাব কাজী খলিকুজ্জামান- সভাপতি, পিকেএসএফ এবং প্রধান সমন্বয়কারী, আন্তর্জাতিক জলবায়ু নেগোসিয়েশন কমিটি । এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন জনাব মামুনুর রশীদ-টঘউচ, মিসেস তাহমিনা রহমান-আর্টিকেল-১৯, জনাব স্নেহাল ভি সুনেজি-Country Director-OXFAM, জয়ন্ত অচার্য-সুরক্ষা ফাউন্ডেশেণ, মাহাবুবুল আলম-WBB Trust, আমিনুর রসুল বাবুল-উন্নয়ন ধারা এবং জনাব শ্যামল দত্ত-ভোরের কাগজ সহ আরও অনেকে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডি’র আমিনুল হক এবং বলেন যে, সবুজ জলবায়ু তহবিলের উপর বিশ্বব্যাংকের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং এটা হলে জলবায়ু-তাড়িত স্বল্পোন্নাত দেশগুলোর স্বার্থ ব্যাহত হতে পারে। তিনি আরও বলেন যে, দেশে বর্তমান জলবায়ু অর্থায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের ঘাটতী রয়েছে এবং জলবায়ু পরিকল্পনার বিষয়গুলো সকল আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তেমন কোন সাংবিধানিক কতৃত্ব নাই। তিনি আরও বলেন যে, বৈশ্বিক সবুজ জলবায়ু তহবিল (GCF) থেকে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য জাতীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা (NDA) নির্বাচিতকরন কোন আমলাতান্ত্রিক বিষয় নয় বরং এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জলবায়ু-তাড়িত জনগোষ্ঠী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গনমাধ্যমের প্রতিনিধি সহ সকল স্তরের প্রতিনিধিদের যুক্তকরন এবং অংশগ্রহন নিশ্চিত করা উচিৎ যাতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় একটি কার্যকর জাতীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। তিনি এ প্রসঙ্গে ফিলিপাইনের জাতীয় জলবায়ু কমিশন এবং ইন্দোনেশিয়ার জলবায়ু কাউন্সিলের উদাহারন দেন যেখানে সাংবিধানিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত সমন্বয় কমিটি এ জলবায়ু বিষয়ে কাজ করছে। আর্টিকেল -১৯ এর তাহমিনা রহমান বলেন যে, জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে এখন বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এ বিষয়ে স্বচ্ছতা ও পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, যেটা নিশ্চিত করা জরুরী। ইউএনডিপি’র মামুনুর রশীদ বলেন সরকার প্রতি বৎসর ৫-৭% অর্থ জলবায়ু বিষয়ক খাতে ব্যয় করলেও এটা একটি বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (Annual development Plan-ADP) মাধ্যমে সমন্বয় হওয়া দরকার, যাতে কাংখিত ফল পাওয়া যায়। অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, জলবায়ু পরিকল্পনা হওয়া উচিৎ রাজনৈতিক দলগুলোর একটি সমন্বিত নীতি আলোচনার মাধ্যমে।
প্রধান অতিথি জনাব কাজী খলিকুজ্জামান বলেন যে, বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থায়নের বিষয়ে আমাদের বেশী প্রত্যাশা করা উচিৎ নয়, কারন এ তহবিলের হিসাবে এখোনও কোন অর্থ আসেনি এবং ভবিষ্যতে আসবে কিনা সন্দেহ। তবুও আমার আমাদের বিষয় ও দাবীগুলো অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক আলোচনায় তুলে ধরছি। তবে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ রয়েছে যে অর্থ আমারা আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে পারি। তিনি আরও বলেন যে, জলবায়ু পরিকল্পনায় জাতীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থার প্রয়োজন রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়ন পেতে হলে এটা গঠন করতে হবে।