কেশবপুরে সরকারি খাল দখল হওয়ায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি
মিজানুর রহমান,কেশবপুর প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ যশোরের কেশবপুরে কাদার খাল-বিল, মেহেরপুর খালসহ বিভিন্ন খাল বিল দখল করে মাছ চাষ করা ও মাছ আটকে রাখেতে খালে পাটা দেয়ায় পানি নিষ্কাশনে চরম বিঘ্ন ঘটায় প্রায় ৩ হাজার পরিবার তিন মাস যাবৎ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে শ্রমজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ঘের ব্যবসায়ীরা সরকারি খাল, বিল দখল করায় শ্রমজীবি মানুষ মাছ ধরাও থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতা, কাজ কর্ম না থাকায় মানুষ চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। খাল অবৈধ দখল মুক্ত করার জন্য শতাধিক গ্রামবাসী যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগও করেছেন।
জানা গেছে, কেশবপুর ভায়া পাটকেলঘাটা সড়কের রেজাকাটি নামকস্থানে কাদার খালের মর্গা ঘর ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিত ভাবে বদ্ধ করে ও ঘন পাটা দিয়ে মাছ চাষ করায় সড়কের পূর্বপাশে ২ থেকে ৩ ফুট পানি আটকা পড়েছে। ফলে কাদার খাল সংলগ্ন সাগরদাঁড়ী, শেখপুরা, আউলগাতী, নেহালপুর, রেজাকাটিসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার গত ৩ মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে চরম দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে। স্থানীয় লোকজন জানান, বগা গ্রামের শাহিন কাদার খালে পাটা দিয়ে মাছ চাষ করেছেন। তবে শাহিন অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, ময়না নামে এক ব্যক্তি কাদার খালে পাটা দিয়েছেন। ধনার্ঢ্য ঘের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে কাদার খাল ও কাদার বিরে মাছ চাষ করেছে। ঘের ব্যবসায়ীদের কথার সাথে স্থানীয় প্রশাসন তাল দেয়ায় ভুক্তোভোগিরা প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছে না। গত ১৯ আগস্ট রাতের আধারে কতিপয় দূর্বত্ব শ্রীপুর-শেখপাড়া সরকারি রাস্তা কেটে দেয়ার পর থেকে সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের সাগরদাঁড়ী, শেখপুরা ও বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের আউলগাতী, নেহালপুর, রেজাকাটিসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষের বসবাড়ি জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। এরপর প্রায় প্রতিদিন কমবেশী বৃষ্টি হচ্ছে। ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় কারণে অসংখ্যক কাঁচা ঘর-বাড়ি ধ্বসে পড়ছে। মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে ভুগছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে হুমকীর মুখে। সাগরদাঁড়ী গ্রামের ইয়াছিন সানা বলেন, জলাবদ্ধতায় অসংখ্যক কাঁচা ঘর-বাড়ি ধ্বসে পড়ছে। তিনি আরো জানান, রেজাকাটি নামকস্থানের কাদার খালের মর্গা বদ্ধ থাকায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। আওয়ালগাতি, রেজাকাটি, বগা, মহাদেবপুর ও শ্রীপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ ২৭ অক্টোবর জলাবদ্ধ এলাকার জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফি মওকুফ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসাররের নিকট আবেদন করেছেন। আবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন, ত্রিমোহিনী, সাগরদাঁড়ি ও বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্রায় ২ হাজার ৫শত পরিবারের মানুষ বিগত ৩ মাস ধরে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে অর্থ সংকটে ভুগছে। যার কারণে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষর্থীদের অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছে। নির্বাহী অফিসার মতামত প্রদানের জন্য ফি মওকুফের আবেদনটি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করেছেন। এদিকে কেশবপুরের বাগডাঙ্গা বিলের খাল থেকে পানিউন্নয়ন বোর্ডের ৪ ব্যান্ড ¯¬ুইস গেটের মুখ পর্যন্ত ও গেট পার হয়ে বিলখুকশিয়ার গোরশয়াল খাল পর্যন্ত অন্ততঃ ২শতাধিক স্থানে বাঁশের তৈরী পাটা দিয়ে মাছ শিকার করায় ২৭ বিল সংলগ্ন বাগডাঙ্গা,মনোহরনগর, পাথরঘাটা মনোহরনগর, কাঁটাখালি, কালীচরণপুর গ্রামের ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মনোহরনগর বিল কমিটির সভাপতি দিন মোহাম্মদ জানান, ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের এক মাত্র খালটিতে মাছ শিকারীরা জাল ও পাটা দিয়ে মাছ শিকার করায় পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলার লক্ষ্মীনাথকাটি বিলের খালে ঘের ব্যবসায়িরা লোহার পাটা দিয়ে পলিথিন জড়িয়ে রাখায় পানি নিষ্কশনে বিঘœ ঘটায় বিনাকুড় বিল, বেজিরকুড় বিলের উচু স্থানের লাগানো প্রায় ৩শ’ বিঘা জমির আমন ধান তলিয়ে যায়। উপজেলার ফতেপুর ও পদ্ম বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেহেরপুর খাল কতিপয় ব্যক্তি দখল করে মাছ চাষ করেছে। এ খাল দিয়ে শোলাকুড় বিলের পানি নিষ্কাশিত হয়। কামরুল নামে জনৈক ঘের ব্যবসায়ি রাঁশবাড়িয়া-চিংড়া সড়কের ধর্মপুর ব্রিজের নিচে খালে পাটা দিয়ে পলিথিন জড়িয়ে রাখায় পানি নিষ্কশনে বিঘœ সৃষ্টি হয়। ফলে শোলাকুড় ও ফতেপুর বিলের চারপাশের উচু স্থানের লাগানো আমন ধানসহ বাঁশবাড়িয়া, গোপসেনা, ধর্মপুর, কাস্তা গ্রামের অনেকের বাড়িঘর পানিতে তালিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার শিকার আঃ হান্নান জানান, কাদার খাল-বিল অবৈধ দখল মুক্ত করার জন্য তিনিসহ শতাধিক গ্রামবাসী যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম জানান, মতামত প্রদানের জন্য ফি মওকুফের আবেদনটি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, জলাবদ্ধ এলাকায় ২১ মেঃ টন চাল চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে এবং পাটা উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।