এবার ফোন করবেন খালেদা ।। সংলাপ ও নামের তালিকা দেবেন প্রধানমন্ত্রীকে
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হরতাল শেষে যে কোনো স্থানে সংলাপে বসতে রাজি বিএনপি। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে প্রস্তুতিও শুরু করেছে দলটি। এ বিষয় নিয়ে এবার বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করতে পারেন এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে। সংলাপের ব্যাপারের দুই নেতার ফোনালাপকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে দেশের সকল মানুষ। এছাড়া শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার সমাধান হবে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, যে কোনো সময়ে এ সংলাপ করতে চায় তারা। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডেলিগেটদের নামের তালিকা পাঠানো হবে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ‘নির্দলীয়’ হওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগতভাবে সম্মত হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায় বিএনপি। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করতে পারেন।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বিবেচনা ও বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে মওদুদ তার গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন। সংলাপের উদ্যোগের কারণেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
বিশিষ্টজনদের মতে, দেশের মানুষের কল্যাণে যেহেতু দল দুটি কাজ করে, সেহেতু সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান তারাই করতে পারবেন। দুই নেত্রী খুব শিগগিরই চমক দেখাবেন বলেও আশা করছেন তারা। তবে সংলাপের জন্য উভয়পক্ষ নিয়মমাফিক আগ্রহ প্রকাশ করলেও সত্যিই সত্যিই সংলাপে বসা এবং একটা ফলপ্রসূ আলোচনা হওয়ার পূর্বশর্ত যে, ‘উভয়পক্ষকে ছাড় দিতে হবে’ তাতে কারো কোনো দ্বিমত নেই। দুই দল নিজস্ব স্বার্থেই হোক আর অহংবোধের কারণেই হোক যদি নিজস্ব অবস্থানে অনড় থাকেন তাহলে এ সঙ্কট ও সংঘাত যে দীর্ঘায়িতই হবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষ যার পর নাই শঙ্কিত। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, আমি মনে করি, শেষ মুহূর্তে চমক আসবেই।’ প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে আলোচনা করতে পারে। তবে আমি মনে করি, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে প্রকাশ্যে আলোচনা করে কোনো ফলাফল পাওয়া যাবে না। কারণ প্রকাশ্যে আলোচনা হলে এতে রাজনীতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। আর গোপনে হলে তাদের মধ্যে বোঝাপোড়ায় জোর পড়বে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এএসএম শাহজাহান বলেন, মাঝামাঝি কোনো পথ নেই। সমঝোতাই গণতন্ত্রের পথ। দেশ ও মানুষের স্বার্থে রাজনীতিবিদরা সমঝোতার পথই বেছে নেবেন বলে মনে করেন তিনি। সমাজের জন্য হীতকর যেটা সেটার জন্য দু’পক্ষকে মিলতে হবে। তাদের মধ্যে প্রতিযোগীতা, প্রতিদ্বন্দীতা হতে পারে কিন্তু সেটা যেন জেদাজেদী, একগুয়েমি না হয়। সেটা চলতে পারে না। আর তা যদি করে ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করবে না। এদিকে চলমান সঙ্কট নিরসনে বিদেশিদেরও চাপ রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় রোববার দেশের চলমান সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বন্ধ করে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে গঠনমূলক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া চীন, যুক্তরাজ্যসহ জাতিসংঘও চাচ্ছে দুই দলের মধ্যে একটা ফলপ্রসূ সংলাপ। গত শনিবার দুই নেত্রীর সংলাপের পর রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনকে ইতিবাচকভাবে দেখেছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি বলেন, চলমান সঙ্কট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ ইতিবাচক। সংলাপের মাধ্যমে সংঘাত এড়াতে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনই শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। এদিকে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুনও সংলাপের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার ফোনকে স্বাগত জানান। মার্কিন দূতাবাসের পাঠানো এক বিবৃতিতে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যে টেলিফোন আলাপসহ সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অনুপ্রাণিত হয়েছে। এই ইতিবাচক অগ্রগতির ফলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর একটি গঠনমূলক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে, যাতে করে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সংলাপ চাই। হরতাল শেষে যে কোন সময়ে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি। এদিকে ১৪ দলের সমন্বয়কারি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, এখন সংলাপে বসতে হলে খালেদা জিয়াকে উদ্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে বিএনপির চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।